চাকরিপ্রার্থীরা আবেদন জানিয়েছেন করোনা মহামারীর কারণে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা পেরিয়ে যাওয়া প্রার্থীরা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বয়সের ছাড় দিতে। ২০২০ সালের ২৬ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যাদের বয়স ৩০ বছর পূর্ণ হয়েছে তারা যেন আগামী বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকাশিতব্য সব নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের সুযোগ পান, সে সুযোগ চাওয়া হয়েছে আবেদনে। গতকাল মঙ্গলবার জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী এবং ২৯ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজমকে আবেদনপত্র দেন তারা। আবেদনের সঙ্গে গণস্বাক্ষরের একটি কপিও সংযুক্ত করেন তারা।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম আমাদের সময়কে বলেন, আমি দরখাস্তটি এখনো পাইনি। তবে শুনেছি চাকরিপ্রার্থীরা এসেছিলেন। তারা প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে দেখা করেছেন। আমি দরখাস্তটি পেলে একটা সিদ্ধান্ত জানাব।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে কম্পিউটার সায়েন্স বিষয়ে স্নাতকোত্তর করা মাহফুজ অমি বলেন, করোনার ভয়াল থাবায় গত দুই বছরে আমাদের যাদের বয়স ২৮-৩০ বছর হয়ে গেছে তাদের পক্ষ থেকে শুধু চাকরিতে আবেদন করার সুযোগ চাই। বয়স পেরিয়ে যাওয়া লাখ লাখ চাকরিপ্রার্থী চোখে অন্ধকার দেখছেন। মানবিক দিক বিবেচনা করে আমাদের আবেদনে সাড়া দিতে সরকারের প্রতি আকুল আবেদন জানাচ্ছি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিষয়ে স্নাতকোত্তর করা দাউদ নবী বলেন, দীর্ঘদিন (করোনাকালীন) ধরেই বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য সরকারি চাকরিতে খুব বেশি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়নি। এ সময়ের মধ্যে চাকরিপ্রার্থীদের বড় একটি অংশের বয়সসীমার একটা গুরুত্বপূর্ণ সময় বিজ্ঞপ্তি আর নিয়োগ পরীক্ষা ছাড়াই পার হয়ে গেছে। এ কারণে ২০২২ সালের ১ জানুয়ারিতে যাদের বয়স ৩০ হয়ে গেছে তারা যেন চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকাশিতব্য সব ধরনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে

আবেদন করতে পারেন তা বিবেচনার জন্য আমরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। বয়সের এ ছাড় চেয়ে আমরা ২৯ মে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং আজ মঙ্গলবার (গতকাল) জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীকে আবেদন দিয়েছি।

আবেদনপত্রে চাকরিপ্রার্থীরা লিখেছেন, করোনার কারণে দুই বছর কোনো সার্কুলার ও নিয়োগ পরীক্ষা হয়নি। লকডাউন উঠে গেলে প্রতি সপ্তাহে ২০-৩০টি পরীক্ষা একই সময়ে নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ২০২১ সালের ১৯ আগস্ট যখন ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বয়স ছাড় দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় তখন মাত্র ৪ মাস অবশিষ্ট ছিল অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে যাদের বয়স শেষ হয় তারা ব্যাকডেটের সুবিধার আওতার বাইরে থেকে যায়। করোনার শুরুতে যাদের বয়স ২৮ বা ২৯ ছিল এখন তাদের ৩০ এর বেশি। ফলে চাকরিপ্রার্থীরা বাস্তবিক অর্থে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ৩০ বছরের পরিবর্তে ২৮ বছর পাচ্ছে। অর্থাৎ নিজের যোগ্যতা প্রমাণের ক্ষেত্রে ২ বছর কম পাচ্ছে যা সাংবিধানিক অধিকার পরিপন্থী। যাদের বয়স ২০২১ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয়ে গেছে তারা সংকটে পড়েছে। কারণ তাদের জীবন থেকে করোনা গুরুত্বপূর্ণ ২টি বছর কেড়ে নিলেও ব্যাকডেটের কোনো সুফল মেলেনি। একটা বিসিএসে ক্যাডার, নন-ক্যাডার মিলিয়ে প্রায় ৮-১০ হাজার প্রার্থীর চাকরি হয়। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর যাদের বয়স ৩০ পেরিয়ে গেছে তারা নন-ক্যাডারের সার্কুলার থেকেও বঞ্চিত হয়েছে। এমতাবস্থায় বিসিএস এবং ব্যাংকসহ বয়স ছাড়ের সময়সীমা ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হলে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বয়স শেষ হয়ে যাওয়া প্রার্থীরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে। সুতরাং ২০২০ সালের ২৬ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে যাদের বয়স ৩০ বছর পূর্ণ হয়েছে তাদের কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বয়স (যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা-২০১৪ (উপবিধি-৩) অনুযায়ী পরবর্তী অন্তত ৩টি বিসিএসে আবেদনের সুযোগ দেওয়া হোক। এ ছাড়া ব্যাংকসহ সব চাকরিতে আবেদনের ক্ষেত্রে বয়স ছাড়ের সময়সীমা আগামী বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করার আবেদন জানিয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা।

করোনার প্রথম ঢেউয়ের কারণে ২০২০ সালের ২৬ মার্চ থেকে টানা ৬৬ দিন লকডাউনে থাকে দেশ। এ সময় সব নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ ছিল। গত বছরের মার্চের দিকে করোনার প্রকোপ কিছুটা কমলে কিছু কিছু নিয়োগ পরীক্ষার নোটিশ দেয় সংশ্লিষ্টরা। ১৯ মার্চ ৪১তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়। মার্চের শেষের দিকে আবারও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দেখা দেওয়ায় এপ্রিলের ৫ তারিখ থেকে ফের লকডাউন শুরু হয়। অক্টোবরের মাঝামাঝিতে ধীর গতিতে আবারও পরীক্ষা গ্রহণ শুরু হয়। দীর্ঘ সময় সব প্রকার চাকরির পরীক্ষাই স্থগিত ছিল। আর পূর্বনির্ধারিত পরীক্ষাগুলো না হওয়ায় নতুন বিজ্ঞপ্তি আর প্রকাশিত হয়নি।

করোনার শুরুতে যাদের বয়স ছিল ২৮, তাদের বয়স এখন ৩০ বছরের বেশি। ২০২০ সালের মার্চের পর থেকে পরবর্তী ২ বছরে করোনার কারণে অনেকেই সরকারি চাকরিতে আবেদনের ক্ষেত্রে বয়সের যোগ্যতা হারিয়েছেন। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২১ মাসের বয়স ছাড় দিয়েছিল। গত বছরের আগস্টে বয়সের ছাড় দিয়ে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যেসব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও তার অধীন অধিদপ্তর, দপ্তর এবং সংবিধিবদ্ধ, স্বায়ত্তশাসিত বা জাতীয়কৃত প্রতিষ্ঠান করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বিভিন্ন শ্রেণির সরকারি চাকরিতে (বিসিএস ছাড়া) সরাসরি নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারেনি, সেসব প্রতিষ্ঠানকে ৩১ ডিসেম্বর (২০২১ সাল) পর্যন্ত প্রকাশিতব্য বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীদের বয়সসীমা গত বছরের ২৫ মার্চ নির্ধারণ করতে হবে। কিন্তু ২১ মাসের পুরো ছাড় তারাই পেয়েছেন যাদের বয়স ২০২০ সালের ২৬ মার্চে শেষ হয়ে গিয়েছিল। বয়সের ছাড় দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হলেও ওই সময়ের মধ্যে খুব বেশি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়নি। ফলে ২০২১ সালের শেষের দিকে যাদের বয়স শেষ হয়েছে তারা কোনো প্রকার বয়সের ছাড় পায়নি।

চাকরিপ্রার্থীরা জানান, গত ৫ জুন বয়স শেষ হয়ে যাওয়া প্রার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি তাদের আশ্বস্ত করেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানান তিনি।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া আমাদের সময়কে বলেন, একবার বয়স ছাড় দিয়েছে সরকার। সরকার আরও একবার বয়সের ছাড় দিয়ে তাদের সুযোগ দিতে পারে এখন যেহেতু বেকাররা নতুন করে আবেদন করেছে।

Share Now
November 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930