পুরো বিশ্বই লকডাউন করোনাভাইরাসের কারণে বলতে । বাধ্য হয়েই এখন ঘরে থাকতে হচ্ছে সকলকে। কিন্তু বন্দি অবস্থা কতক্ষণই বা ভালো লাগে! কতক্ষণই বা মনকে বেঁধে রাখা যায়। মন চায় বাইরে যেতে, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে, কোনো জায়গা থেকে ঘুরে আসতে। কিন্তু এসব বিষয় যে এখন চিন্তায় আনাও মানা। মন চাইলেও বা কী না চাইলেও বা কী, এখন ঘরে থাকতেই হবে। আর এই পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে হবে।
ভারতীয় ইংরেজি দৈনিক দ্য হিন্দুতে প্রকাশিত একটি লেখায় ঘরবন্দি এই অবস্থার সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়ার কিছু উপায় তুলে ধরেছেন দেশটির উপরাষ্ট্রপতি মুপ্পাভারাপু ভেঙ্কাইয়া নাইডু। ঢাকাটাইমসের পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো।
মনকে পুনরায় সেট করুন
পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই লকডাউনের সময়সীমা বেড়েই চলেছে। ফলে, মানুষের ঘরে থাকার সময়ও বাড়ছে। নতুন এই পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হলে আমাদের মনকে পুনরায় সেট করতে হবে। কারণ, করোনাভাইরাস যেভাবে ছড়াচ্ছে তাতে খুব শীঘ্রই এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। করোনা মোকাবেলার চ্যালেঞ্জের সাথে মানুষের আরেকটি চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। সেটি হলো ঘরে থাকা। মানুষ সামাজিক জীব। তারা সমাজের মানুষের সঙ্গে মিশে চলতেই ভালোবাসে। কিন্তু, আপনার মনকে বোঝাতে হবে যে, করোনা যুদ্ধে নিজে বেঁচে থাকতে হলে ও আশপাশের মানুষকে রক্ষা করতে হলে নিজেকে ঘরে রাখতে হবে।
নতুন বাস্তবতার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিন
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লকডাউন ঘোষণার পরই বলেছিলেন, যাদের ঘরে থাকা কঠিন হবে তাদের মধ্যে আমি একজন (ভেঙ্কাইয়া নাইডু)। কারণ, তিনি আমাকে কাছ থেকে দেখেছেন, আমার রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে তিনি ভালো করেই জানেন। আমার অস্থিরতা সম্পর্কে তার ধারণা আছে। আমার অনেক বন্ধুও আমার সম্পর্কে একই ধারণা করেছেন। এই কারণেই লকডাউন শুরু হওয়ার পর আমার বাসার ল্যান্ডলাইন ও মোবাইল ফোন দিনরাত বাজতে থাকে। সবাই ফোন করে জানতে চায়, আমি কেমন করে বন্দি জীবন কাটাচ্ছি? এই কারণেই আমি আমার কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করিছ।
শুরুতে আমিও কিছুটা দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু ধীরে ধীরে তা স্বাভাবিক হয়েছে। এই অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিতে আমার খুব বেশি কষ্ট হয়নি। মনকে বুঝিয়েছি।
আমার বন্ধু, রাজ্যসভার সাবেক সদস্য সাবেক সি, নারায়ন রেড্ডি তার পুরস্কারপ্রাপ্ত বই ‘বিশ্বম্ভরা’তে লিখেছেন, সবকিছুই আছে মনের মধ্যে। তিনি বলেছেন, ‘সেইন্টহুড কিংবা পশুর প্রবৃত্তি, স্বাধীনতা অথবা বন্দিদশা, সহানুভূতি অথবা নিষ্ঠুরতা, সবকিছুরই বীজ বপন করা থাকে মনে। এটাই দর্শনের মূল বিষয়। আর এটা জীবনের চিরন্তন সত্য’।
নতুন বাস্তবতাকে আমাদের স্বীকৃতি দিতে হবে। এর উপর ভিত্তি করেই আমাদের যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা এখন জীবনের করোনা পূর্ববর্তী ও করোনা পরবর্তী সময়ে আছি।
করোনা পূর্ববর্তী
করোনা আসার আগে আমার প্রতিদিনই দিন শুরু হতো ব্যাডমিন্টন খেলার মাধ্যমে। সকালে চা পান করতাম। ইন্টারনেটে ইংরেজি, হিন্দি ও তেলেগু কিছু পত্রিকা পড়তাম। তারপর নাস্তা সেরে নিতাম। এরপর দৈনন্দিন কাজে নেমে পড়তাম। সন্ধ্যায় বাগানে হাঁটতাম, পরিবারের লোকদের সঙ্গে সময় কাটাতাম। যারা দূরে আছে ফোন করে তাদের খোঁজ নিতাম।
করোনা পরবর্তী
করোনা পরবর্তী জীবনও প্রায় একইরকম। কিন্তু কিছুটা পার্থক্য আছে। আগে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেতে হতো, এখন যাই না। এখন সকালবেলা ব্যাডমিন্টন খেলার বদলে যোগব্যায়াম করি। অফিসের কাজ আগের মতোই চলছে। এখন অনেক কর্মকর্তাই বাসায় বসে অফিস করছেন।
আগে অতিরিক্ত সময় যেভাবে ব্যয় করতাম এখন আর সেভাবে করছি না। ১৯৭০ সালে বিয়ের পর এবারই প্রথম স্ত্রীকে বেশি সময় দিতে পারছি। এতে আমাদের মধ্যকার বন্ধন আরো শক্ত হয়েছে। আমরা দুজনই এই বন্ধনের সুগন্ধ উপভোগ করছি। এই সময়ে আমি আমার গ্রামের, স্কুল জীবনের সব বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করার সুযোগ পাচ্ছি। আমাদের সকলের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করছি। নিয়মিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট দেখছি। দেশের করোনা পরিস্থিতির উপর সারাক্ষণ নজর রাখছি।
অনুবাদক: সদর উদ্দীন লিমন
