গত দুই মাসে চীনজুড়ে ভয়াবহতা বাড়িয়ে অবশেষে সেখানে কমতে শুরু করেছে করোনার হানা। চীনে মহামারী রূপ নিয়েছে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। তবে বিশ্ববাসীকে নতুন করে ভাবনায় ফেলেছে নিউমোনিয়া সদৃশ এই ভাইরাস। চীনে দিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা কমতে শুরু করলেও বিশ্বে করোনার প্রাদুর্ভাব নতুন মাত্রা পেয়েছে।

এতদিন করোনাভাইরাসের প্রকোপ চীনের মধ্যেই ছিল বেশি। কিন্তু গত কয়েক দিনে চীনের বাইরে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যে গতিতে নতুন রোগী বাড়ছে তাতে কোভিড-১৯ নাম পাওয়া এ রোগের প্রাদুর্ভাব নতুন দিকে মোড় নেওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশ্বের অন্তত ৩২টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস।

ইরানে গত দুই দিনে নতুন ১৮ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত এবং চারজন নিহত হয়েছেন। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে কওম শহর থেকে। সেখান থেকে মানুষের চলাচলের মধ্য দিয়ে ভাইরাস ছড়িয়ে গেছে তেহরান, বাবোল, আরাক, ইসফাহান, রাস্তসহ অন্যান্য শহরে। সব মিলিয়ে  করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ জনে। নতুন আক্রান্তদের সাত জনই কওম শহরের। তেহরানে আক্রান্ত হয়েছেন চারজন এবং গিলান প্রদেশে আক্রান্ত হয়েছেন দুইজন।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে একাধিক ব্যক্তির শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে এক বাংলাদেশি রয়েছেন যিনি বেশ কয়েকদিন ধরে চীনের নাগরিকদের সংস্পর্শে ছিলেন।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দক্ষিণ কোরিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম শহর দায়েগুর বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে বের হতে নিষেধ করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। দ্যা গার্ডিয়ান জানিয়েছে, সম্প্রতি দায়েগুতে একটি গির্জায় সমাগতদের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এমন পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাস ঠেকাতে শহরবাসীকে ঘর থেকে বের হতেই নিষেধ করেছেন শহরের মেয়র কওন ইয়ং-জিন।

রয়টার্স জানিয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যস্ত শহর দায়েগু। শহরের রাস্তা-ঘাট, শপিংমল, সিনেমা হল সব সময়ই জনাকীর্ণ থাকে। আর সেই শহর এখন জনমানবহীন হয়ে পড়েছে। শপিংমলগুলো বন্ধ রয়েছে। সিনেমা হলেও কোনো দর্শনার্থী নেই। রাস্তা-ঘাটেও খুব বেশি একটা মানুষের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে না। শহরটির ২৫ লাখ বাসিন্দা এখন নিজ নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছেন। একেবারে জরুরি না হলে কেউ বের হচ্ছেন না।

ইতালিতে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার প্রথমবারের মতো একজনের মৃত্যু হয়েছে। এর পরপরই দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় ১০টি শহরে জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে স্কুল, কলেজসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ইতালির লোদি প্রদেশে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে আছেন সবাই।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভয়াবহ অবস্থা, বয়স্করাই বেশি আক্রান্ত হওয়ায় খুবই আতঙ্কে আছি। এখানে সবার মধ্যে একটা আতঙ্ক কাজ করছে। কেউ বাইরে বের হতে চাচ্ছে না।

ইতালিতে সম্প্রতি এ ভাইরাসে আক্রান্ত ১৪ জনের মধ্যে এমন ব্যক্তিও রয়েছেন যিনি কখনও চীনে যাননি। ফলে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে শুক্রবার অঞ্চলটির জনসমাগম হয় এমন জায়গাগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

ইতালিতে সম্প্রতি আক্রান্ত ১৪ জনের সবাই লোম্বার্ডি এলাকার বাসিন্দা। সেখানে জানুয়ারির শেষ দিকে চীন থেকে ফেরা এক ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠকের পর ৩৮ বছরের আরেক ব্যক্তি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন। ওই ব্যক্তি যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন সেখানকার পাঁচ চিকিৎসক ও নার্স এবং অন্য  বেশ কয়েকজন রোগীও এ ভাইরাসে আক্রান্ত হন। ওই এলাকার একটি ক্যাফেতে যাওয়া তিন ব্যক্তির শরীরেও এ ভাইরাসের সন্ধান মিলে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নড়েচেড়ে বসে প্রশাসন।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে শতাধিক মানুষকে আলাদা করে রাখা হয়েছে। তাদের পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

এছাড়া এখন পর্যন্ত জাপানে ১১০, সিঙ্গাপুরে ৮৬, হংকংয়ে ৬৯, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫, থাইল্যান্ডে ৩৫, তাইওয়ানে ২৬ এবং মালয়েশিয়ায় ২২ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। প্রথমবারের মতো সংক্রমণ ধরা পড়েছে ইসরায়েল, লেবাননে।

এই রোগ যাতে অন্যান্য দেশেও মহামারি আকার না নেয় সেজন্য এখনই সর্বোচ্চ তৎপরতা চালানো জরুরি বলে মনে করছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস। তিনি বলেন, এখনও এই ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকানো যাবে। তবে সুযোগগুলো ক্রমশ কমে আসছে। তাই সুযোগ পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই আমাদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

এই ভাইরাস সংক্রমণ যেকোনো দিকে যেতে পারে বলে সতর্ক করে তেদ্রোস বলেন, ‘যদি আমরা ঠিকভাবে কাজ করি তাহলে গুরুতর সংকট এড়াতে পারব। তবে আমরা যদি সুযোগগুলো নষ্ট করি তাহলে আমাদের সামনে ভয়াবহ বিপদ।’

চীনে শুক্রবার পর্যন্ত করোনায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৪৫ জনে। এছাড়া দেশটিতে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৬ হাজার ২৮৮ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে ১১ হাজারের বেশি লোকের অবস্থা সংকটাপন্ন। শুক্রবার পর্যন্ত করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২০ হাজার ৬৫৯ জন। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনায় নিহত হয়েছেন আরও ১৫ জন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031