বাংলাদেশের লিটন যদি সেঞ্চুরি পেতেন আর মুশফিকের মতো যদি তামিমও পাঁচ হাজারি রানের ক্লাবে নাম লেখাতে পারতেন তা হলে অনেক প্রাপ্তির একটি দিন হতো। যা হয়নি তা এখন অতীত। তবে এখন ইংল্যান্ডের জ্যাক হবস, অস্ট্রেলিয়ার ডন ব্র্যাডম্যান, ওয়েস্ট ইন্ডিজের গ্যারি সোবার্স, ভারতের সুনীল গাভাস্কার, পাকিস্তানের জহির আব্বাস, নিউজিল্যান্ডের জন রাইট, শ্রীলংকার অরবিন্দ ডি সিলভা ও দক্ষিণ আফ্রিকার
গ্যারি কারস্টেনের মতো নিজ দেশের হয়ে টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম পাঁচ হাজার রান সংগ্রহের রেকর্ড গড়া ব্যাটসম্যানের নাম হলো মুশফিক। বিশ্ব টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ৯৯তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৫ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করলেন এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। টেস্ট ক্রিকেটে দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ২৭ রান এখন তার।
তামিম ইকবালের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সেঞ্চুরির ইনিংস খেলে এই কীর্তি গড়লেন মুশফিক। আগের দিন ১৩৩ রানের ইনিংস খেলার পর স্বেচ্ছায় মাঠ থেকে উঠে গিয়েছিলেন তামিম। গতকাল আবারও ব্যাট হাতে নামলেও মুশফিকের সঙ্গে পাঁচ হাজার রানের ক্লাবে প্রবেশ করতে পারলেন না এই ওপেনার। টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরির পথ ধরে হাঁটতে থাকা লিটন ৮৮ রানে থেমে গেছেন। এই দুই ব্যাটসম্যানের দুই কীর্তি গড়তে না পারার আক্ষেপের দিন স্বস্তি ফিরেছে মুশফিকের। তাকে স্বস্তি দিচ্ছে ১০৫ রানের ধীরগতির ইনিংসটি। টানা ৯ ইনিংসে তার ব্যাটে মাত্র একটি ফিফটি। এমন দুঃসময়েই দারুণ একটি সেঞ্চুরির ইনিংস উপহার দিয়ে রানে ফিরেছেন এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান।
তার এই সেঞ্চুরির সুবাদেই প্রথম ইনিংসে ৬৮ রানের লিড পেয়েছে বাংলাদেশ। শ্রীলংকার ৩৯৭ রান টপকে ৪৬৫-তে গিয়ে থামে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে চতুর্থ দিনশেষে ২ উইকেট হারিয়ে শ্রীলংকার স্কোর বোর্ডে জমা পড়ে ৩৯ রান। ২৯ রানে পিছিয়ে থাকে লংকানরা। গতকাল শেষ বিকালে বাংলাদেশের দুই উইকেট শিকার করলেও উইকেটের গতি-প্রকৃতি বিবেচনায় ম্যাচটি ড্রয়ের দিকেই যাচ্ছে। তবে বাংলাদেশের বোলাররা যদি শ্রীলংকার ব্যাটিংয়ে ধস নামাতে পারেন তা হলে শেষ দিনের রোমাঞ্চ হিসেবে ম্যাচের ফল আসতে পারে।
শত রানের উদ্বোধনী জুটির পর পঞ্চম উইকেটে ১৬৪ রানের লম্বা জুটি গড়েছেন মুশফিক-লিটন। দিনের প্রথম সেশনে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬৭ রান তোলেন তারা। দুজনই ব্যক্তিগত রান আশির কোঠা পেরিয়ে যান। কিন্তু লাঞ্চ বিরতি থেকে আসার পর পরই লিটনের সেঞ্চুরি স্বপ্ন ভেঙে দেন কাসুন রাজিথা। তামিম এসেও এই লংকান ডানহাতি মিডিয়াম পেসারের বলে উইকেট দেন। রাজিথা পর পর বলে এই দুই উইকেট শিকার করার পর সাকিবের সঙ্গে জুটি বাঁধেন মুশফিক। ৩৬ রানের জুটি না হতেই সাকিবও ফার্নান্দোর বলে উইকেট হারান। ৪৪ বলে ২৬ রান করেন তিনি। তবে ব্যাটিংয়ে নৈপুণ্য দেখিয়ে যান মুশফিক। প্রচ- গরমের মধ্যে ব্যাটিং করে চা বিরতির আগেই সেঞ্চুরি তুলে নেন দেশের অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। ফার্নান্দোর বলে ফাইন লেগে চার মেরে তিন অঙ্কে পৌঁছে যান। ২৭০ বল খেলে মাত্র চারটি চারের সাহায্যে এই ম্যাজিক ফিগারের দেখা পান তিনি। ১৭ বছরের টেস্ট ক্রিকেটের ক্যারিয়ারে তার অষ্টম সেঞ্চুরি এটি।
এর আগে সবশেষে ২০২০ সালে ফেব্রুয়ারিতে মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০৩* রানের ইনিংস খেলেছিলেন। তার তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি ও পাঁচটি সেঞ্চুরি রয়েছে। এ ছাড়া ২৫টি ফিফটির ইনিংস খেলেছেন তিনি। সেঞ্চুরির পর বেশিক্ষণ উইকেট ঠিকতে পারেননি। মুশফিক আউট হওয়ার পর তাইজুলের ২০ রানের সুবাদে সাড়ে চারশর বেশি রান করে বাংলাদেশ। তামিম-মুশফিকের সেঞ্চুরি, লিটন-মাহমুদুলের ফিফটিতে বাংলাদেশেরও স্বস্তি ফিরেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যর্থ সফরের পর ঘরের মাঠে প্রাণ ফিরেছে ব্যাটিংয়ের। ব্যাটিং-উইকেটে বিশ্ব ফার্নান্দোর কনকাশন সাব হিসেবে খেলতে নেমে বাজিমাত করেছেন লংকান পেসার রাজিথা। ২৪.১ ওভারে ৬০ রান দিয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট পান তিনি। আসিথা ফার্নান্দো তিনটি উইকেট শিকার করেন ।
