শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে টঙ্গীর গাজীপুরের  । সোমবার দুপুরে বুকে ব্যথা এবং বমি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন পোশাক কর্মী বাবুল হোসেন (৫১)। পরে মেডিসিন বিভাগের নার্স একটি ইঞ্জেকশন দেয়ার কিছুক্ষণ পর মারা যান তিনি।

নিহত বাবুল হোসেন নওগাঁ জেলার গুমারদহ গ্রামের আলেফ উদ্দিনের ছেলে। তিনি উত্তরার সুইচ গেইট এলাকায় বসবাস করে গাজীপুরের বোর্ড বাজারে একটি পোশাক তৈরি কারখানায় চাকরি করতেন।

জানা যায়, বলাকা পরিবহনের একটি গাড়িতে চড়ে গাজীপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন বাবুল হোসেন। হঠাৎ বাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এসময় পরপর দুইবার বমি করলে বাসযাত্রী মার্স মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও টিম পজিটিভ বাংলাদেশের কর্মী ফয়সাল মাহমুদ এবং একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের প্রতিনিধি গোলাম আজাদ অসুস্থ অবস্থায় তাকে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। পরে জরুরি বিভাগের ব্রাদার (নার্সরা) বাবুল হোসেনকে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করেন। সেখানে দায়িত্বরত একজন নার্স ইঞ্জেকশন পুশ করার কিছুক্ষণ পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বাবুল। পরে হাসপাতালের একজন চিকিৎসক এসে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে নিহতের স্বজন রুবেল হোসেন হাসপাতাল থেকে লাশ গ্রহণ করে গ্রামের বাড়ি নিয়ে যান।

প্রত্যক্ষদর্শী মার্স মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী এবং টিম পজেটিভ বাংলাদেশ সংগঠনের কর্মী ফয়সাল মাহমুদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় একজন রোগীকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসার পর কোন চিকিৎসকই তাকে দেখতে আসেননি। জরুরি বিভাগে যে দুজন ছিলেন, তাদের একজন আজকেই প্রথম ডিউটিতে এসেছেন এবং আরেকজনের চাকরির মেয়াদ এক মাস বলে আমাদের জানিয়েছেন। তাছাড়া মেডিসিন বিভাগে তার শরীরে কি ইঞ্জেকশন পুশ করা হয়েছে- সেটিও আমাদের বলতে রাজি হয়নি কর্তৃপক্ষ। অথচ জরুরি বিভাগের পাশেই ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. সৈয়দা তানজিনা আফরিন ইভা চেম্বারে বসেছিলেন। তিনি রোগী মুমূর্ষু হওয়া সত্ত্বেও দেখতে আসেননি। ওইসময় তার চেম্বারে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি এবং বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে মুঠোফেনে ডা. তানজিনা আফরিন ইভার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ইমারজেন্সি বিভাগে অজানা বিষ আক্রান্তের নমুনা নিয়ে একজন রোগীকে আনা হয়। তার সঙ্গে কোন নিকট আত্মীয় ছিলেন না। এ ক্ষেত্রে আমরা তাকে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করে প্রাথমিক যে চিকিৎসা- সেটি দিয়েছি। রোগীকে প্রাথমিক পর্যায়ে ফ্লুইড, এন্টিবায়োটিক এবং ডেক্সামিথাসন ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে। রোগীকে আইসিও-তে স্থানান্তরের প্রয়োজন ছিল, কিন্তু সঙ্গে কেউ না থাকায় সেটি সম্ভব হয়নি।

রোগী দেখতে না যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ইমারজেন্সি বিভাগ থেকে আমাকে রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন জানানো হলে আমি যেতাম। কিন্তু আমাকে এমন কিছু জানানো হয়নি। তাই আমি প্রেসক্রিপশনে অজানা বিষে আক্রান্ত রোগীকে যেসব চিকিৎসা দেওয়া হয়, তা দিয়েছি। এখানে চিকিৎসার অবহেলার বিষয়টি সঠিক নয়।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. পারভেজ হোসেন বলেন, আমরা অভিযোগের বিষয়টি শুনেছি। চিকিৎসকের অবহেলার বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ডা. ইভার বিরুদ্ধে আগেও অভিযোগ এসেছিল, আমরা এবারের অভিযোগটি গুরুত্বসহ দেখছি।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031