মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ের এক নম্বর ভবন ভূমিকম্পের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছেন । তবে সচিবালয়ের ভবনগুলোতে আগুনের ঝুঁকি কম। যদিও অগ্নিঝুঁকি মোকাবেলায় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকের উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিপরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে দুপুরে সচিবালয়ে সচিব সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আমাদের এই ভবনের (১ নম্বর ভবন) ব্যাপারে একটা সতর্কতা আছে যে, এখানে যদি আর্থ কোয়েক (ভূমিকম্প) হয়, এগুলো দুর্বল। এটার বেইজটা অনেক পুরোনো ধরনের, ৬০-৭০ বছর আগে তৈরি করা এ ভবনটি। এটা নিয়ে একটু ঝুঁকি আছে।’

সচিব বলেন, ‘দাউকিতে (ভারতের মেঘালয়ে) ভূমিকম্পের যে আধুনিক সিগন্যালটি আছে সেটি নাড়া দেওয়ার দুই মিনিট পর আমাদের এখানে আসবে। আর আমরা যদি দুই মিনিট আগে সিগন্যাল পাই তাহলে ভবনটি খালি করতে পারবো। সব লোক মাঠে চলে যাবে, এটা সম্ভব। তবে সিগন্যালটি আসতে হবে।’

শফিউল আলম বলেন, ‘ভৌগলিক কারণেই দাউকি থেকে ঢাকা ভূমিকম্প পৌঁছাতে দুই মিনিট সময় লাগবে। এই দুই মিনিট সময় পেলেই ঢাকা শহরে যারা আছে তাদের সতর্ক করা যাবে এবং তারা সবাই সরে যেতে পারবে।’

সচিবালয়ের ভবন অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পিডাব্লিউডির বিল্ডিংগুলোতে সার্কিট ব্রেকার আছে। তাই কোনো কারণে শর্টসার্কিট হলে বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে এ ক্ষেত্রে ঝুঁকি কম। আমাদের ভবনগুলো ম্যাচ বক্সের মতো। আর এফআর টাওয়ার ছিল বাক্সের মতো। এতে কোনো জানলা নেই, কাচ দিয়ে ঘেরা।’

শফিউল আলম বলেন, ‘সচিবালয়ে যে ভবনগুলো নির্মাণ হয়ে গেছে সেগুলোর ক্ষেত্রে কিছু করার নেই। তবে মসজিদের পাশে বড় একটি ভবন হবে। সেটি সব বিষয় বিবেচনায় রেখে নির্মাণ করা হবে।’

সচিবালয়ের ভবনগুলোর অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি এড়াতে বৈঠক ডাকা হবে জানিয়ে সচিব বলেন, ‘পিডাব্লিউডি এরই মধ্যে ব্যবস্থা নিচ্ছে। ভবনগুলোতে পুরনো যে ফায়ার এক্সটিংগুইসার আছে সেগুলোর মেয়াদ আছে কি না সেটি দেখছে। আমরা এ বিষয়ে মিটিং ডেকে সিদ্ধান্ত নেবো।’

মন্ত্রিসভার বৈঠকে আগুনের বিষয়ে সোমবার কোনো আলোচনা হয়নি বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

গত মন্ত্রিসভার বৈঠক সচিবালয়ে ৬ নম্বর ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন বারান্দাগুলো কেন ন্যারো- এ বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এটা জেনারেল সমস্যা। আমাদের ভবনগুলো মাক্স বক্সের মতো। বনানীর আগুনের ঝুঁকিতে পড়ে গেল, এটা ছিল অনেকটা বাক্সের মতো। এর কোনো জানলা-ব্লক নেই। এটা কাচ দিয়ে ঘেরা, এসি, এয়ার কন্ডিশন। যে কারণে আপনারা দেখছেন যারা বের হওয়ার জন্য চেষ্টা করেছেন গ্লাস ভেঙে তারপরে বেড়িয়েছেন। এগুলো প্রধানমন্ত্রী বহুবার বলেছেন যে, একটু খোলামেলা করা, বারান্দা রাখা।’

‘বারান্দা রাখলে সুবিধা হতো কী- বারান্দায় গিয়ে একটা কাপড় দিয়ে ঝুলে নেমে যেতে পারতো। কিন্তু বারান্দা নেই। সচিবালয়ের যে ভবনগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। সেগুলো তো আর বড় করা যাবে না। মসজিদের পাশে বড় বিল্ডিং হবে ২০ তলা। সেটার মধ্যে এসব বিষয় অ্যাড্রেস করে করা হবে।’

নতুন করে বিল্ডিং নির্মাণ হলে সচিবালয় স্থানান্তরের প্রক্রিয়ার কী হবে- প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘সেটা কবে হয় বলা মুশকিল। তবে এটার প্ল্যান প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। মসজিদের পাশে টিনশেডগুলো সরিয়ে ওখানে হাইরাইজ বিল্ডিং করা হবে, এটার প্ল্যান প্রায় শেষ।’

কমেছে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার

চলতি বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে (জানুয়ারি থেকে মার্চ) মন্ত্রিসভায় নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে এ হার ছিল ৬৮ দশমিক ২৫ শতাংশ। এবার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হার ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ কমেছে।

মন্ত্রিসভা বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে ২০১৯ সালের প্রথম ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘গত ৭ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত পাঁচটি মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়। এতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ৩৬টি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে ২৪টি। ১২টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ।’

অপরদিকে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সাতটি মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়েছে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, ‘ওই সময়ে সিদ্ধান্ত হয় ৬৩টি। এরমধ্যে ৪৩টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন ছিল ২০টি। বাস্তবায়নের হার ছিল ৬৮ দশমিক ২৫ শতাংশ।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, গত ৭ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত মন্ত্রিসভা বৈঠকে দুটি নীতি বা কর্মকৌশল এবং একটি চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) অনুমোদিত হয়েছে। এ সময়ে সংসদে আইন পাস হয়েছে পাঁচটি।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031