হগাইবান্ধাপ্রতিনিধিঃ
দেশব্যাপী আলোচিত কোমরে জোড়া লাগানো থেকে আলাদা করা জমজ দু’বোন তোফা-তহুরার জন্য ঘর বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। জমি আছে ঘর নাই প্রকল্পের আওতায় তোফা-তহুরার নানার বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রামজীবন ইউনিয়নের কাশদহ গ্রামে একটি ঘর বরাদ্দ দেয়ার পরিকল্পনা চলছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম গোলাম কিবরিয়া জানান- তোফা-তহুরা বর্তমানে তার নানার বাড়িতে অবস্থান করছে। তিনি বলেন যদি তোফা-তহুরার নানা শহিদুল ইসলাম তাদের নামে এমনকি তোফা-তহুরার মা শাহিদা বেগমের নামে ঘর উঠানোর জন্য বিধি মোতাবেক জমি দলিল করে দেয়, তাহলে ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে।
ভাল আছে তোফা-তহুরা। বর্তমানে নানার বাড়িতে আনন্দে দিন কাটছে তাদের। সর্বশেষ ঢাকায় টানা সাড়ে চার মাস চিকিৎসা শেষে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রামজীবন ইউনিয়নের কাশদহ গ্রামের নানার বাড়ীতে ফিরেছে তোফা-তহুরা। কিন্তু বাড়িতে বিদ্যুৎ না থাকা কারণে গরমে দু’বোন প্রতিনিয়ত অসুস্থ্য হয়ে পড়ছিল। সে কারণে বিশেষ নির্দেশনায় গত ৯ মার্চ তোফা-তহুরার নানার বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়। তোফা-তহুরার কারণে ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হওয়ায় এলাকাবাসী আনন্দিত।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনায় ২০১৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তোফা-তহুরাকে দেখতে এসে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম গোলাম কিবরিয়া বিদ্যুৎ বিভাগকে তোফা-তহুরার বাড়িতে দ্রুত বিদ্যুতের সংযোগ প্রদানের আদেশ দেন। ওই সময় ইউএনও গরমের কষ্ট থেকে রেহাই পেতে তাদের বাড়ীতে ৫০ ওয়াটের একটি সৌরবিদ্যুৎ লাগিয়ে দেয়।
বাড়ীতে ফিরলেও নিয়মিত তোফা-তহুরার খোঁজ-খবর নিচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাহনূর ইসলাম। তাদের দু’জনকে ভালো রাখতে সবসময় মুঠোফোনে মা শাহিদা বেগমকে পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।
মা শাহিদা বেগম বলেন, চিকিৎসকরা বলেছেন তোফা-তহুরার যেন কোন অযতœ না হয়। সবসময় যেন ভালো থাকে, সেভাবে রাখতে হবে। তিনি বলেন বর্তমানে তোফা-তহুরা ভাল আছে। নিয়মিত বুকের দুধ খাচ্ছে। পাশাপাশি অন্য খাবারও খাচ্ছে। তারা একটু-একটু করে হাটার চেষ্টা করছে। ক্যাথেটার দিয়ে তহুরাকে প্রসাব করাতে হচ্ছে। এ ছাড়া আর কোন সমস্যা নাই। তোফা-তহুরার জন্মের ৬ মাস আগে থেকে শাহিদা বেগম তার বাবা শহিদুল ইসলামের বাড়িতে রয়েছে।
তোফা-তহুরার নানা শহিদুল ইসলাম জানান- তিনি গরিব মানুষ। তোফা-তহুরা জন্মের ৬ মাস আগে থেকে তার মেয়ে শাহিদা বেগম তার বাড়িতে অবস্থান করছে। দুইটি ঘরের মধ্যে অনেক কষ্ট করে মেয়ে নাতিনী এবং স্ত্রী পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছে। যদি সরকারের পক্ষ থেকে একটি ঘর করে দেয়া হয় তাহলে তার অনেক উপকার হবে। তার জামাতা তোফা-তহুরার কোন খোজঁ খবর রাখছে না বলে তিনি জানান।
তোফা-তহুরার চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাহনূর ইসলাম জানান- তোফা-তহুরা এখন ভালো আছে। তহুরার প্রসাবের একটু ইনফেকশন রয়েছে। তাকে চিকিৎসা দেওয়া আছে। এ ছাড়া তাদের দু’জনকে ডেভেলপমেন্টাল থেরাপির জন্য সাভার সিআরপিতে (পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে) পাঠানো হয়েছিল। সেখানে চিকিৎসা শেষে তাদেরকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এখন তাদের ওজন সাত কেজি করে রয়েছে। ওজন ১০ কেজি হওয়ার পরে তাদের আবারো অপারেশন করা হবে। এখন থেকে প্রতিমাসে চেকআপের জন্য তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একবার আসতে হবে। এর আগেই যদি অসুস্থ্য হয়, তখন আগে আসবে।
দেশব্যাপী আলোচিত এই জমজ শিশু তোফা-তহুরার এমন অপারেশন দেশে এইবারই প্রথম। তাই যে কোন উপায়ে তাদের দু’জনকে সুস্থ্য রাখা চিকিৎসকদের জন্যও এক ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে।
২০১৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কোমরে জোড়া লাগানো অবস্থায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রামজীবন ইউনিয়নের কাশদহ গ্রামে নানার বাড়িতে তোফা ও তহুরার জন্ম হয়। মিড়িয়ায় বিষয়টি আলোচিত হলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় তাদেরকে ৭ অক্টোবর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর ১৬ অক্টোবর তাদের প্রথম অস্ত্রোপচার করা হয়।
২০১৭ সালের ১ আগষ্ট তাদেরকে আলাদা করার জন্য করা হয় দ্বিতীয় অস্ত্রোপচার। পরে সুস্থ হলে সে বছরেরই ১০ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা থেকে গাইবান্ধায় ফেরে তোফা-তহুরা। আবারও তহুরা অসুস্থ্য হলে ২০১৭ সালের ৮ অক্টোবর তহুরাকে ঢাকায় নেওয়া হলে সাড়ে চার মাস চিকিৎসা শেষে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বাড়ীতে ফেরে জমজ দু’বোন তোফা-তহুরা।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031