আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে কঠোর হয়েছে । গত দুদিন সড়কে যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচল বৃদ্ধি পাওয়াতে অাজ সকাল থেকে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা আরও ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেন। শহরের প্রতিটি প্রধান সড়কের মোড়ে মোড়ে পুলিশ ও র্যাবের চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি ও মানুষকে সর্তক করা হচ্ছে। থানা পুলিশ মাইকিং করে করে ঢাকাবাসীকে ঘরে থাকার অনুরোধ জানাচ্ছে। মাইকিং এর পরেও যারা বাইরে থাকবেন তাদেরকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তি দেয়া হবে বলে জানানো হচ্ছে। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও এলাকা ভিত্তিক টহল দিয়ে মানুষকে সচেতন করে তুলছে। এছাড়া ডিএমপির বিভিন্ন জোনে রিকশা চলাচল সীমিত করা হয়েছে। বিট পুলিশ অফিসাররা এলাকা ভিত্তিক রিকশার গ্যারেজ মালিকদের গ্যারেজ বন্ধ রাখার অনুরোধ করছেন। এতেকরে গতকাল রাত থেকে জন চলাচল ও যানবাহন, রিকশা চলাচল অনেকটা কমেছে।
সরজমিন আজ মতিঝিল, দৈনিক বাংলা, পল্টন, গুলিস্তান, শাহবাগ, কাকরাইল, মালিবাগ, মৌচাক, মগবাজার, বাংলামোটর, কাওরানবাজার, পান্থপথ, গ্রিনরোড, সায়েন্সল্যাবরেটরি, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, মোহাম্মদপুর, রামপুরা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে প্রতিটি মোড়ে মোড়ে পুলিশ সদস্যরা সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে কাজ করছেন।
বিশেষকরে রিকশা চলাচল বন্ধ করতে বেশি পুলিশের বেশি তৎপরতা
লক্ষ্য করা গেছে। বিভিন্ন এলাকায় রিকশা থেকে যাত্রী নামিয়ে পায়ে হাটিয়ে
যাত্রীদের গন্তব্য পাঠানো হয়। এছাড়া প্রাইভেট কার থামিয়ে বিভিন্ন
জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় পত্র দেখে অনেকের গাড়ি ছাড়ছে
পুলিশ। সায়েন্সল্যাবরেটরিতে পুলিশের তল্লাশি ও জেরার মুখে পড়েছেন ঢাকা
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একাধিক স্টাফ। করোনা ইস্যুতে ঢামেক পরিচালকের
অস্থায়ী পাস থাকা সত্বেও অনেক স্টাফ পুলিশি হয়রানির মুখোমুখি হয়েছেন বলে
অনেক স্টাফ অভিযোগ করেছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্যাথলজি
বিভাগের প্রধান ডা. আজিজ আহমেদ খান বলেন, আজ সকালে অফিসে আসার সময় আমার
গাড়িতে ঢামেকের স্টিকার থাকা সত্বেও পুলিশ আমার গাড়ি আটকে দিয়েছিলো। আমার
পরিচয় দেওয়ার পরও তারা আমার গাড়ি ছাড়ে নাই। পরে পরিচয় পত্র দেখানোর পর গাড়ি
ছেড়েছে। ঢামেকের জান্নাতুল আদিনা নামের আরেক স্টাফ বলেন, বাসা থেকে রিকশা
করে সায়েন্সল্যাবরেটরি আসার পর পুলিশ আমার রিকশা থামিয়ে দেয়। আমার সঙ্গে
পরিচয় পত্র ও গায়ে এপ্রোন ছিল তবুও তারা আমাকে আসতে দেয়নি। পরে
সায়েন্সল্যাবরেটরি থেকে হেটে হেটে হাসপাতালে এসেছি। শামসুউদ্দিন নামের আরেক
স্টাফ বলেন, আমার গাড়ি পুলিশ উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে সকালে। মেডিকেলের
স্টাফ বলেও কাজ হয় নাই।
এদিকে মঙ্গলবার থেকে ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশে
পুলিশ রিকশা নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেছে। ডিএমপির রমনা বিভাগের পুলিশ ওইদিন
থেকেই সড়কে রিকশা নামতে দিচ্ছেনা। যারা নিষেধ অমান্য করে রিকশা নিয়ে নামছে
এমন চালকদের রিকশা কয়েক ঘণ্টা আটকে রেখে শাস্তি দিচ্ছে। বুধবার বিকেলে
কাটাবন এলাকায় প্রায় ৫০টি রিকশা অাটক করে রেখেছিলো পুলিশ। আজকেও
শহরের বিভিন্ন স্থানে রিকশা চলাচলে বাধা দেয়া হয়েছে। নিউমার্কেট এলাকায়
রিকশা চালক মিরাজ বলেন, দুদিন ধরে পুলিশ রাস্তায় নামকে দিচ্ছে না। রাস্তায়
বের হলে রিকশা আটকে রেখে দেয়। কাটাবন এলাকার চালক জাফর বলেন, রাস্তায় বের
না হলে খামু কি। পুলিশেন চোখ ফাঁকি দিয়ে রিকশা চালাচ্ছি। তবে রাস্তায় এখন
খুব কম রিকশা।
ডিএমপির সবুজবাগ জোনের সহকারি পুলিশ কমিশনার রাশেদ হাসান
বলেন, মুলত সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতেই ডিএমপি কমিশনার রিকশা চলাচল বন্ধ
করতে আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ রিকশা দিয়ে মানুষ ব্যাপকভাবে চলাচল
করছে। এক রিকশায় একের পর এক লোক উঠছে। তাছাড়া রিকশা চলাচল করায় মানুষ ঘরে
থাকছে না। বিভিন্ন স্থানে রিকশা দিয়ে ঘুরাঘুরি করতেছে। এতে করে সামাজিক
দূরত্ব বজায় থাকছে না। আমরা মানুষকে ঘরে রাখার জন্য ব্যাপক তৎপরতা শুরু
করেছি। বিভিন্ন স্থানে টহল, চেকপোস্ট বসিয়ে মানুষকে ঘরে ফেরার অনুরোধ করছি।
আমরা মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌছে দিচ্ছি। তবুও মানুষ ঘরে থাকুক।
মতিঝিল
জোনের সহকারি কমিশনার জাহিদুল ইসলাম সোহাগ বলেন, আমার এলাকায় রিকশা
গ্যারেজ কম। আর মতিঝিল পল্টন থানা এলাকায় রিকশা চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে আমরা কঠোরভাবেই কাজ করছি।
ওদিকে করোনা
ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সেনাবাহিনী। সামাজিক দূরত্ব
বজায় রাখা এবং হোম কোয়ারেন্টাইনের বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী
সেনাবাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। গতকাল আইএসপিআরের তরফ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির
মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছিলো। বলা হয়েছিলো সামাজিক দূরত্ব বজায়
রাখা এবং হোম কোয়ারেন্টাইনের বিষয়ে সরকারি নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে
কঠোর ব্যবস্থা নেবে তারা। সেই মোতাবেক আজ দিনভর স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তার
অংশ হিসেবে দেশের সব স্থানে তাদের ব্যাপক তৎপরতা ছিল। ঢাকার বিভিন্ন
স্থানে সেনাবাহিনীকে টহল দিতে দেখা গেছে।বিভিন্ন স্থানে মানুষের জটলা সরাতে
কঠোর অবস্থান নিয়েছেন সেনা সদস্যরা। অনেক স্থানে আড্ডারত মানুষ
সেনাবাহিনীর টহল গাড়ি দেখেই দৌড়ে পালিয়ে গেছেন।
পান্থপথ এলাকার বাসিন্দা
জহিরুল হক বলেন, পান্থপথ মোড় ও আশেপাশে সবসময় মানুষের জটলা থাকে। উঠতি
বয়সী ছেলেরা আড্ডাবাজি করে খেলাধুলা করে। এছাড়াও বিভিন্ন বয়সী মানুষ
দলবেঁধে চলাচল করে। আজ সেনাবাহিনীর গাড়ি দেখে অনেকেই পালিয়েছে। বাংলামোটর
এলাকায় নুরুল হাসান নামের এক ব্যক্তি বলেন,আগের তুলনায় দুদিন ধরে যানবাহনের
চলাচল বেড়েছিল। আজকে থেকে আবার কম। ফকিরাপুল এলাকার বাসিন্দা রবিন হোসেন
বলেন, কাল থেকে র্যাব পুলিশের বেশ তৎপরতা বেড়েছে। আজকে সেনাবাহিনীর গাড়ি
দেখলাম। এভাবে যদি সবাই কাজ করে তবে হোম কোয়ারেন্টিন ও সামাজিক দূরত্ব বজায়
থাকবে।
