শুরু থেকে করোনাভাইরাস যেন ছড়াতে না পারে সেজন্য লোক সমাগম এড়িয়ে চলতে বলা হচ্ছে । কারণ এতে সংক্রামিত হওয়ার সুযোগ কমবে। এজন্য দেশে ঘোষণা করা হয়েছে পাঁচ দিনের সাধারণ ছুটি। সাপ্তাহিক সরকারি ছুটি নিয়ে যা দশ দিন। এসময় প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঘরের বাইরে বের হতে বারণ করা হয়েছে।

কিন্তু কে শোনে কার কথা! টানা ১০ দিনের ছুটি পেয়ে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করা অনেকেই পরিবার নিয়ে ছুটছেন গ্রামে। মঙ্গলবার সকাল থেকে লঞ্চ, ট্রেন আর বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। যেন ঈদের ছুটিতে নাড়ির টানে ছুটছেন সবাই। পরিস্থিতি দেখে ভাবার উপায় ছিল না এদের কারো করোনা নিয়ে কোনো আতঙ্ক আছে। সচেতনতা তো দূরের কথা।

স্বাস্থ্যখাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় ঈদের মতো এভাবে বাড়ি যাত্রা করায় বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে। যেখানে যাচ্ছেন তাদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে মরণঘাতী করোনাভাইরাস। কারণ এখন পর্যন্ত যারা আক্রান্ত হয়েছেন তার মধ্যে ঢাকায় বসবাসকারীদের সংখ্যাই বেশি।

এদিকে এমন পরিস্থিতির কারণে সরকারের পক্ষ থেকে দুপুরের দিকে নৌ, সড়ক ও রেল যোগাযোগ বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন স্টেশন বা ঘাটে আসা মানুষেরা। পরে যে যার মতো পারছেন গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন।

সোমবার বিকাল চারটার দিকে ছুটি ঘোষণার পর থেকেই কমলাপুর, বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ভিড় করতে থাকেন যাত্রীরা। ফলে রেল স্টেশন লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। প্রতিটি কাউন্টারে হাজার হাজার মানুষ লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিটের অপেক্ষায় থাকেন। এমন বেশ কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

এ অবস্থায় আজ থেকেই লোকাল-মেইল ট্রেন বন্ধের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। এছাড়া আগামী ২৬ মার্চ থেকে সকল ট্রেনের টিকিট বিক্রির বন্ধের ঘোষণা আসতে পারে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেল মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ আলম।

পরে যারা টিকেট কেটেছিলেন তারা আবার লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট ফেরত দেন। এটাও স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এদিকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে গণপরিবহন বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে বলে জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

মন্ত্রী জানান ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, ওষুধ, জরুরি সেবা, জ্বালানি, পচনশীল পণ্য পরিবহন এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে। পণ্যবাহী যানবাহনে কোনো যাত্রী পরিবহন করা যাবে না বলেও জানান কাদের।

অন্যদিকে বাস স্ট্যান্ডগুলোতে প্রচুর ভিড় থাকায় অনেকে ভাঙা পথে গন্তব্যে রওনা হয়েছেন। ফলে মাওয়া ও আরিচা ফেরিঘাটে ছিল যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। কিছু কিছু ফেরিতে যানবাহনের থেকে যাত্রীদের বেশি দেখা গেছে। এমন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যা নিয়ে সমালোচনাও করছেন অনেকে।

আতঙ্ক ছড়ানো করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এড়াতে সারাদেশে যাত্রীবাহী সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে পণ্যবাহী লঞ্চ চলাচল করবে। তবে ছুটি পেয়ে সকাল থেকেই সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে হাজার হাজার মানুষ এসে লঞ্চে উঠে অবস্থান নেয়। এরমধ্যে বেলা ১১টার দিকে সারাদেশে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করায় তারা পড়েন বিপাকে।

নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) জাহাঙ্গীর আলম খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ঢাকাটাইমসকে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আজ থেকে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধের নির্দেশ এসেছে। তবে পণ্যবাহী লঞ্চ চলবে। পরবর্তী নির্দেশ না নেয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে বলে জানান তিনি।

এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে নৌযান চলাচল বন্ধ করা হলেও সদরঘাটে মানুষের আসা বন্ধ হয়নি। ফলে এই এলাকায় মানুষের ঢল নামে।

নির্দেশনা অনুযায়ী ঘাট থেকে দুপুরের দিকে লঞ্চ কেরানীগঞ্জের ওপারে নোঙর করে রাখা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যারা লঞ্চে আগভাগে উঠে ছিলেন তাদের নামিয়ে দেন। বন্ধ করে দেয়া হয় ঘাটে প্রবেশের গেট।

এদিকে সন্ধ্যার পরও দেখা গেছে সদরঘাটের পাশের নৌকা দিয়ে অনেকে ঝুঁকি নিয়ে কেরাণীগঞ্জের দিকে নোঙর করা লঞ্চে উঠতে দেখা গেছে। তাদের ধারণা লঞ্চ তাদের গন্তব্যে যাবে। যদিও এতে যেকোনো সময় ছোট নৌকা ডুবে যাওয়ারও শঙ্কা আছে।

তবে লঞ্চ ছাড়া হবে না বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা। সংস্থাটির যুগ্ম পরিচালক (ঢাকা নদীবন্দর) এ কে এম আরিফ উদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যাত্রীরা খেয়ায় করে লঞ্চে যাওয়ার বিষয়ে আমরা নৌপুলিশকে অবহিত করেছি। তারা এবিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন। আমরা যাত্রীদের লঞ্চ থেকে নামিয়ে দিতে নৌপুলিশকে বলেছি। যদি কেউ আইন ভেঙে লঞ্চে যায়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।‘

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031