বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিশেষ আদালতের সাজার রায়, কারাগারে পাঠানোসহ চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে ব্রিফ করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে গতকাল বিকালে তিনি এ ব্রিফ করেন। ব্রিফিংয়ে আমন্ত্রিত আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোর মধ্যে ছিল- বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা, আল জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান, চীন হুয়া, এপি, এফপি, জার্মান রেডিও ডয়চে ভেলে, কলকাতা২৪, জি নিউজ। অন্যদিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপি নেতাদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, নজরুল ইসলাম খান, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওশাদ জমির ব্রিফিংয়ে অংশ নেন। বিদেশী গণমাধ্যমকে ব্রিফের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে কি জানিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশের বর্তমান অবস্থা তাদেরকে জানিয়েছি।
আপনাদের সঙ্গে তো প্রতিদিন দু’তিনবার করে কথা হয়। উনাদের সঙ্গে বছরে একবারও কথা হয় না। প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, দেশের আইন অনুযায়ী জামিন পেতে হাইকোর্টে যেতে হবে। সে সঙ্গে তার (খালেদা জিয়ার) জামিন চাইতে হবে। কোর্ট শুক্র ও শনিবার বন্ধ। আশা করছি আগামী রোববার বা সোমবারের মধ্যে কাগজপত্র পাওয়া গেলে এ ব্যাপারে আইনি প্রক্রিয়ার কাজ শুরু হবে। রায়ের সার্টিফাইড কপি পাওয়া না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো আইনজীবীরা জানেন। তারা বলছেন এটা পসিবল। রোববার সোমবারের মধ্যেই আমরা এটাকে প্রসেস করতে পারব। ঠিক এ মুহূর্তে চেয়ারপারসনের কেমন পরিস্থিতি আপনারা কি জানতে পেরেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা আলমগীর বলেন, সবাই যা জানেন আমিও তাই জানি। পত্র পত্রিকায় যা দেখছি, খবর যা পেয়েছি, সেটা হচ্ছে উনাকে পুরোনো এবানডেন্ট সেন্ট্রাল জেলে সুপারের ঘরে রাখা হয়েছে। আর পরিবারের সদস্যরা বিকেলে দেখা করতে গিয়েছিলেন। তাদের সঙ্গে এখনো কথা হয়নি। আমি ঠিক জানি না। বিএনপি চেয়ারপারসনের ঔষুধপত্র নিয়ে তিনি বলেন, এসব নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলতে পারব না। আশা এবং প্রত্যাশা করছি, খালেদা জিয়া তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, দুইবারের বিরোধী দলীয় নেত্রী, জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে যেটা তার প্রাপ্য সেটা পাওয়া উচিত। ৮ই ফেব্রুয়ারি রায়ের তারিখ ঘোষণার পর তা পরিবর্তনের বিষয়ে আবেদন করা হয়েছিল কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি আমি ঠিক বলতে পারব না। আমি তো আইনজীবী নই। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা আশা করিনি আওয়ামী লীগের মতো একটি পুরোনো রাজনৈতিক দল তারা আজকে এ ধরনের আরেকটি রাজনৈতিক নেতাকে এভাবে টোটাল্লি খারাপ অবস্থায় হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য হীন পন্থার আশ্রয় নেবে। দলের নেতৃত্বের প্রশ্নে মির্জা আলমগীর বলেন, এটা নিয়ে সংশয়ের কোনো কারণ নেই। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাবসেন্স অব চেয়ারপারসন। তিনি চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করছেন। খালেদা জিয়া কারাগারে রয়েছেনÑ এ পরিস্থিতিতে দল এবং সাধারণ মানুষদের প্রতি বিএনপির আহ্বান সম্পর্কে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া শুধু বিএনপির চেয়ারপারসন নয়, তিনি ১৬ কোটি মানুষের নেতা। তার রাজনৈতিক জীবনটাই ছিল গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামের জীবন। লড়াই করেছেন। উড়ে এসে জুড়ে বসেননি। তিনি সংগ্রাম করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। সংসদীয় গণতন্ত্রের এবং দেশে বহু উন্নয়ন কাজের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। একটা মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত করে তার বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে যে সব প্রচারণা করা হচ্ছে তাতে আমরা শুধু লজ্জিত হচ্ছি না, দুঃখিত হচ্ছি না, বলা যেতে পারে এটাকে আমরা ধিক্কার জানাচ্ছি।
