একের পর এক বন্ধ হচ্ছে সম্ভাবনাময় পোল্ট্রি খামার গাজীপুরের শ্রীপুরে। বাচ্চা ও খাবারের দাম বেড়ে যাওয়া, উৎপাদিত ডিমের বাজার ও চাহিদা না থাকা, পাইকারদের সিন্ডিকেট ও পোল্ট্রি শিল্পে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের আগ্রাসনে ব্যবসায় টিকতে পারছেন না খামারিরা।গত ৬ মাসে বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় এক হাজার খামার। এতে বেকার হয়ে পড়ছেন হাজার হাজার শ্রমিক।

পোল্ট্রি খামার সংশ্লিষ্টরা জানান, নব্বইয়ের  দশকে গাজীপুরের শ্রীপুরে ব্যাপকহারে পোলট্রি খামার গড়ে উঠে। শুরুতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা থাকলেও পরে ব্যক্তিগত বিনিয়োগে দিন দিন বাড়তে থাকে খামারের সংখ্যা। ২০০৬সালে শ্রীপুরে নিবন্ধিত  ছিল সাড়ে ৩ হাজার ব্রয়লার(মাংস) ও লেয়ার(ডিম) মুরগির খামার। গত কয়েক বছরে এর সিংহভাগই বন্ধ হয়েছে। বর্তমানে চালু রয়েছে প্রায় ৫’শর মত খামার। লাভ তো দূরের কথা, লোকসান এড়াতে প্রতিদিনই খামার বন্ধ করার পরিকল্পনা করছেন খামারিরা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না পেয়ে আজও সিন্ডিকেটের কবল থেকে বেরোতে পারেননি তারা। বাচ্চা থেকে ডিম, বাচ্চা থেকে মাংস উৎপাদন প্রতিটি স্তরেই রয়েছে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম। আবার বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোও (বাচ্চা উৎপাদনকারী হ্যাচারি) নিজেরা ডিম ও মাংস উৎপাদন করায় তাদের সাথে  প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না প্রান্তিক খামারিরা। দেশের ব্যাংকগুলো থেকে কোন লোন সহায়তাও পাচ্ছেন না প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা। এতে মহাজনদের ঋণের চাপে পথে বসেছেন কয়েক হাজার খামারি।

খামারিা বলছেন, বর্তমানে একটি ডিম উৎপাদন করতে পাঁচ টাকা ছাড়িয়ে গেলেও, প্রতিটি ডিম (সাদা) ৩টাকা ৮০ পয়সা, ডিম (লাল) ৪ টাকা ১০ পয়সা দরে পাইকারী বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। প্রতিকেজি মাংস উৎপাদনে খরচ ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে। বিপরীতে পাইকারী বাজারে মাংস বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৯৫ টাকা কেজি দরে।

সিংদীঘি গ্রামের আলম শেখ জানান, প্রায় ১১ লাখ টাকা খরচ করে দুই হাজার মুরগির একটি শেড তৈরি করেছেন তিনি। এর মধ্যে  সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা ব্যাংক লোন নিয়েছেন। ডিম বিক্রি করে লোন পরিশোধ করার আশা ছিল। এখন ডিম বিক্রি করে মুরগির খাবারই জোগান দেয়া যাচ্ছে না। প্রতিদিন তার লোকসান হচ্ছে ২ হাজার টাকা করে।

এক সময়ের প্রবাসী কাওরাইদ এলাকার রফিকুল ইসলাম বলেন, গত ১৫ বছরে জমানো টাকা দিয়ে দুই হাজার মুরগির শেড করেছিলাম।বর্তমানে ডিমের বাজার না থাকায়,  পুঁজি হারাতে বসছেন তিনি।

এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলার পোলট্রি মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল মতিন এজন সিন্ডিকেটের দৌরাত্মের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা নানাভাবে প্রান্তিক খামারিদের বাঁচাতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছি। তাতে কোন ফল হয়নি। ক্রমাগত লোকসানে অনেকেই খামার বন্ধ করে পথে বসেছেন। দেনাদারদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেকে।

একই কথা জানালেন, শ্রীপুর উপজেলা এগ্রোভেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি উজ্জল মিয়া। তিনি বলেন, শ্রীপুরের পোল্ট্রি শিল্পে জড়িয়ে আছে কয়েক হাজার লোকের ভাগ্য। এখন প্রতিদিনই বন্ধ হচ্ছে খামার। অব্যাহত লোকসানে মুরগির সংখ্যা কমিয়ে ফেলছেন খামারিরা।

প্রতিনিয়ত খামার বন্ধ হওয়াকে উদ্বেগজনক উল্লেখ করে শ্রীপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুল জলিল বলেন, ডিমের দাম কমে যাওযায় ইতোমধ্যে অনেক খামারি খামার বন্ধ করে দিয়েছেন।বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হযেছে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031