সবকিছু মিলিয়ে বাজারে গিয়ে দিশেহারা মধ্যবিত্ত ও স্বল্পআয়ের মানুষ। পেঁয়াজের দাম তো বাড়তি ছিলোই। সাথে যোগ হয়েছে কাঁচামরিচ। যা এ সপ্তাহে বেড়ে ৩০০ টাকা ছুঁয়েছে। সেইসঙ্গে অনেক সবজির কেজি ১০০ টাকার ঘরে। নতুন করে বেড়েছে আলু ও ডিমের দাম।

চড়া দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরেই। এরমধ্যে ৫-৬টি সবজির কেজি ১০০ টাকা। বাকি সবজির বেশিরভাগের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকার কাছাকাছি। কাঁচা মরিচ ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা পর্যন্ত কেজি বিক্রি হচ্ছে।

শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে আলুর দাম। কাঁচা মরিচের দাম উঠেছে ১৮০ টাকা পর্যন্ত। ডিমের দাম ডজনে বেড়েছে ৫ টাকা।

খুচরা ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া আলুর দাম বেড়ে হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। ১১০ থেকে ১১৫ টাকা ডজন বিক্রি হওয়া ডিমের দাম বেড়ে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর ৪০ থেকে ৫০ টাকা পোয়া (২৫০) বিক্রি হওয়া কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। অর্থাৎ কেজিতে কাঁচা মরিচের দাম ১২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

এদিকে শিম, পাকা টমেটো, গাজর, বেগুন, বরবটির সঙ্গে নতুন করে ১০০ টাকা কেজির তালিকায় নাম লিখিয়েছে করলা। এর মধ্যে পাকা টমেটো গত কয়েক মাসের মতো এখনো ১২০ থেকে ১৪০ টাকা এবং গাজর ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের মতো শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। আর উস্তের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে। বরবটির কেজি গত সপ্তাহের মতো বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা। বেগুনও গত সপ্তাহের মতো ৮০ থেকে ১১০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

শুধু এই ছয় সবজি নয়, বাজারে অন্য সবজিগুলোও স্বস্তি দিচ্ছে না। পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। লাউয়ের পিস বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। এক হালি কাঁচকলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ঝিঙা, কাঁকরোল, ধুন্দুলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা।

বাজারে নতুন আসা ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। ৫০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে মুলা ও পেঁপে। এর মধ্যে মুলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। পেঁপের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা।

 

এদিকে গত মাসে ভারত রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয়ার পর থেকে শুরু হওয়া পেঁয়াজের বাজার এখনো অস্থির। দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। আমদানি করা বড় আকারের ভারতীয় পেঁয়াজের কেজির জন্যেও গুনতে হচ্ছে ৮০ টাকা।

নিত্যপণ্যের দামের এ ঊর্ধগতি নিয়ে কথা হয় কারওয়ানাবাজারে আসা রফিক আজাদের সাথে। হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, বাজারে এসে দিশেহারা হয়ে পড়ি। সবকিছুর দাম অস্বাভাবিক। ১০০ টাকার সবজি দিয়ে এক বেলাও হয় না। সবজির এতো দাম আমার ৫০ বছরের জীবনে আর দেখিনি।

সাব্বির আহমেদ নামের আরেক ক্রেতা বলেন, অনেক দিন ধরেই সবজির দাম চড়া। এর মধ্যেই তেল, চিনি, আলু, পেঁয়াজ, ডিমের দাম বেড়ে গেল। আগে কখনো পুরাতন আলুর কেজি ৪০ টাকা কিনে খাইনি। এখন পুরাতন আলুর কেজি ৪৫ টাকা কিনে খেতে হচ্ছে। এক পোয়া কাঁচা মরিচ কিনতে হচ্ছে ৭০ টাকা দিয়ে। ৫০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। সবকিছুর দাম এমন হলে আমরা চলবো কীভাবে?

ফার্মগেটের বাসিন্দা আল-আমিন বলেন, বাজারে গেলেই শুনি কোনো না কোনো পণ্যের দাম বেড়েছে। একের পর একটা জিনিসের দাম বেড়েই চলেছে। কিন্তু আমাদের আয় বাড়ার বদলে উল্টো কমেছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে আমাদের পক্ষে টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে।

কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী রাশেদ মিয়া বলেন, বাজারে আগের তুলনায় শিম, গাজরের সরবরাহ বেড়েছে। কিন্তু অন্যান্য সবজির সরবরাহ তুলনামূলক কম। এ কারণে শীতের আগাম সবজি আসার পরও দাম কমছে না। তাছাড়া বিভিন্ন স্থানে বন্যার কারণে সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে চাহিদার তুলনায় যোগান কম। এসব কারণেই সবজির দাম ক্রমেই বাড়ছে বলে জানান তিনি।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031