বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ‘ইনু জাতীয় বেয়াদব’-এমন মন্তব্য করার পরদিন জাসদ সভাপতিকে দেশের সবচেয়ে বড় জঙ্গি বলেছেন । তিনি বলেন, তার ভয় হয়, ১৯৭৫ সালে যেভাবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিল জাসদ, তেমনি এখনও শেখ হাসিনার ক্ষতির কারণ হবে তারা।

শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনায় এ সব কথা বলেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পর্ষদের এই নেতা।

দীর্ঘ বক্তব্যে গয়েশ্বর সাম্প্রতিক জঙ্গি তৎপরতা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন। এ সময় জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হানাসুল হক ইনুরও কঠোর সমালোচনা করেন তিনি।

গয়েশ্বর বলেন, ‘আজকাল দেখবেন, কয়েকদিন যাবত চাপাবাজিটা একটু কম। চাপাও নাই, চুপাও নাই। খুব আস্তে আস্তে কথা কয়। এর আগে প্রতিদিন তো ভয় লাগতো, প্রতিযোগিতামূলকভাবে কে কত বেশি বলতে পারে। এখন বলে না। মাঝখান দিয়ে মাঝে মাঝে একটা মর্দা লাফায়। সে হচ্ছে ইনু। সে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, সশস্ত্র বিপ্লবে বিশ্বাস করতো। তার সশস্ত্র বিপ্লবে ঢাকায় ১৫ আগস্টের ঘটনা ঘটার পরও শেখ হাসিনা এখনও সতর্ক না।’

বর্তমান মন্ত্রিসভায় যারা আছেন, তাদের মধ্যে খালেদা জিয়ার কট্টর সমালোচক ইনু। যদিও এরশাদ সরকারের আমলে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করেছিলেন তিনি। পরে দলটির সঙ্গে তাদের সম্পর্কের অবনতি হয়।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও এক সময় জাসদের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ইনুর সঙ্গেই রাজনীতি করেছেন তিনি। বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে জাসদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও কর্মসূচিতে তিনিও অংশ নিয়েছিলেন। গয়েশ্বর নিজ মুখে সেই বর্ণনাও দিয়েছেন সাম্প্রতিক এক আলোচনায়।

সময়ের পালাবদলে ইনু প্রায়ই যখন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কঠোর সমালোচনা করেন, তখন গয়েশ্বর আক্রমণ করেন ইনুকে।

শুক্রবার এক আলোচনায় ইনুকে জাতীয় বেয়াদব বলেন গয়েশ্বর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনার মন্ত্রিসভার সদস্য তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক এক সময়ের সশস্ত্র জঙ্গি, সে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করত না। সে গণবাহিনী করেছিল, তার ডেপুটি চিফ ছিল কর্নেল তাহের। আজকে সে বলে, খালেদা জিয়া নাকি জঙ্গিদের সঙ্গে পাকিস্তানের দালাল। সে একটা জাতীয় বেয়াদব।’

গয়েশ্বরের এই ইনু আক্রমণ তথ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক এক মন্তব্যকে কেন্দ্র করে। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাম্প্রতিক জঙ্গি তৎপরতায় খালেদা জিয়ার ইন্ধনের অভিযোগ আনেন ইনু। সেদিন তিনি বলেন, ‘জঙ্গিদের যেমন নির্মূল ও ধ্বংস করতে হবে, তেমনি জঙ্গি প্রতিনিধি খালেদা জিয়াকেও রাজনীতি থেকে সম্পূর্ণ বিদায় জানাতে হবে। তখনই কেবল বাংলাদেশে জঙ্গি উৎপাত বন্ধ হবে। দেশ, জাতি, গণতন্ত্র ও শান্তির প্রয়োজনে এর কোনো বিকল্প নেই।’

ইনুর সমালোচনা করে গয়েশ্বর আবার তাকে বলেছেন জঙ্গি। তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে সেরা জঙ্গিবাদ কে? তার নাম হল হাসানুল হক ইনু। কারণ, সে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, সশস্ত্র সংগ্রামে মাধ্যমে গণবাহিনীর মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করতে চেয়েছে। বারবার তারা সুযোগ নিয়েছে, এখনও যে নেয়ার চেষ্টা হচ্ছে না সেটা বলা যাবে না।’

বঙ্গবন্ধুর আমলে ছাত্রলীগ থেকে বের হয়ে সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে গঠন হয়েছিল জাসদ। তাদের সামরিক শাখা গণবাহিনীর উপ-প্রধান ছিলেন ইনু। তবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর একই বছরের নভেম্বরে সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করে দলটি। কিন্তু নানা ঘটনাপ্রবাহের পর নেতৃত্ব চলে যায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের হাতে। তিনিই আবার জাসদের সভাপতি কর্নেল তাহেরকে বন্দী করেন এবং পরে সামরিক আদালতে বিচারের মাধ্যমে তাকে ফাঁসিতে ঝোলান। আর এরপর জাসদের একটি বড় অংশ বিএনপির সঙ্গে ভিড়ে যায়।

গয়েশ্বর বলেন, ‘ওই দিনের মানুষগুলো এখনও তো বেঁচে আছে, সবাই তো মরে যায় নাই। সে জন্যই বলছি, আজকেও আমার মাঝেমাঝে ভয় হয়, যে হারে ও (ইনু) চিৎকার পারে, নানা কথা বলে, আমার মনে হয় শেখ মুজিবকে তো তারা কবরে নিয়েছে, তার মেয়ে শেখ হাসিনাকেও কবরে না নিলেও কফিন পর্যন্ত নেবে সে। তারপর তার (ইনু) চিৎকার ক্ষান্ত হবে। এর আগে হবে না।’

বিএনপি নেতা বলেন, ‘যে দেশে গণতন্ত্র নাই, সে দেশে কেউ নিরাপদ নয়। কারণ, যাকে মারে সে যেমন নিরাপদ নয়, তেমনি যে মারে সেও যে মরবে না, তা বলা যায় না। সে জন্যই বলছি, আজকে যত সমস্যা হয়েছে, তার একটাই সমাধান…জনগণকে ভোটের অধিকার স্বীকার করে নিতে হবে।’

(ঢাকাটাইমস/০১এপ্রিল/জিএম/ডব্লিউবি)

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031