চট্টগ্রাম : বিএনপির কেন্দ্রীয় ও চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঘোষণা হলো । অথচ খুব একটা খুশি নন মহানগরের নেতারা, বরং হতাশাই বেশি। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ‘ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হয়নি।’ ফলে দলকে সংগঠিত করার বদলে সামনের দিনগুলোতে চট্টগ্রামে দলীয় কোন্দল আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বিশেষ করে আব্দুল্লাহ আল নোমানকে ডিঙিয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে স্থায়ী কমিটির সদস্য করা, আবু সুফিয়ানকে রেখে আবুল হাশেম বক্করকে মহানগরের সাধারণ সম্পাদক করা নিয়ে চট্টগ্রাম বিএনপিতে ক্ষোভ প্রকাশ্য। কেন্দ্রকে কিছু কিছু পদের ব্যাপারে নতুন করে ভাববার পরামর্শ দিচ্ছেন নেতাদের কেউ কেউ।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির নেতৃত্ব কয়েকটি ধারায় বিভক্ত। বিশেষ করে গত দুই সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর থেকে অন্ত:কোন্দল, নবীন-প্রবীণের দ্বন্দ্ব ও সংস্কারপন্থীসহ নানা ইস্যুতে বিভক্ত চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি। এর মাঝে চলছে নেতৃত্বের লড়াই।

চট্টগ্রামে আব্দুল্লাহ আল নোমান, মীর নাছির উদ্দিন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও শাহাদাত হোসেনের আলাদা আলাদা উপদলের খবর সবারই জানা।

নতুন কমিটি নিয়ে একেক গ্রুপের নেতাকর্মীদের এমন মনোভাবের কারণে সামনের দিনে কোন্দল আরো প্রকাশ্য হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুস সাত্তার বলেন, ‘একজন বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসেবে নোমান ভাইয়ের যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি। অথচ দলের প্রতিটা দুঃসময়ে তিনি ছিলেন ত্রাণকর্তা। আমি মনে করি, এখনও সময় আছে; নোমান ভাইয়ের বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত। অন্যতায় মাঠের রাজনীতির চেয়ে ঘরের রাজনীতিই বিএনপির জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে।’

আব্দুল্লাহ আল নোমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘নেতাকর্মীরা মনে করেছিল আমি স্ট্যান্ডিং কমিটিতে যাচ্ছি। কিন্তু এটা না হওয়াতে তারা আশাহত হয়েছে, কষ্ট পাচ্ছে। শুধু আমার আনুসারীরা নয়, সারা দেশের অনেক বিএনপি নেতাকর্মী ফোন করে কান্নাকাটি করেছে।’

চট্টগ্রাম মহানগর কমিটিতে শাহাদাত হোসেনের পদোন্নতি হলেও ত্যাগী নেতা হিসেবে পরিচিত আবু সুফিয়ান রয়ে গেছেন আগের জায়গায়। অথচ সুফিয়ান সভাপতি না হলেও সাধারণ সম্পাদক হবেন এমন জোরালো গুঞ্জন ছিল।

তার ঘনিষ্ঠরা বলছেন, জাতীয় কাউন্সিলের সময় বিএনপি চেয়ারপারসন তাকে (সুফিয়ান) সভাপতি বলে সম্বোধন করেন। এবং সভাপতি হিসেবে কাজ করার বিষয়ে তার মনোভাবও জানতে চেয়েছেন।

তবে চট্টগ্রামের নেতাকর্মীরা সবচেয়ে বিস্মিত হয়েছেন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আবুল হাশেম বক্করের নাম দেখে।

রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বক্কর সহিংসতার জন্ম দিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। তার এ পদ প্রাপ্তিতে চট্টগ্রাম বিএনপিতে অসন্তোষ বিরাজ করছে।

বাকলিয়া থানা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খাইরুল আলম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সুফিয়ান ভাই শুক্রবারও বলেছেন তাকেই মহানগর কমিটির সভাপতি হিসেবে দল ঘোষণা দিতে যাচ্ছে। কিন্তু শনিবার দেখলাম সুফিয়ান ভাই আগের জায়গায় রয়ে গেলেন।’ তিনি বলেন,‘সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি করেও কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান পাওয়া যায়। আর ক্লিন ইমেজের সুফিয়ান ভাইকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে আমরা যেতে পারবো না।’

ক্ষোভ প্রকাশ্যেই

কেন্দ্রীয় কমিটি ও মহানগর কমিটি ঘোষণার পর থেকে চট্টগ্রামে এ নিয়ে নানা বিশ্লেষণ চলছে। পদ পাওয়া নেতাদের অনুসারীরা একদিকে যেমন খুশির জোরায়ে ভাসছেন অন্যদিকে অবমূল্যায়ন কার দাবি করে অন্য নেতাদের অনুসারীরা ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে।

বিশেষ করে নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে স্থায়ী কমিটির সদস্য মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই। কারণ নগর কমিটির সভাপতি হিসেবে সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান ও মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনও ছিলেন।

আর চকবাজার থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘নতুন কমিটি দেখে আমরা আশাহত হয়েছি। কল্পনাও করিনি এ রকম একটা কমিটি দেওয়া হবে।কথা ছিল- সুফিয়ান ভাই সভাপতি ও শাহাদাত ভাই সাধারণ সম্পাদক হবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুফিয়ান ভাইকে মূল্যায়ন করা হলো না। কীভাবে এসব হল, কেন হল বুঝতে পারছি না ।’

কমিটির বিষয় জানতে চাইলে ডা. শাহাদাত হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘নগর কমিটিতে আমি সন্তুষ্ট। তবে নোমান ভাইয়ের বিষয়ে বিবেচনা করা উচিত।’

কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পেলেন যে নেতারা

বিএনপির সদ্য ঘোষিত জাতীয় নির্বাহী কমিটি,স্থায়ী কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদ মিলিয়ে চট্টগ্রাম জেলা থেকে স্থান পেয়েছেন মোট ২০ জন নেতা। ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এতদিন তিনি চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার দায়িত্বে ছিলেন।

৩৫ জন ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে আগের দুইজন এম মোর্শেদ খান, আব্দুল্লাহ্ আল নোমান ও এম মোরশেদ খান ছাড়াও চট্টগ্রাম থেকে নতুন যোগ হয়েছেন দুই জন। তারা হলেন গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও  মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন।

৭৩ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদের মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে জায়গা পেয়েছেন চার জন। তারা হলেন সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম, গোলাম আকবর খন্দকার, বেগম রুজি কবির ও এস এম ফজলুল হক।

চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন এ জি এস মাহবুবুর রহমান শামীম।

এছাড়া ২৯৩ সদস্যের নির্বাহী সদস্যের মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে নতুন করে জায়গা পেয়েছেন দুই জন। তারা হলেন, যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মম কাদের চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান মীর নাসির উদ্দিনের ছেলে মীর হেলাল উদ্দিন চৌধুরী। এই দুই নেতার ছেলেদের কেন্দ্রীয় কমিটতে অর্ন্তভুক্তি অবাক করেছে অনেককেই।

নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে বহাল আছেন গাজী শাহজাহান জুয়েল, সরওয়ার জামান নিজাম, মোস্তফা কামাল পাশা, কামাল উদ্দিন চৌধুরী, ফটিকছড়ির ফয়সল মাহমুদ ফয়েজি, সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়া ও সুশীল বড়ুয়া।

অন্যদিকে ছয় বছর পর শনিবার ঘোষণা করা হয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির কমিটি। এতে শাহাদাত হোসেনকে সভাপতি, আবু সুফিয়ানকে সহ-সভাপতি ও আবুল হাশেম বক্করকে সাধারণ সম্পাদক করে আংশিক কমিটিও ঘোষণা করা হয়।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031