খোশগল্পে দুই ট্রাফিক সার্জেন্ট নগরীর আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড়ের আখতারুজ্জামান সেন্টারের সাথে লাগোয়া ‘বাস থামিবে না’ সাইনের সামনেই। এসময় তাদের সামনেই ১০নং রুটের মেট্রোলিংক নামের ‘চট্টমেট্রো-জ-১১-১০৯৪’ এবং ৬নং রুটের ‘চট্টমেট্রো-জ-১১-১৯৯২’ নম্বরের বাস দুটি যাত্রী উঠানামা করছে। এভাবে প্রতিনিয়তই সি-বিচগামী ১০নং এবং ৬নং রুটের বাসগুলো যাত্রী উঠানামা করে থাকে। অথচ ৫০ গজ সামনেই ‘বাস থামিবে’ সাইনের সামনে থামছে না কোনো বাস। একই চিত্র বিসিক ভবনের সামনেও। সাগরিকা থেকে আসা ৭নং রুটের লুসাই পরিবহনের বাস ‘চট্টমেট্রো-জ-১১-১৮১৯’ বামদিকে চলাচলের একমাত্র লেনটি পুরোটাই দখল করে যাত্রী উঠাচ্ছে। যে কারণে পেছনের গাড়িগুলোকে প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়েছে দীর্ঘক্ষণ। সামনেই ১০নং রুটের ‘চট্টমেট্রো-ছ-১১-১৮৩৬’ হিউম্যান হলারটি দাঁড়িয়ে থাকলেও কোন জবাবদিহিতা নেই। একইভাবে নগরীর কালুরঘাট, নতুন ব্রিজ, নিউমার্কেট, লালদীঘিগামী বাসগুলোও ট্রাফিক সার্জেন্টের সামনে সড়কের মধ্যখানে কিংবা ‘বাস থামিবে না’ সাইনের সামনে দাঁড়িয়েই যাত্রী উঠানামা করছে। ওই স্পটে দায়িত্ব পালন করা এক কনস্টেবল হাতে থাকা প্লাস্টিকে মোড়ানো লাঠি দিয়ে দুয়েকটি গাড়িতে আঘাত করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিলেও বাসের চালক হেলপারদের যেন দেখেও না দেখার ভান ধরার অবস্থা।
নগর পরিবহনের শৃংখলা ফেরানোর জন্য নানা পদক্ষেপ নেয় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ। আবার বিগত সময়ে বিআরটিএ’র অভিযানের মুখে নির্ধারিত গন্তব্যে ও রুটে গাড়ি চলাচলে বাধ্য হয় গণপরিবহনগুলো। আবার নভেম্বর মাসের শেষের দিকে নগরীর ২নং গেট থেকে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত প্রত্যেকটি মোড়ে সিগন্যাল বাতির ব্যবহার শুরু করেছে সিএমপি।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে নগরীর বেশ কয়েকটি মোড়ে দেখা যায়, গণপরিবহনের পাশাপাশি সব ধরণের মোটরযান সিগন্যাল বাতির নির্দেশনা মেনে চলছে। এতে ব্যস্ত মোড়গুলোতে যানজটের ভোগান্তি অনেক কমেছে। তবে যত্রতত্র ও ব্যস্ত মোড়গুলোতে প্রতিযোগিতা দিয়ে যাত্রী উঠানামার জন্য সড়কের মধ্যখানে আড়াআড়ি করে গাড়ি রাখার প্রবণতা মোটেও কমেনি। বিশেষ করে নগরীতে নির্ধারিত স্থানে যাত্রী উঠানামার জন্য সিএমপির নির্দেশনা একেবারেই কার্যকর হচ্ছে না বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
নগরীর ২নং গেটে দুপুর ২টা ৩৫মিনিটে ফ্রি-পোর্টগামী চট্টমেট্রো-ছ-১১-০৫৭১ নম্বরের রাফসান ট্রান্সপোর্ট নামের হিউম্যান হলারটি একেবারে মাঝপথে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানামা করেছে। ২টা ৪০ মিনিটে জিইসি মোড়ে সেন্ট্রাল প্লাজার সামনে ‘বাস থামিবে না’ নির্দেশিকার সামনেই রাস্তায় আড়াআড়ি দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠাচ্ছে ‘চট্টমেট্রো-জ-১১-১৭৫৯’ নম্বরের বাসটি। ২টা ৫০ মিনিটে টাইগাস মোড় পেরিয়ে ওভারপাসের মুখে ‘বাস থামিবে না’ নির্দেশনা সম্বলিত সাইনবোর্ডের সাথেই আগ্রাবাদগামী ১০নং রুটের চট্টমেট্রো-জ-১১-১৭০৮, ৬নং রুটের চট্টমেট্রো-জ-১১-২১২২, ৭নং রুটের চট্টমেট্রো-জ-১১-১৯২০ নম্বরের বাসগুলো পাশাপাশি দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছে। এতে পেছন থেকে আসা গাড়িগুলো গতিরোধের সম্মুখীন হচ্ছে। অথচ নগরীর সবচেয়ে ব্যস্ততম স্পটগুলোর মধ্যে টাইগারপাস অন্যতম। একইভাবে নগরীর কাপ্তাই রাস্তার মাথা, সিএন্ডবি, বহদ্দারহাট মোড়, মুরাদপুর, ষোলশহর রেলস্টেশন, ওয়াসা, লালখান বাজার, নিউমার্কেট, কোতোয়ালী মোড়, লালদীঘি মোড়, টেরিবাজারের মুখ, আন্দরকিল্লা মোড়, অঙিজেন মোড়, ইপিজেড মোড়, কাস্টমস মোড়, তিন নং গেট, বারিকবিল্ডিং মোড়ে সড়কের মধ্যখানেও আড়াআড়ি দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানামা করে বাস এবং হিউম্যান হলারগুলো।
এদিকে নতুন কার্যকর হওয়া ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ মোতাবেক নির্দেশনা না মেনে যাত্রী উঠানামা করলে জরিমানার বিধান রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, ট্রাফিক বিভাগের অমনোযোগের কারণে নতুন আইনে জরিমানার বিধান থাকা সত্ত্বেও গণপরিবহনগুলোতে যেখানে সেখানে যাত্রী উঠানামা বন্ধ হচ্ছে না। নতুন আইনে মোটরযান পার্কিং এবং যাত্রী বা পণ্য উঠানামার নির্ধারিত স্থান ব্যবহারের ক্ষেত্রে যদি কোনো ব্যক্তি আইনের ধারা ৪৭ এর বিধান লংঘন করলে অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসেবে দোষসূচক এক পয়েন্ট কর্তন হবে।
নগরীর টাইগার পাস মোড়ে কথা হয় আলী হোসেন নামের এক যাত্রীর সাথে। তিনি বলেন, ‘বাস থামিবে’ লেখা স্থানে কোন বাসই দাঁড়ায় না। যে কারণে বাধ্য হয়ে মোড়ে এসে বাসে উঠতে হয়। সবসময় একই বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। অথচ প্রত্যেক মোড়ে মোড়ে অনেক ট্রাফিক পুলিশ রয়েছে।
বাদামতলী মোড়ে বহদ্দারহাটগামী যাত্রী সোহেল আজাদ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার এমনিতে দপুরের পর থেকে এখানে গণপরিবহনের সংকট তৈরি হয়। আবার যাত্রী কম থাকলেও বাসগুলো মোড়ে দাঁড়িয়ে যাত্রী নিয়ে নেয়। এতে ‘বাস থামিবে’ লেখা স্থানে দাঁড়ালে বাসে সিট পাওয়া যায় না। ওইসব স্থানে কাউন্টার সার্ভিসের বাসগুলো নির্ধারিত স্থান থেকেই যাত্রী উঠানামা করছে। অথচ লোকাল বাসগুলো নির্দেশনাগুলো মানছে না। ট্রাফিক পুলিশের অবহেলার কারণেও বাসগুলো নির্ধারিত স্থানে যাত্রী উঠানামায় আগ্রহী হচ্ছে না।’
যাত্রী উঠানামার ক্ষেত্রে সিএমপির নির্দেশনা কার্যকর সম্ভব হয়নি স্বীকার করে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) এস এম মোস্তাক আহমেদ খান বলেন, ‘আমরা গণপরিবহনের চালক-হেলপারদের মোটিভেট করার চেষ্টা করছি, তারা যাতে নির্ধারিত স্থানে যাত্রী উঠানামা করেন।’ তিনি বলেন, আগে বাসগুলো নির্ধারিত গন্তব্যে ও রুটে যেতো না। এখন তারা যাচ্ছে, এই বিষয়টি ইতিবাচক। সিএমপি’র নির্দেশিত স্থানে যাত্রী উঠানামার বিষয়টি কার্যকর করতে আগামী সপ্তাহ থেকে মামলাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
| M | T | W | T | F | S | S |
|---|---|---|---|---|---|---|
| 1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 |
| 8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 |
| 15 | 16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 |
| 22 | 23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 |
| 29 | 30 | 31 | ||||
