গতকাল সকালেও একপশলা বৃষ্টি এসে ভয় দেখিয়ে যায় টাইগার ভক্তদের। দু’দিন ধরে চট্টগ্রামে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। না, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কালো মেঘ সরিয়ে সূর্যের হাসি। সময় মতোই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট মাঠে গড়ালো। কিন্তু জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের হাসি মিলিয়ে যেতে সময় লাগলো না। অস্ট্রেলিয়ার স্পিনার নাথান লায়ন ঢাকা টেস্টের হারের প্রতিশোধ নিতে যেন মরিয়া। ক্রিকেট ইতিহাসে তৃতীয়বারের মতো পাঁচ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান নামার রেকর্ড গড়লো বাংলাদেশ। অন্যদিকে একাই চারজনকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে নতুন রেকর্ড গড়লেন লায়ন। অজিদের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে জয়ের প্রত্যাশার পারদ ছিল আকাশ ছোঁয়া। চট্টগ্রামে সেই চাপেই সব এলোমেলো। ১১৭ রানে পাঁচ উইকেট হারানোর পর একটা সময় মনে হচ্ছিল ২০০৬ এর ১৯৭ও ছুতে পারবে না মুশফিকুর রহীম বাহিনী। তবে অধিনায়ক নিজে দায়িত্ব নিলেন, সঙ্গ দিলেন সাব্বির রহমান। ৬ষ্ঠ উইকেটে তাদের ১০৫ রানের জুটিতে শেষ পর্যন্ত প্রথম দিন শেষে স্বস্তির সংখ্যা স্কোর বোর্ডে ২৫৩ রান। যদিও তা ৬ উইকেট খুইয়ে। ৬২ রানে মুশফিক অপরাজিত থাকলেও ৬৬ রান করে সাব্বির শেষ বিকেলে সাজঘরে ফিরেছেন আক্ষেপ নিয়ে। ১৯ রানে অপরাজিত থাকা নাসির হোসেন আজ অধিনায়কের সঙ্গে নামবেন দলের ইনিংসটাকে অজিদের জন্য আরো কঠিন করার লড়াইয়ে। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনটি লায়নের বিরুদ্ধেই লড়তে হয়েছে টাইগারদের। দিন শেষে তার বড় প্রমাণ লায়নের ঝুলিতে ৭৭ রান খরচায় ৫ উইকেট।
ঢাকা টেস্ট জয়ের পর বাংলাদেশের লক্ষ্য সিরিজ নিজেদের করে নেয়া। অন্যদিকে শুধু সিরিজই নয় নিজেদের মান বাঁচাতে অস্ট্রেলিয়াও ছিল ভীষণ মরিয়া। তাই বাংলাদেশের স্পিন স্বর্গে মাঠে নামালেন তিন স্পিনার। টসে জিতে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশকেই নয়, ক্রিকেট বোদ্ধাদেরও ভড়কে দিয়ে দিনের দ্বিতীয় ওভারেই আনলেন স্পিনার। ৭৯ বছরের ইতিহাস ভাঙার যে সিদ্ধান্ত তা বাস্তবে রূপ দিলেন অফস্পিন জাদুকর নাথান লায়ন। টাইগারদের ব্যাটিং ভরসা ঢাকা টেস্টে পর পর দুই ইনিংসে ফিফটি হাঁকানো তামিমকে নিজের মাঠে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলে হতাশাই উপহার দিলেন তিনি।
ঢাকার তুলনাতে চট্টগ্রামের উইকেট কিছুটা ভিন্ন। স্পিনাররা এখানে টার্ন না পেলেও বল নিচু হয়ে আসছিল। লায়নের গুড লেন্থের বলটি স্কিড করে ৯ রান করা তামিমের প্যাডে। সঙ্গে সঙ্গে এলবিডাব্লিউর জোরালো আবেদনে আঙুল তুলেন আম্পায়ার। এরপর সৌম্য ইমরুল কায়েসকে নিয়ে চেষ্টা করলেন। কিন্তু ৪ রানে হার মানলেন ইমরুল। তিনে আরো একবার নিজেকে প্রমাণ করার আগেই লায়নের দ্বিতীয় শিকার। প্রথম পানি পানের বিরতিতে যাওয়ার আগে নেই দুই উইকেট ২১ রানে।
এদিন সৌম্যকে খুব সাবলিল না মনে হলেও লড়াই করতে দেখা গেল। অবশ্য পার্টনার হিসেবে পেয়েছিলেন টেস্টে দেশের সেরা ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক সৌরভকে। অস্ট্রেলিয়ার স্পিন আক্রমণ সামলাতেই মুমিনুলকে এক ম্যাচ পরেই একাদশে জায়গা দেয়া। তৃতীয় উইকেটে দু’জনের ব্যাটে স্বস্তির ৪৯ রানের জুটি। কিন্তু মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে ৮১ বলে ৩৩ রান করা সৌম্যকে নিজের তৃতীয় শিকার বানালেন লায়ন। তখন দলের সংগ্রহ মাত্র ৭০ রান।
মধ্যাহ্ন বিরতির পর সাকিব আল হাসান যোগ দিলেন মুমিনুলের সঙ্গে। কিন্তু ৩১ রান করা মুমিনুল লায়নের বিশ্বরেকর্ড গড়া চতুর্থ এলবিডাব্লিউর শিকার হলেন। এ জুটি ভাঙলো ১৫ রানে। এবার দলের হাল ধরেন অধিনায়ককে সঙ্গে নিয়ে সাকিব। দেশের দুই সেরা ক্রিকেটার ক্রিজে থাকায় কিছুটা হাসি ফিরতে শুরু করলো বাংলাদেশের ভক্তদের। কিন্তু ৩২ রানের জুটি হতে ফের সেই হাসি মিলিয়ে গেল। বাংলাদেশের টপ অর্ডারে সেরা পাঁচ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ছিল এবার প্রথম ও বিশ্বে তৃতীয়বারের মতো, যার শেষ জনের নাম সাকিব। তাকে অবশ্য সাজঘরের পথ দেখালেন আরেক স্পিনার অ্যাগার।
মধ্যাহ্ন বিরতির পর দিনের দ্বিতীয় সেশনে পাঁচ উইকেট হারিয়ে স্কোর ১৫৫ রান। সেই সময় সাব্বির তার উপর আস্থার প্রতিদান রাখলেন। গেল বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার টেস্ট অভিষেক এই মাঠেই। সেবারও ফিফটি হাঁকিয়ে দলের ভরসা হয়েছিলেন। ৬৪ রান করে অপরাজিত ছিলেন তিনি। এরপর তার টেস্ট ক্যারিয়ারে আসে আরো দুটি ফিফটি। এবার তার সেই পয়া ভেন্যুতে টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটি তুলে নিলেন। তার এই ইনিংসে দল ২শ’ পার করে। শেষ পর্যন্ত তাকে সঙ্গে নিয়ে ১৮তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন মুশফিকও। কিন্তু দলের ২২২ রানের সময় সাব্বির তার ক্যারিয়ার সেরা ৬৬ রান করে আউট হন দুর্ভাগ্যজনক এক স্টাম্পিংয়ের শিকার হয়ে। আউট হওয়ার আগে তিনি খেলেন ১৩৩ বল ও হাঁকান ৬টি চার ও একটি ছয়ের মার। এরপর নাসির এসে বাকি দিনটা দলকে আর বিপদে পড়তে দেননি।
ঢাকা টেস্টে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ২৬০ রান। অবশ্য প্রথম দিনই অলআউট হয়েছিলেন সবাই। কিন্তু গতকাল প্রথম দিন শেষ হলেও হাতে ৪ উইকেট রেখে দিন শেষ করেছে টাইগাররা। আজ দ্বিতীয় অধিনায়ক মুশফিক ও তার লেজের জোর দেখাতে পারলে স্কোর ৩শ’ ছাড়ানো সম্ভব। না হয় বিপদের আশংকা বাড়বে।
| M | T | W | T | F | S | S |
|---|---|---|---|---|---|---|
| 1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 |
| 8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 |
| 15 | 16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 |
| 22 | 23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 |
| 29 | 30 | 31 | ||||
