এক লাখ ৩৩ হাজার জনকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে তাদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে বাংলাদেশে বর্ষা মৌসুমে কক্সবাজারের বিভিন্ন শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ।

সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, তাদের কুতুপালং শিবিরের পাশেই নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিতে দুই মাসের মতো সময় লেগে যাবে। আর বর্ষা মৌসুমের পরে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাষানচরে সরিয়ে নেয়া হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বর্ষ মৌসুমে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, পাহাড়ি ধস বা পাহাড়ি ঢলের আশংকা থেকে কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে থাকা রোহিঙ্গাদের সকলেই ঝুঁকির মধ্যে আছে।

মায়ানমার থেকে পালিয়ে এসে লাখ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়ায় এবং টেকনাফে আশ্রয় নেয়ায় বন ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন। এর ফলে বর্ষা মৌসুমে সেখানে পাহাড় ধস বা পাহাড়ি ঢলের আশংকার কথাও বলা হচ্ছে।

সেই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সরকার এবং ইউএনএইচসিআরসহ আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো একটি জরিপ চালিয়ে ঝুঁকির মধ্যে থাকা রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করেছে।

ত্রাণ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামাল বলছিলেন, ঝুঁকির মধ্যে থাকা রোহিঙ্গাদের শিবিরের কাছেই নিরাপদ এলাকায় সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।

‘আমাদের জরিপে দেখা গেছে, ফ্ল্যাশ ফ্লাডের জন্য এক ধরণের ঝুঁকি আছে। তারপরে বন্যা, পাহাড় ধস এবং ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকি আছে। এসব মিলিয়ে এক লাখ ৩৩ হাজার রোহিঙ্গা ঝুঁকির মধ্যে আছে।তাদের জন্য ৩২,০০০ শেল্টার তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৫০০০ শেল্টারে লোক সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বাকিদের সরিয়ে নিতে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।’

তিনি আরও জানিয়েছেন, ঝুঁকির মধ্যে থাকা এই রোহিঙ্গাদের আপাতত নেয়া হচ্ছে কুতুপালং শিবিরের পাশে নতুন ১২৩ একর জমিতে।

বর্ষায় পাহাড়ি ঢল বা কোন বিপর্যয় হলে কি ব্যবস্থা নিতে হবে, সে ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার, সেনাবাহিনী এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের নিয়ে কয়েকদিন ধরে মহড়ার ব্যবস্থাও করেছে।

শনিবার এই মহড়ার উদ্বোধন করার পাশাপাশি মো. শাহ কামালসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রোহিঙ্গা শিবিরের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছেন।

কক্সবাজারে জাগ্রত নারী উন্নয়ন নামের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা রোহিঙ্গা নারীদের নিয়ে কাজ করছে। এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিউলি শর্মা বলছিলেন, এবার এখনই অনেক বৃষ্টি হচ্ছে।ফলে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে বিলম্ব করা হয়েছে ।

একই সাথে তিনি বলেছেন, শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের সকলেই ঝুঁকির মধ্যে আছে বলে তিনি মনে করেন।

তবে ব্যবস্থা নিতে বিলম্ব হয়নি বলে দাবি করেছেন সচিব মো. শাহ কামাল। তিনি বলেছেন, এখন বর্ষা মৌসুম সামাল দেয়ার পর ভাষানচরে এক লাখ রোহিঙ্গাকে নেয়া হবে। সেখানে ১৫০০ একর জমির উপর নৌবাহিনী রোহিঙ্গাদের থাকার মতো সব ব্যবস্থা করছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

এদিকে, কক্সবাজার প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সীমান্তে শূন্য রেখায় থাকা রোহিঙ্গাদের সেখান থেকে সরে যাওয়ার জন্য মায়ানমারর বাহিনী আবারও মাইকিং করেছে, এনিয়ে সেখানে রোহিঙ্গাদের মাঝে নতুন করে ভীতি তৈরি হয়েছে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031