ভঙ্গুর রাষ্ট্রব্যবস্থায় কর্তৃত্ববাদী সরকার জেঁকে বসেছে বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. দিলারা চৌধুরী। বুধবার এবি পার্টি আয়োজিত ধর্ষন বিরোধী নাগরিক সমাবেশ ও মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রফেসর ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়া ছাড়া এই ধরনের ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়। আমরা সবাই ধর্ষকদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছি, সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে ধর্ষকদের ফাঁসি চাচ্ছি। কিন্তু বর্তমান ঘটনাবলী হলো ভঙ্গুর রাষ্ট্রব্যবস্থা নামক রোগের সিমটম। যেখানে একটি কর্তৃত্ববাদী সরকার জেঁকে বসেছে। বাংলাদেশে কোনো আইনের শাসন নেই, কোনো বিচার নেই।
তিনি আরও বলেন, বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে তাতে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় দেশব্যাপী ধর্ষক গড়ে উঠছে।
এ অবস্থায় আমরা যদি সোচ্চার না হই তাহলে এই সমস্ত ঘটনাবলী ঘটতেই থাকবে। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হলে, সুশাসন নিশ্চিত না হলে এটাকে বন্ধ করা যাবে না।
সমাবেশে সাংবাদিক ও কলামিস্ট গৌতম দাস বলেন, আইন শৃংখলা ছাড়া যদি রাষ্ট্র চলতো তাহলে গত ৪০০ বছর ধরে এত রাষ্ট্র বিষয়ক নিয়মনীতির দরকার ছিলনা। আমরা স্বীকার করি বা না করি বাংলাদেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। বিগত ঘটনাবলিতে তা প্রমাণিত। আমাদের এটা মনে রাখতে হবে ধর্ষণের সাথে ক্ষমতা সম্পৃক্ত।
বিশ্ব বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা বিশিষ্ট অপরাধ বিজ্ঞানী ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, গত সাড়ে চার বছরে সাড়ে সাত হাজার নারী ধর্ষিত হয়েছে। গত চার মাসে ধর্ষিত হয়েছে ৮ শতাধিক নারী। ধর্ষণের বিচারে আইন ও তদন্ত ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে হবে।
সাবেক সংসদ সদস্য নিলুফার চৌধুরী মণি বলেন, যে জাতি তার মায়ের সম্ভ্রম, বোনের ইজ্জত রক্ষা করতে পারেনা তাদের ধ্বংস অনিবার্য। যে ফ্যাসিস্ট সরকার ব্যাংক গুলো খালি করে বাড়ী বাড়ী ব্যাংক তৈরী করে তাদের জন্য ধর্ষণ সম্ভব। যে সরকার মানুষের সব অধিকার কেড়ে নিতে পারে তাদের দ্বারা ধর্ষণ সম্ভব। যে সরকার দিনের ভোট রাতে নিতে পারে তাদের জন্য ধর্ষণ সম্ভব।
ঢাকা বিশ্ববদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রফেসর ড. মাইমুল আহসান খান বলেন, ক্ষমতা আর অর্থের অসম বন্টনের ফলে সমাজে দুই ধরনের মানুষ তৈরী হয়েছে। এক ধরনের মানুষ নিজকে আইনের উর্ধ্বে মনে করে। আরেক ধরনের বিকৃত মানুষ সৃষ্টি হয়েছে যারা কাউকে নির্যাতন করতে পারলে উল্লাসিত হন। এখন এটা মোকাবেলা করার জন্য সমাজের সকল তরফ থেকেই প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক মেজর অব: ডা: আব্দুল ওহাব মিনার বলেন, বর্তমান সময়ের ধর্ষকরা নিজেদেরকে রাষ্ট্রের মালিক মনে করে, তাই তারা নারীদের ভোগ করার অবাধ লাইসেন্স ধারন করেছে। ধর্ষকরা দলীয় আশ্রয় প্রশ্রয় পাচ্ছে। প্রশাসন, পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয় না। তাই নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। নারী হচ্ছে- আমার মা, বোন, স্ত্রী, মেয়ে, ভাগ্নি। তাদের প্রতি মর্যাদাপূর্ণ আচরনের কৃষ্টি সৃষ্টি করতে হবে।
নাগরিক সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন এবি পার্টির আহবায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধূরী। সঞ্চালনা করেন দলের যুগ্ম- আহবায়ক অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার নাসরিন সুলতানা মিলি, এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মন্জু, যুগ্ম আহ্বায়ক আনিসুর রহমান কচি, যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, কেন্দ্রীয় নেতা বি এম নাজমুল হক, কেন্দ্রীয় সহকারী সদস্য সচিব এডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, এবিএম খালিদ হাসান, আনোয়ার সাদাত টুটুল, আব্দুল বাসেত মারজান, এএফএম উবাইদুল্লাহ মামুন, বিশিষ্ট শ্রমিক নেত্রী বেবী পাঠান, এডভোকেট আলতাফ হোসাঈন, বীর মুক্তিযোদ্ধা এম ইদ্রিস আলী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এডভোকেট আব্দুল্লাহ আল হাসান সাকীব, আফ্রিদ হাসান তমাল, প্রমূখ।
