দুর্নীতি দমন কমিশন ( দুদক ) রাজধানীতে কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত শতাধিক শিক্ষকের তালিকা তৈরি করেছে । দুদকের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের বিশেষ টিম অনুসন্ধান চালিয়ে ঢাকা মহানগরীর আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষকের বিরুদ্ধে অবৈধ কোচিংয়ের তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে। এই আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া নগরীর আরো বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোচিং বাণিজ্যে জড়িত শিক্ষকদের একটি তালিকা তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। সূত্র জানায়, দুদক টিমের নজরদারিতে রয়েছে মহানগরীর ২১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই ২১টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নামের তালিকা সংগ্রহ করেছে টিম। প্রথম ধাপে আট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষককে চিহ্নিত করা হয়েছে। অভিযুক্ত স্কুলের শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন (গণিত), মুহাম্মদ আফজালুর রহমান (ইংরেজি), মো. ইমরান আলী (ইংরেজি), সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ কবীর চৌধুরী, সহকারী শিক্ষক আবুল হোসেন মিয়া (ভৌতবিজ্ঞান), মো. মোখতার আলম, (ইংরেজি), মো. মাইনুল হাসান ভূঁইয়া (গণিত), এ বি এম ছাইফুদ্দীন ইয়াহ, মো. মিজানুর রহমান, মো. আবুল কালাম আজাদ, মো. জহিরুল ইসলাম ও সহকারী শিক্ষক মো. জামাল উদ্দিন বেপারী। মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মো. সাইফুর রহমান (গণিত), মো. শাহ আলম (ইংরেজি), সহকারী শিক্ষিক নূরুন্নাহার সিদ্দিকা (সামাজিক বিজ্ঞান), সহকারী শিক্ষক শাহ মোসা. নাছিমা আক্তার (ভূগোল)। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক কামরুন্নাহার চৌধুরী (ইংলিশ ভার্সন), সহকারী শিক্ষক ড. ফারহানা (পদার্থ বিজ্ঞান), সুরাইয়া নাসরিন (ইংরেজি), লক্ষ্মী রানী, ফেরদৌসী ও নুশরাত জাহান। মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সহকারী শিক্ষক যোবায়ের মাহমুদ (গণিত), মো. নুরুদ্দিন (গণিত), মো. মেহেদী হাসান (গণিত), শহীদুল ইসলাম (ইংরেজি), তুহিনুর রহমান (রসায়ন), ফেরদৌস হাসান (ইংরেজি), শামসুন্নাহার (বাংলা), মো. মাছুদ আলম, (ইংরেজি), সহকারী শিক্ষক মো. দেলোয়ার হোসেন (ইংরেজি), মো. মোখলেছুর রহমান (গণিত), মো. নূরুজ্জামান (রসায়ন), মো. সাইফুল্লাহ (ইংরেজি), তাজুল ইসলাম (বাংলা) ও সহীদুর রহমান বিশ্বাস (ইংরেজি)। মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক মোহনলাল ঢালী, মো. কবীর আহমেদ, হাসান মঞ্জুর হিলালী, সিনিয়র শিক্ষক প্রদীপ কুমার বসাক, আবুল খায়ের, শারমীন খানম, দায়িত্বপ্রাপ্ত শাখা প্রধান মো. দেলোয়ার হোসেন, সহকারী শিক্ষক মাওলানা কামরুল হাসান, মো. রুহুল আমিন-২, মো. কামরুজ্জামান, আমান উল্লাহ আমান, মো. সাইফুল ইসলাম, স্কুল শাখার ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক এনামুল হক, সিনিয়র শিক্ষক মেজবাহুল ইসলাম (ইংরেজি), সুবীর কুমার সাহা (গণিত), বাসুদেব সমদ্দার, বকুল বেগম, আসাদ হোসেন (ইংরেজি), খ. ম. কবির আহমেদ, শেখ শহীদুল ইসলাম, শুকদেব ঢালী, হামিদুল হক খান, রমেশ চন্দ্র বিশ্বাস ও চন্দন রায়। আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক নিজাম উদ্দিন কামাল (ইংরেজি), আবদুল মান্নান (রসায়ন), উম্মে ফাতিমা (বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিভাগ), লাভলী আখতার, তাসমিন নাহার, মতিনুর (ইংরেজি), উম্মে সালমা (ইংরেজি বিভাগ, ইংলিশ ভার্সন) মো. আবদুল জলিল (ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ), মনিরা জাহান (ইংরেজি), ফামিদা খানম পরী (গণিত), লুৎফুন্‌ নাহার (গণিত), হামিদা বেগম সহকারী শিক্ষিকা (গণিত), নাজনীন আক্তার (গণিত), সহকারী শিক্ষক আশরাফুল আলম (রসায়ন), সুবাস চন্দ্র পোদ্দার (রসায়ন), মোহাম্মদ ফখরুদ্দীন (রসায়ন), উম্মে সালমা (২) (ইংরেজি), তৌহিদুল ইসলাম (ইংরেজি), সুরাইয়া জান্নাত (ইংরেজি), মো. সফিকুর রহমান-৩ (গণিত ও বিজ্ঞান), মো. শফিকুর রহমান সোহাগ (গণিত ও বিজ্ঞান)। এ ছাড়া সহকারী শিক্ষক নুরুল আমিন (গণিত), মনিরুল ইসলাম (ইংরেজি), রফিকুল ইসলাম (সমাজবিজ্ঞান), গোলাম মোস্তফা (গণিত), মো. অহিদুজ্জামান (বাংলা বিভাগ), মো. শফিকুল ইসলাম (ইংরেজি), মো. মাহবুবুর রহান (পদার্থ বিজ্ঞান), মো. মোয়াজ্জেম হোসেন (গণিত), মাকসুদা বেগম মালা, আলী নেওয়াজ আলম করিম, মো. আবুল কালাম আজাদ, মো. আবদুর রব। গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের মোহাম্মদ ইসলাম (গণিত), সহকারী শিক্ষক মো. শাহজাহান (গণিত), মো. আবদুল ওয়াদুদ খান (সামাজিক বিজ্ঞান), মো. আলতাফ হোসেন খান (ইংরেজি), মো. আযাদ রহমান (ইংরেজি) ও রণজিৎ কুমার শীল (গণিত)। খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. নাছির উদ্দিন চৌধুরী। দুদক সূত্র বলছে, অবৈধভাবে কোচিং বাণিজ্যে জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযানের জন্য দুদকের বিভাগীয় কর্মকর্তা উপ পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে প্রধান করে ছয় সদস্য বিশিষ্ট একটি টিম গঠন করা হয়। টিমের অন্য সদস্যরা হলেন, সহকারী পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. আবদুল ওয়াদুদ, মনিরুল ইসলাম, ফজলুল বারী ও উপ সহকারী পরিচালক আতাউর রহমান। টিমের সদস্যরা মহানগরীর মতিঝিল এজিবি কলোনি, শাহজাহানপুর, সিদ্ধেশ্বরীসহ বিভিন্ন এলাকার কোচিং সেন্টারগুলোয় ঝটিকা অভিযান চালিয়ে কোচিং পরিচালনারত অবস্থায় বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের পায়। দুদক কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা লঙ্ঘন করে কোচিং করানোর কথা স্বীকার করে। অভিযান চালিয়ে এবং প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক এই তালিকা করেছে। অভিযুক্ত এসব শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে বিভাগীয় অফিসের তদন্ত টিমের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। জানা যায়, টিমের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রেখে ২০১২ সালের ২০শে জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কোচিং বাণিজ্য বন্ধে নীতিমালা প্রণয়ন করা হলেও অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয় থেকে কোনো আইন পাস করা হয়নি। সুনির্দিষ্ট আইনের আলোকে শাস্তির বিধান না থাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করা দুরুহ হবে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, মহানগরীর নামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অসংখ্য শিক্ষকের বিরুদ্ধে অবৈধ কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলেও ওই সব প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি কর্তৃক তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031