মৎস্য বিভাগ বঙ্গোপসাগরে সব ধরনের মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেয় । এতে চরম অভাব-অনটন আর হতাশার মধ্যে দিন পার করছে বরগুনার তালতলী উপজেলার উপকূলের জেলে পরিবার। এই জেলেদের জীবন-জীবিকার চাকা ঘোরে বঙ্গোপসাগর ও নদীর মাছকে ঘিরেই। একদিকে সমুদ্রে মাছ শিকার বন্ধ, অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধির ফলে জেলেদের চরম দুর্দিন যাচ্ছে। জেলে পল্লীগুলো গুলোতে হাহাকার চলছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবছর সাগরে সব ধরনের মাছ শিকারে ৬৫ দিনের (২০ মে থেকে ২৩ জুলাই) পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। এর ফলে বর্তমানে সাগরে মাছ শিকার বন্ধ। অবরোধ শেষ হওয়ার বাকি আরও ৯ দিন। বছরের বিভিন্ন ধাপে ১৪৭ দিন নিষেধাজ্ঞার ফলে জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীদের চরম সংঙ্কটে কাটে জীবন। জেলেরা যে সরকারি সহায়তা পায় তা খুবই অপ্রতুল। ৬৫ দিনের জন্য মাছ ধরা বন্ধ থাকায় তারা বেকার হয়ে পড়েছেন। ধারদেনা করে দিন কাটাতে হবে। মাছ ধরা বন্ধ, তাই সাগরে যেতে পারবেন না এবং আয়-ইনকামও বন্ধ। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে আছেন। ফলে জেলে ও ব্যবসায়ীদের জীবন কাটে চরম দুর্দশায়।

জেলেদের দাবি, বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ ধরছে ভারতীয় জেলেরা। ভারতে আর বাংলাদেশে একই সময়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত ছিল। সরকারের পক্ষ থেকে জেলেদের জন্য যে পরিমাণ চাল বরাদ্দ দেওয়া হয় সেগুলো সঠিকভাবে বণ্টন করা হয় না। তাই তাদের সংকটও দূর হয় না।

ফকিরহাটের জেলে পল্লীর জেলে মো. মিঠু মাঝি জানান, গভীর সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে নিবন্ধিত জেলের তালিকায় তার নাম ওঠেনি। যে কারণে জেলেদের নামে বরাদ্দের চাল তিনি পান না। এতে তার পরিবার নিয়ে চরম অভাব-অনটন আর হতাশার আছেন।

নিদ্রা জেলে পল্লীর মো. দুলাল বলেন আমি মাছ ধরার কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজ জানি না। জেলের কাজ করতে গিয়ে তিনটা এনজিওর থেকে ঋণ নিয়েছি। প্রতি মাসে ১৬ হাজার টাকা কিস্তি চালাইতে হয়। কিন্তু দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা চলায় নদীতে গিয়া মাছ ধরতে পারি না। এখন কিস্তি চালাবো কেমন করে। সরকার তো দুই মাসের জন্য এনজিওর কিস্তি আদায় বন্ধ করে নাই। তার পরে আবার পরিবারে ৬ জনের সদস্য নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হয়। মাত্র ৫৬ কেজি চালে দুই মাসে কিছু হয় না।

ফকিহার উপ মৎস্য অবতরন কেন্দ্রের আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মজিবর ফরাজী বলেন, সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে জেলেদের পাশাপাশি আমরা মৎস্য আড়তদাররাও বিপাকে আছি। প্রতিদিনই কোনো না কোনো জেলে তাদের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আমাদের কাছে হাজির হয়ে বলে ঘরে চাল নাই, টাকা ধার দেন বা দাদন দেন চাল কিনে খাবো। এখন আমাদের কষ্ট হলেও জেলেদের টাকা দিতে হচ্ছে।

তালতলী উপজেলা মেরিন ফিসারিজ অফিসার ওয়ালিউর শুভ বলেন, এ উপজেলায় সরকারী ভাবে নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ৮ হাজার ২’শ জন। এর ভেতরে সমুদ্রগামী জেলে রয়েছেন ৫ হাজার ২’শ জন। সমুদ্রগামী জেলেদের ৫৬ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন,ভারতীয় জেলেরা ইলিশ শিকারের বিষয়ে আমরা মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানিয়েছি।

তালতলী উপজেলা নিবার্হী অফিসার সিফাত আনোয়ার তুমপা বলেন, জেলে চাল বিতরণে বিভিন্ন সময় অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। এজন্য এইবার প্রতিটি ইউনিয়নের জেলেদের আলাদা আলাদা ভাবে চাল দেওয়া হয়েছে। যাতে কোনো ধরণের অনিয়ম না হয়। পরবর্তীতেও এইভাবে চাল দেওয়া হবে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031