বর্তমানে দেখা যাচ্ছে সড়ক ও ফুটপাতেও গ্যারেজ। যানবাহন যত বাড়ছে, সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মেরামতের কারখানাও। তবে ব্যস্ততম বাজার, দোকানপাট ও আবাসিকেও গ্যারেজ। এভাবে নগরীতে যত্রতত্র অবৈধভাবে গড়ে উঠছে ছোট–বড় অসংখ্য গ্যারেজ। এসবের কারণে যানজট, শব্দ দূষণ, পরিবেশ দূষণসহ প্রতিনিয়ত নানা বিড়ম্বনা পোহাতে হলেও যথাযথ নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি নেই সংশ্লিষ্ট কোন সংস্থার। বিআরটিএর সর্বশেষ রিপোর্টে নগরীতে দুই লাখ ২৭ হাজার ১৮৪টি যানবাহন নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন আন্তঃজেলা থেকে যানবাহনও নগরীর সড়ক দিয়ে চলাচল করে থাকে। নগরীতে অনিবন্ধিত ও অবৈধভাবেও যানবাহনের একটি অংশ নিয়মিত চলাচল করছে। এসব বিপুল সংখ্যক যানবাহনের চাহিদা থেকে বিভিন্ন সময় গড়ে উঠছে যানবাহন মেরামতের এসব গ্যারেজ। বিশেষ করে নগরীর ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতেই এসব গ্যারেজের উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে। সাধারণত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ করে এসব গ্যারেজ করার কথা। তবে অনেক গ্যারেজেরই কোন অনুমোদন নেই। সরেজমিন বহদ্দারহাট থেকে শুরু করে নতুন ব্রিজ পর্যন্ত অন্তত দেড়শোটির মতো ওয়ার্কসপ, অটোমোবাইলস ও গ্যারেজ দেখা গেছে। যেগুলোর বেশির ভাগেই বাস, ট্রাক, মিনিবাসসহ মাঝারি আকারের যানবাহনের মেরামত কাজ করা হয়ে থাকে। হাতে গোনা কয়েকটি আছে সিএনজি অটোরিকশা ও অটোটেম্পুর মেরামত কারখানা। প্রতিদিনই এসব গ্যারেজে মেরামত কাজকে কেন্দ্র করে শতশত ট্র্রাক, বাস, মিনিবাস, সিএনজি, অটোটেম্পুসহ অন্যান্য যানবাহনের জটলা দেখা যায়। অধিকাংশ গ্যারেজেই দেখা গেছে সড়কের ওপর গাড়ি রেখে মেরামতের কাজ করতে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, গ্যারেজসহ বিভিন্ন স্থাপনার কারণে রাস্তা সংকূচিত হওয়ায় উভয়পাশের যানবাহন ও সাধারণ পথচারীদের চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। চার লেন সড়ক প্রকল্পের কাজ করতে গিয়েও এসব স্থাপনার কারণে নানা সমস্যার সন্মুখীন হতে হচ্ছে। বিশেষ করে সংকূচিত রাস্তাগুলোতে বড় আকারের যানবাহন চলাচল করলে সে রাস্তা দিয়ে পথচারীদের চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে। এতে দুর্ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত।
সংশ্লিষ্ট গ্যারেজ মালিক ও কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের অংশটি থেকে নতুন ব্রিজ পর্যন্ত অংশে ছোট বড় অন্তত দেড়শোটি গ্যারেজ আছে। সাধারণত বড় গ্যারেজগুলোতে ১০ থেকে ১৫ জন কর্মচারী নিয়োজিত থাকে। বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে এসব কর্মচারী কাজ করে থাকে। ওয়েল্ডিং মেশিনের মাধ্যমে ঝালাই কাজ, চাকা মেরামত, ইঞ্জিন, রংসহ বিভিন্ন কাজ করেন এরা। এছাড়া একই এলাকায় রাস্তার পাশেই স্তূপ করে ইট, বালুর ব্যবসা করছে অনেকে।
নগরীর চকবাজার এলাকায় তেলিপট্টি, কাপাসগোলা, অলি খাঁ মসজিদ সংলগ্ন, কলেজ রোডের কয়েকশ গজের মধ্যেই চোখে পড়ে অন্তত ২০টির মতো মোটরসাইকেল গ্যারেজ। এছাড়া একই এলাকায় রয়েছে কয়েকটি রিকশা ও সাইকেল মেরামতের গ্যারেজ। এতে করে পথচারী থেকে শুরু করে যানবাহন চলাচলেও বিঘ্ন ঘটছে। সড়ক বাদেও বিভিন্ন আবাসিক এলাকা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনেও গড়ে উঠছে গ্যারেজ।
জামালখান গুডস হিলের পাশেই অবস্থিত একটি স্কুল। রাস্তার একপাশে থাকা স্কুলটিতে প্রবেশের প্রধান ফটকের দেয়ালে স্কুলটির নাম লিপিবদ্ধ আছে। তবে বিদ্যালয়টিতে প্রবেশ করলেই সামনে চোখে পড়বে একটি বড় আকারের মোটর সাইকেল গ্যারেজ। বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট একজন জানিয়েছেন, স্কুল চলাকালীন শব্দ দূষণসহ বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করছে গ্যারেজটি। কিছুদিন আগে এক ছাত্রী গ্যারেজটির লোকজনের বিষয়ে স্কুলে অভিযোগ করেছেন। এছাড়া এই মোড়ে কয়েকদিন আগে এক অভিভাবক ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছিলেন। যারা ছিনতাই করেছিল তারা মোটরসাইকেলে করে স্কুলের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল।
তিনি জানিয়েছেন, সম্প্রতি পুলিশের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা স্কুলটি পরিদর্শন এসে গ্যারেজটি দেখতে পেয়ে তাৎ ণিক সেটি উঠিয়ে দেওয়ার জন্য কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেন। কিন্তু এখনো গ্যারেজটি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই গ্যারেজটি বাদেও গুডস হিল থেকে দেওয়ান বাজার এলাকায় পৌঁছার সড়কে আরও দুটি গ্যারেজ আছে। যেগুলো অন্যান্য গ্যারেজগুলোর মতো রাস্তার পাশেই মোটর সাইকেল রেখে মেরামতের কাজ চালাচ্ছে।
নগরীর দেওয়ানহাট থেকে শুরু করে আগ্রাবাদ মোড়ের ব্যস্ততম রাস্তাটিতেও দোকানের সামনেই পার্কিং করে বিভিন্ন প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, নোহাসহ আরও বিভিন্ন যানবাহন সজ্জিতকরণ ও মেরামতের কাজ করতে দেখা যায়। এই দূরত্বে অন্তত দেড় শতাধিক স্থাপনা আছে যেগুলো যানবাহন যন্ত্রাংশ সংযোজন ও মেরামত কাজ করে থাকে। প্রতিদিনই এসব দোকান ঘিরে শতশত গাড়ি ভিড় জমিয়ে থাকছে। ফলে ব্যস্ততম সড়কটির উভয় পাশই সবসময় সংকুচিত অবস্থায় থাকে। ফুটপাতেও চলে মেরামত কাজ। এতে সাধারণ পথচারীদের ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয় রাস্তা দিয়েই। নগরীর কদমতলী, মোগলটুলী, বাদুরতলা, মুরাদপুরসহ অধিকাংশ এলাকার চিত্রও একই রকম।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, যথাযথ নজরদারির অভাবে এসব গ্যারেজে পেট্রোল, অকটেন, মোবিলসহ বিভিন্ন জ্বালানিও বিক্রয় হয় । অপরাধও সংঘটিত হচ্ছে বিভিন্ন গ্যারেজ ঘিরে। কোন কোন গ্যারেজ থেকে বিভিন্ন ব্রান্ডের চোরাই গাড়ি, মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য যানবাহন উদ্ধার করেছে পুলিশ। এতকিছুর পরও এসব গ্যারেজের বিষয়ে দায়িত্বশীল কোন প্রতিষ্ঠানেরই যথাযথ নজরদারি নেই।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সাবির্ক) হাবিবুর রহমান আজাদীকে বলেন, নাগরিক বিড়ম্বনা ও শান্তি বিনষ্টকারী যেকোন কাজের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন সবসময় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের এ কর্মকর্তা। একই মন্তব্য করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) কুসুম দেওয়ান। তিনি আজাদীকে বলেন, অভিযোগ পেলেই তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। এর আগে অনেকেই অভিযোগ করেছিলেন রাস্তার পাশেই যানবাহন রেখে গাড়ি মেরামতের বিষয়টি নিয়ে। তখন অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নতুন করে কোন অভিযোগ পেলে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী গ্যারেজগুলোর ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে দেওয়ানহাট থেকে আগ্রাবাদ পর্যন্ত যানবাহনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশের দোকানের সামনের সড়কে গাড়ি পার্কিং করে রাখার ব্যাপারে তিনি বলেন, সেখানে মূলত মেরামতের কাজ হয় না। যানবাহনগুলো সজ্জিতকরণের কাজ করা হয়ে থাকে। তবে এ ব্যাপারে আমি ওই এলাকার ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সাথে বসার জন্য সংশ্লিষ্ট এসিকে অবহিত করেছি।
