স্ত্রী তাঁর মাদকসেবী স্বামীকে হত্যা করেছেনসীতাকুণ্ডে । গত বুধবার ভোর ৫টার দিকে উপজেলার ভাটিয়ারী ইউনিয়নের জাহানারাবাদ এলাকার নাছির কন্ট্রাক্টরের ভাড়া ঘরে এঘটনা ঘটে। স্বামীর নাম জাহাঙ্গীর আলম। তিনি লরি চালক। তাঁর স্ত্রী খতিজা বেগম গত বুধবার সারাদিন বিষয়টি চেপে রেখে রাত সাড়ে ১১টায় থানায় গিয়ে আকুতি জানান– ‘স্যার আমি স্বামীকে হত্যা করেছি, আমাকে এ্যারেস্ট করুন’।
থানা সূত্র জানায়, বুধবার রাত তখন সাড়ে ১১টা। সীতাকুণ্ড থানা এলাকায় মানুষের আনাগোনা নেই বললেই চলে। ওসিসহ কয়েকজন অফিসার থানায় বসে কাজ করছিলেন। এমন সময় দু’টি ছোট বাচ্চা নিয়ে ৩২ বছরের এক মহিলা থানায় হাজির হন। তিনি ডিউটি অফিসারকে বললেন– ওসি স্যার কোথায়, ডিউটি অফিসার তাঁকে ওসির রুমে নিয়ে গেলেন। এ সময় মহিলাটি বলেন– ‘স্যার আমি স্বামীকে হত্যা করেছি, আমাকে এ্যারেস্ট করুন’। মাদকসেবী স্বামী প্রতিদিন আমাকে মারধরসহ নানা নির্যাতন করতো, আমি সহ্য করতে না পেরে তাঁকে মেরে ফেলেছি। হত্যার পর লাশ তোষক দিয়ে প্যাঁচিয়ে খাটের নীচে ফেলে রেখেছি। আপনারা গেলে দেখতে পাবেন।
ওসি মহিলাকে থানায় বসিয়ে তার সব কথা শুনেন। রাত ৩টায় তাকে নিয়ে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন। ২০০০ সালে বিয়ে হয় ফেনীর দাগনভূঁইয়া থানার ভবানীপুর গ্রামের মুজিবুল হকের কন্যা খতিজা বেগমের সাথে জাহাঙ্গীরের। তারা সম্পর্কে খালাত ভাই বোন। বর্তমানে তাদের সংসারে শাহীন (১৩) ও সম্রাট (৩) নামে দু’টি পুত্র সন্তান রয়েছে। শাহীন স্থানীয় মাদামবিবিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। জাহাঙ্গীর কদমরসুলস্থ আবুল খায়ের স্টীল মিলের লরি চালক। গত সাত মাস থেকে মিলের পার্শ্ববর্তী জাহানারাবাদ এলাকার নাছির কন্ট্রাক্টরের বিল্ডিং–এ ৪র্থ তলায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন।
জানা যায়, বিয়ের পর কয়েক বছর খুব শান্তিতে চলছিলো তাদের সংসার। এরই মধ্যে লরি চালানোর সুবাদে চট্টগ্রামে চলে আসেন তারা। গাড়ি চালিয়ে বাসায় ফেরার সময় তিনি প্রতিদিন মাদক সেবন করতেন। অবুঝ শিশুদের সামনে খতিজাকে নির্যাতন করা হতো। ছেলেরা মাকে রক্ষার চেষ্টা করলে তারাও নির্যাতনের শিকার হত।
গত মঙ্গলবার রাতে মাদক সেবন করে জাহাঙ্গীর বাসায় ফিরে স্ত্রীর ওপর নির্যাতন শুরু করেন। রাত ৩টা পর্যন্ত চলে এই নির্যাতন। এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে জাহাঙ্গীর ঘুমিয়ে পড়লে বুধবার ভোর ৫টার দিকে খতিজা মরিচ বাটার পাথর দিয়ে আঘাত করে তাঁকে মেরে ফেলে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর লাশ তোষক দিয়ে প্যাঁচিয়ে খাটের নীচে রেখে ঘরে তালা লাগিয়ে শিশু দু’টিকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। বুধবার সারাদিন শিশুদের নিয়ে ঘোরাঘুরি করে রাতে সীতাকুণ্ড থানায় গিয়ে পুলিশকে ঘটনাটি জানান।
সীতাকুণ্ড থানার উপ–পরিদর্শক সুজয় কুমার মজুমদার আজাদীকে বলেন, বুধবার রাতে মহিলাটি থানায় এসে তার স্বামীকে হত্যা করেছে জানালে পুলিশ তাদের বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় স্ত্রী খতিজা বেগমকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে ।
এ বিষয়ে সীতাকুণ্ড মডেল থানার ওসি ইফতেখার হাসান আজাদীকে বলেন, স্বামী হত্যার ঘটনায় স্ত্রীর বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। আসামিকে কোর্টের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
