তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায় নিয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংবিধানের ৯৭ ধারা ব্যবহারের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে বিতর্কের জন্ম দেয়ায় বিতর্ক অবসানে স্বপ্রণোদিত হয়ে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ না করলে সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ভূমিকা রাখতে পারেন।’
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ নিয়ে সাম্প্রতিক আলোচনা-সমালোচনাসহ সরকারের অবস্থানের কথা তুলে ধরতে মন্ত্রণালয়ের নিজ দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এই রায় কোন সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করেনি উল্লেখ করে অপ্রাসঙ্গিক সকল পর্যবেক্ষণ প্রত্যাহারে রায় পুনর্বিবেচনাসহ সংসদে আলোচনার পর সরকার পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়ার কথা ভাবছে বলেও জানান তথ্যমন্ত্রী।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে পরিণতি কী হতে পারে, এ বিষয়ে চারটি বিকল্প উল্লেখ করেন তথ্যমন্ত্রী।
১. ‘আমরা পুঙ্খাণুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করছি, কীভাবে একে আইনি প্রক্রিয়ায় অপ্রাসঙ্গিক সকল পর্যবেক্ষণ প্রত্যাহারসহ রায় পুণর্বিবেচনা করা যায়।
২. ‘সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিও ভূমিকা রাখতে পারেন।’
৩. ‘সংসদ রায়ের ওপর আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারে।’
৪. ‘প্রধান বিচারপতি শপথ ভঙ্গ করেছেন কি না, তাও বিচার্য।’
রায় নিয়ে সরকারের প্রতিক্রিয়া নাই জানিয়ে পর্যবেক্ষণ নিয়ে আপত্তির কথা জানান তথ্যমন্ত্রী। বলেন, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে প্রধান বিচারপতি স্বপ্রণোদিত হয়ে পদত্যাগ করতে পারেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মাননীয় প্রধান বিচারপতি যেখানে নিজেই অনভিপ্রেত মন্তব্য দিয়ে বিতর্কের সূচনা করে জনমনে নিজেকে এবং বিচার বিভাগের ভাবমূর্তিকে একটি বিতর্কিত অবস্থানে নিয়ে গেছেন, এই ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তিনি নিজেই স্বত:প্রণোদিত হয়ে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্কের অবসান ও বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি অক্ষুণ রাখবেন কি না তাকে ভেবে দেখার আহ্বান জানাচ্ছি।’
কী আছে সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদে
অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগ সংক্রান্ত বিধান সম্পর্কে বলা হয়েছে এই অনুচ্ছেদে। সেখানে বলা হয়েছে- ‘প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য হইলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে প্রধান বিচারপতি তাঁহার দায়িত্বপালনে অসমর্থ বলিয়া রাষ্ট্রপতির নিকট সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইলে ক্ষেত্রমত অন্য কোন ব্যক্তি অনুরূপ পদে যোগদান না করা পর্যন্ত কিংবা প্রধান বিচারপতি স্বীয় কার্যভার পুনরায় গ্রহণ না করা পর্যন্ত আপীল বিভাগের অন্যান্য বিচারকের মধ্যে যিনি কর্মে প্রবীণতম, তিনি অনুরূপ কার্যভার পালন করিবেন।’
গত ৩ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। সংবিধানের এই সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদকে দেওয়া হয়েছিল। তবে ওই সংশোধনী বাতিলের ফলে সেই ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে ফিরে আসে। এই কাউন্সিলের প্রধান হিসেবে থাকবেন প্রধান বিচারপতি। গত ১ আগস্ট এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশিত হওয়ার পর এর পর্যবেক্ষণ অংশ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এই পর্যবেক্ষণে সংসদ এবং বঙ্গবন্ধুকে অবমাননার অভিযোগ এনে প্রতিবাদে মুখর আওয়ামী লীগ।
