‘শাণিত’ অভিযান চলেছে কর্ণফুলী নদীর তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দ্বিতীয় দিনে । গতকাল মঙ্গলবার বড় স্থাপনায় উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে জেলা প্রশাসন। নেতৃত্বে ছিলেন উচ্ছেদ অভিযানের সমন্বয়কারী পতেঙ্গা সার্কেলের সহকারী কমিশনার তাহমিলুর রহমান ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম। অভিযানকালে আদম ঘাট ও লবণ মিল এলাকা থেকে ৩০টি ছোট-বড় পাকা স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে একটি উপ-খালের প্রবেশমুখ। এ খাল এলাকার আশপাশে ৭০টির মতো ছোট স্থাপনা উচ্ছেদ করে অভিযানদল। দ্বিতীয় দিনের অভিযান সম্পর্কে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান দিনকে দিন শাণিত হবে। গর্জনের মতো সমান বর্ষণও হবে। অবৈধ দখলদারদের কোনো ছাড় নয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গতকাল বড় গুদাম ও লবণ মিল এলাকার বড় স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। সকাল থেকে অভিযান পরিচালনার পর বিকালে দ্বিতীয় দিনের মতো অভিযান শেষ হয়।
তাহমিলুর রহমান জানান, অভিযানে ত্রিশটির মতো পাকা স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। উচ্ছেদ করা স্থাপনার মধ্যে সার, চাল, চিনি, লবণসহ বিভিন্ন পণ্যের গুদাম আছে। এছাড়া কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে পড়া একটি উপ-খালের প্রবেশমুখ উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, প্রবেশ মুখ ২০ ফুটের মতো ছিল। কিন্তু অবৈধ দখলের কারণে সেটা সংকুচিত হয়ে নালায় পরিণত হয়েছিল। অবৈধ স্থাপনা ভেঙে প্রবেশ মুখটা উদ্ধার করা হয়েছে। এখন প্রবেশ মুখ বড় করা যাবে বলে জানান তিনি।
ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম জানান, উল্লেখিত খালের আশপাশ থেকে ৭০টির মতো ছোট স্থাপনাও উচ্ছেদ করা হয়েছে। আরএস জরিপ অনুযায়ী আমরা উচ্ছেদ কার্যক্রম চালাচ্ছি। এর আগে সোমবার প্রথম দিনের অভিযানে নদীর পাড় দখল করে গড়ে তোলা ৫০টির মতো অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। আরো ৩০টি অবৈধ স্থাপনা দখলদাররা নিজেরাই সরিয়ে নেয়। প্রথম ধাপে নগরীর সদরঘাট থেকে বারিক বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত এলাকা দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই এলাকায় প্রায় ২০০ অবৈধ স্থাপনা আছে। সেগুলো উচ্ছেদ করতে পারলে ১০ একর ভূমি উদ্ধার হবে। উচ্ছেদ অভিযানে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ, ফায়ার সার্ভিস, কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষ, বিআইডব্লিউটিএ ও র্যাব-পুলিশ। এছাড়া জেলা প্রশাসনের নিযুক্ত ১০০ জন শ্রমিক উচ্ছেদ অভিযানে কাজ করছে।
হাই কোর্টের নির্দেশে ২০১৫ সালের জরিপে কর্ণফুলী নদীর দুই পাড়ের অবৈধ স্থাপনাগুলো চিহ্নিত করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। গত তিন বছরে স্থাপনা আরো বেড়েছে বলে ধারণা জেলা প্রশাসনের। সব অবৈধ স্থাপনায় হাত দেওয়া হবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ১৮ জুলাই পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশের এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাই কোর্ট কর্ণফুলী নদী দখল, মাটি ভরাট ও নদীতে সব ধরনের স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন। হাই কোর্টের নির্দেশে ২০১৫ সালের জরিপে কর্ণফুলী নদীর দুই পাড়ে ২ হাজার ১৮৭টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে জেলা প্রশাসন। ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ কর্ণফুলীর দুই তীরে গড়ে ওঠা স্থাপনা সরাতে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়। তবে উচ্ছেদের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে জটিলতায় ছিল জেলা প্রশাসন।
এদিকে অভিযান দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অভিযান শেষ হওয়ার পর স্থাপনাগুলো আবার যাতে দখল হয়ে না যায় এজন্য বিশেষ নজরদারি রয়েছে জেলা প্রশাসনের। চট্টগ্রামের লাইফ লাইন কর্ণফুলী নদীর উত্তর পাড়ে সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কারণে ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের মালামাল সরিয়ে নিতে রাতে-দিনে কাজ করছে শ্রমিকরা। উচ্ছেদ অভিযান দিন দিন জোরালো হওয়ায় মালামাল সরিয়ে নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। মালামাল সরিয়ে নেওয়ার জন্য অবশ্য শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে কর্ণফুলী নদীর তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ নিয়ে প্রভাবশালী দখলদাররা আতঙ্কে রয়েছে বলে জানা গেছে।
| M | T | W | T | F | S | S |
|---|---|---|---|---|---|---|
| 1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 |
| 8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 |
| 15 | 16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 |
| 22 | 23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 |
| 29 | 30 | 31 | ||||
