বয়স ৩৮ বছর। মিনহাজ হোসেন।রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। হঠাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেড় বছরের বেশি সময় আগে মিনহাজ চাকরি ছেড়ে দেন। জন্মসূত্রে বাংলাদেশি হলেও মিনহাজ বেড়ে উঠেছেন পাকিস্তানে। তার মা পাকিস্তানে চাকরি করতেন।

বাবা থাকেন রাজধানীর মালিবাগের বাসায়। পাকিস্তানে ‘ও’ লেভেল, ‘এ’ লেভেল শেষ করেন মিনহাজ। পরবর্তীতে তার মায়ের সঙ্গে পাকিস্তান থেকে বৃটেনে চলে যান। সেখানে মিনহাজ লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস থেকে স্নাতক পাস করেন। পরবর্তীতে তিনি স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করতে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ম্যাসন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। এরপর ব্রুনাই দারুসসালামের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন মিনহাজ। একই সময়ে কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করেন। এক পর্যায়ে জড়িয়ে যান জঙ্গি কার্যক্রমে। যান সিরিয়াতেও।  দেশে ফিরে যুক্ত হন নব্য জেএমবি’র কার্যক্রমে।

মিনহাজ সম্পর্কে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তারা কথা বলতে সম্মত হননি। এদিকে মিনহাজের সিরিয়ায় অবস্থানের গোয়েন্দা তথ্য থাকলেও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি তা অস্বীকার করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে মিনহাজ জানান, তার জন্ম বাংলাদেশে হলেও কিশোর বয়সেই পরিবারের সঙ্গে পাকিস্তানে চলে যান। সেখানেই বেড়ে ওঠেন। পরবর্তীকালে তিনি সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।
তদন্ত সূত্র জানায়, মিনহাজ অস্ট্রেলিয়ান একাডেমি অব বিজনেস লিডারশিপের একজন ফেলো। এখন পর্যন্ত তিনি মোট তিনটি বই লিখেছেন। পিএইচডি শেষে ব্রুনাই, মালয়েশিয়া, পাপুয়া নিউগিনিসহ একাধিক দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। পরবর্তীতে পুনরায় ২০১৭ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি’র একটি অংশ নব্য জেএমবি’র দলটির আমন্ত্রণে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন তিনি। উগ্রবাদে দীক্ষিত হয়ে সিরিয়াভিত্তিক আন্তর্জাতিক উগ্রবাদী সংগঠন হায়াত তাহরির আল শামের (এইচটিএস) সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ স্থাপন করেন। মিনহাজ হোসেন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি’র একটি অংশ নব্য জেএমবি’র একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন তুরস্কে অবস্থান করে সেখান থেকে সিরিয়ায় চলে যান তিনি। সিরিয়ায় গিয়ে এইচটিএস জঙ্গি সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়ে তিন মাস পরে ঢাকায় ফিরে আসেন। পরবর্তীতে ঢাকা থেকে খুলনায় গিয়ে নব্য জেএমবি’র নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন। সূত্র জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাংলাদেশে কথিত খিলাফত প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন মিনহাজ। উগ্রবাদী ভাবাদর্শে দীক্ষিত হয়ে পুনরায় আন্তর্জাতিক উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু করে। নব্য জেএমবি সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হয়ে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকা-ের চেষ্টা চালান মিনহাজ। ল্যাপটপ ও মোবাইলের মাধ্যমে সংগঠনের নানান কর্মকা-ে যুক্ত থাকতেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকা-ে জড়িত থাকার কথা ইতিমধ্যে স্বীকার করেছেন তিনি। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের মিনহাজ জানান, দেশে খিলাফত প্রতিষ্ঠাই ছিল একমাত্র উদ্দেশ্য। করোনা মহামারির সময় জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে তার যোগাযোগ বেড়ে যায়। এরপর আবারো বিদেশ চলে যান। সেখানে থেকে নাশকতামূলক কর্মকা-ের জন্য রাজধানীকে বেছে নিয়েছিলেন মিনহাজ ও তার জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা। দেশে এসে নব্য জেএমবি’র আশ্রয়ে নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন মিনহাজ। সিরিয়া ও তুরস্কের জঙ্গি সংগঠন হায়াত তাহরির আল শামের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানায় সূত্র। সূত্র আরো জানায়, সংগঠনটি আন্তর্জাতিকভাবে তাহরির আল শাম নামেই পরিচিত। এই সংগঠনটি মূলত আল-কায়েদার ভাবাদর্শী। দলটি আগে সিরিয়ার আল-নুসরা ফ্রন্টের অংশ ছিল। যেটিকে আল-কায়েদার সিরীয় শাখা হিসেবে মনে করা হতো। কিছুদিন আগে এই সংগঠনের জঙ্গিরা রুশ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে।
সূত্র জানায়, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকা-ের মাধ্যমে কথিত খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নাশকতার পরিকল্পনা করছেন। এমন তথ্যের ভিত্তিতে তাকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার রাজধানীর দারুস সালাম থানা এলাকার কোনাবাড়ী বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিম পাশ থেকে কাউন্টার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের একটি দল মিনহাজকে গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে দারুস সালাম থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে সিটিটিসি চারদিনের রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-কমিশনার ওয়ালিদ হোসেন বলেন, দারুস সালাম এলাকা থেকে নব্য জেএমবি’র এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দারুল সালাম থানায় মামলা হয়েছে। গত রোববার শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুদ-উর রহমান চার দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031