হাইকোর্ট নির্যাতন ও গণহত্যার মুখে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়া এক রোহিঙ্গা তরুণীকে বিয়ে করার ঘটনায় একজনকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে । আগামী ৩০ দিনের মধ্যে এ টাকা আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

সোমবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ একটি রিট আবেদনের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। রোহিঙ্গা নারীকে বিয়ে না করতে সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে পুলিশি হয়রানি থেকে বাঁচতে এবং ওই প্রজ্ঞাপন বাতিল চেয়ে হাইকের্টে রিট আবেদনটি করেছিলেন বর মানিকগঞ্জের সিংগাইরের চারিগ্রামের শোয়াইব হোসেন জুয়েলের বাবা বাবুল হোসেন। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন এবিএম হামিদুল মিসবাহ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।

আদালত আবেদনটি  খারিজ ও আবেদনকারীকে জরিমানা করলেও বর-কনের বিষয়ে আলাদা করে কিছু বলেননি। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোতাহার হোসেন সাজু ঢাকাটাইমসকে জানান, যেহেতু বিয়েটির নিবন্ধন হয়নি তাই এটি অবৈধ। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করতে পারবে।

মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, আইন অনুসারে বিদেশিরা নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে যেতে পারে না। এছাড়া রোহিঙ্গা নারীদের বিয়ে না করতে আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। কিন্ত এখানে আবেদনকারীরা দুটি অপরাধ করেছেন। ওই মেয়েকে নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে নিয়ে আসা হয়েছে। আবার বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হাইকোর্টে রিটও করেছে। এ কারণে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই টাকা ৩০ দিনের মধ্যে না দিলে ছেলের বাবা বাবুল হোসেনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, মানিকগঞ্জের সিংগাইরের চারিগ্রামের বাবুল হোসেনের ছেলে শোয়াইব হোসেন জুয়েল গত বছরের সেপ্টেম্বরে টেকনাফের কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে অবস্থানরত রাফিজাকে (১৮) বিয়ে করেন। এরপর থেকেই পুলিশ ওই দম্পতিকে খোঁজছে। পুলিশ যাতে তাদেরকে হয়রানি না করে এবং রোহিঙ্গা নারীকে বিয়ে না করতে সরকারের পক্ষ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে জুয়েলের পিতা বাবা বাবুল হোসেন হাইকোর্টে রিট করেন।

গত ২৫ অক্টোবর রোহিঙ্গা নাগরিকদের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কে না জড়ানোর জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নিকাহ রেজিস্ট্রারদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে তারা।

আইন ও বিচার বিভাগের বিচার শাখা ৭-এর সিনিয়র সহকারী সচিব জি এম নাজমুছ শাহাদাৎ স্বাক্ষরিত এ প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশি ছেলেদের সঙ্গে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা মেয়েদের বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার প্রবণতা লক্ষণীয় হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কতিপয় নিকাহ রেজিস্ট্রার এই অপতৎপরতায় লিপ্ত। এ কারণে বিশেষ এলাকা- কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি ও চট্টগ্রাম জেলায় বিয়ে নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বর-কনে উভয়ে বাংলাদেশি নাগরিক কি না তা নিশ্চিত হতে হবে। বর-কনের জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে বিয়ের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সব নিকাহ রেজিস্ট্রারকে নির্দেশনা প্রদান করা হলো।’

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, এ বিষয়ে গাফিলতি দেখা গেলে দায়ী নিকাহ রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সংশ্লিষ্ট জেলার রেজিস্ট্রারদের বিষয়টি তদারকির জন্য নির্দেশ দেয়া হলো।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031