জাতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় স্মরণ করলো তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী বুদ্ধিজীবীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার মধ্য দিয়ে রায়েরবাজার ও মিরপুর বধ্যভূমিতে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। এ সময় তারা বুদ্ধিজীবীদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। গতকাল সকালে কালো পতাকা উত্তোলন, জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের কর্মসূচির মাধ্যমে স্মরণ করা হয় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের। ছিল শহীদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বালন, শোকযাত্রা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, মিলাদ মাহফিলসহ নানা কর্মসূচি। গতকাল সোমবার মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতি সৌধে ভোরের আলো ফোটার আগেই মানুষের ঢল নামে। করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি থাকায় শ্রদ্ধা নিবেদনের কর্মসূচি ছিল কিছুটা সীমিত।
সকাল ৭টা ১০ মিনিটে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের পক্ষ থেকে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম শামীম-উজ-জামান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকীব আহমেদ চৌধুরী শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

তারপর জাতীয় সংসদের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। এরপরই সাধারণ জনগণের জন্য এটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সর্বস্তরের মানুষ স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। একে একে শ্রদ্ধা নিবেদন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্যরা, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, আওয়ামী যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)।
এদিকে রায়েরবাজারের বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে জনতার ঢল নামে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়তে থাকে। তবে করোনার কারণে অন্য যেকোনো বারের চেয়ে ভিড় ছিল তুলনামূলক কম। সর্বস্তরের মানুষের অশেষ শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার অর্ঘ্যে ফুলে ফুলে ভরে ওঠে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির মিনার।
মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান: সামপ্রদায়িক অপশক্তিকে সমূলে মূলোৎপাটন করতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, সামপ্রদায়িক অপশক্তিরা এখনো ষড়যন্ত্র করছে, এদের বিষবৃক্ষের ডালপালা এখনো বিস্তার করে আছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সামপ্রদায়িক অপশক্তির সমূলে মূলোৎপাটন করাই হবে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের শপথ। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সোমবার সকালে মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে জিয়াউর রহমানের ভাস্কর্য রয়েছে কিন্তু, বিএনপি এ ব্যাপারে নীরবতা পালন করছে? এই নীরবতাকে কী হিসেবে দেখছেন? এমন এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি’র নীরবতার কারণ তো পরিষ্কার। পেছন থেকে মদত দিচ্ছে তারা। তারাই এই সামপ্রদায়িক অপশক্তির পৃষ্ঠপোষক, জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক-এটা প্রমাণিত। সকাল নয়টার দিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতেও আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ওবায়দুল কাদের। এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031