হালিশহরে পানিতে জীবাণুর উপস্থিতির ফলে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব এবং কাস্টমার কেয়ার থেকে অসহযোগিতাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম ওয়াসার বিরুদ্ধে নগরীর উত্তর পতেঙ্গায় অনেকেই পানির সংযোগ থেকে বঞ্চিত,। গতকাল দুপুরে নগরীর আগ্রাবাদে একটি হোটেলে আয়োজিত চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষের এক গ্রাহক সমাবেশে এসব অভিযোগ ওঠে। সমাবেশে গ্রাহকরা পানির বিল নিয়ে অনিয়ম, হয়রানি ও পানি প্রাপ্তিতে কালক্ষেপণেরও অভিযোগ করেন।
গ্রাহকদের এসব অভিযোগের ব্যাপারে সভাপতির বক্তব্যে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, সামনে কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প উদ্বোধনের পর নগরীর উত্তর পতেঙ্গাসহ সকল নাগরিক ওয়াসার পানি সংযোগের আওতায় চলে আসবে। তখন গ্রাহকদের চাহিদামতো পানি সরবরাহ করতে পারবে ওয়াসা। এদিকে হালিশহরে সম্প্রতি আলোচিত বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাবের সাথে ওয়াসার সম্পৃক্ততার ব্যাপারে একেএম ফয়েজুল্লাহ বলেন, সম্প্রতি ওয়াসার পানিতে পরীক্ষা চালানো হয়েছে। এতে তিকর কোনো জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। পরীক্ষা চালানোর পর যে জীবাণুর উপস্থিতির কথা বলা হয়েছে তা ক্ষতিকর কোনো উপাদান নয়। এর দ্বারা জন্ডিস বা জ্বরের মতো রোগের প্রাদুর্ভাব হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই বলে জানিয়েছেন ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
এগুলোর পাশাপাশি গ্রাহকের অন্যান্য যেসব সমস্যাগুলো আছে তা খুব শীঘ্রই সমাধানের আশ্বাস দেন ওয়াসা এমডি।
এদিকে গ্রাহক সমাবেশের পর সিটি মেয়র ও নগর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, দেশ উন্নত হলেও আচরণের দিক দিয়ে এখনো নাগরিকরা উন্নত হতে পারিনি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। সামনে দ্রুত উন্নত দেশে পরিণত হবে। কিন্তু নাগরিক হিসেবে আমরা এখনো উন্নত হতে পারি নি। দায়িত্বশীল আচরণ করতে শিখিনি। ময়লা–আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে না ফেলে নালা–নর্দমায় ফেলছি, আইন না মেনে গাড়ি নিয়ে চলাচল করছি। কিন্তু সমালোচনা করছি জনপ্রতিনিধিদের। এ সময় তিনি বলেন, সমালোচনা হতে হবে গঠনমূলক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়।
আ জ ম নাছির উদ্দীন আরও বলেন, চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানী হলেও এর উন্নয়নে পূর্ণাঙ্গ কোনো মাস্টারপ্ল্যান নেই। যে যেদিকে সম্ভব সেদিকে কাজ করছে। এ কারণে এখন উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সন্তান জন্ম দিতে যেমন একজন মা’কে প্রসব বেদনা সহ্য করতে হয়, তেমনি উন্নয়নের সুফল ভোগ করতে চাইলে একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে, কষ্ট সহ্য করতে হবে– বললেন মেয়র। তিনি বলেন, কাজের সমালোচনা করা খুব সহজ। কিন্তু সুষ্ঠুভাবে তা বাস্তবায়ন করা অনেক কঠিন।
এদিকে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফয়েজুল্লাহ বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসায় ‘ইউটিলিটি মর্ডানাইজেশন আমব্রেলা কনসালটেন্সি’ সেবা পরিচালনার জন্য বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ‘ন্যাশনাল ওয়াটার এন্ড সুয়ারেজ অথরিটি’ (উগান্ডা), ইউনেস্কো–আইএইচই (নেদারল্যান্ডস) এবং দেশিয় প্রতিষ্ঠান ডেবকনকে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। ১১টি সেবা সম্পন্নের মাধ্যমে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা উন্নয়ন করা এবং ওয়াসা’কে আইএসও সার্টিফিকেট অর্জনের উপযোগী করে গড়ে তোলাই এ প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য। আগামীতে গ্রাহক সেবার মান আরও বৃদ্ধি পাবে বলে জানান তিনি।
এছাড়া গ্রাহকের কাছে চট্টগ্রাম ওয়াসার ৭৫ কোটি টাকা পাওনা আছে জানিয়ে সংস্থাটির বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক ড. পীযুষ দত্ত বলেন, ওয়াসার প্রায় ৬৫ হাজার গ্রাহক রয়েছে। এরমধ্যে ১৫ হাজার গ্রাহক সর্বনিম্ন বিল প্রদান করে থাকেন। এক হাজার লিটার পানি উৎপাদন করতে যেখানে খরচ হয় ১৬ টাকা, সেখানে ভতুর্কি দিয়ে সাড়ে ৯ টাকায় ওয়াসার গ্রাহক পর্যায়ে তা বিক্রি করছে। এরপরেও বিল বকেয়া রাখা দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন পীযুষ দত্ত। তিনি বলেন, গ্রাহক হয়রানি রোধে ওয়াসার সেবা কার্যক্রম পুরোপুলি ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। ক্যাশের পরিবর্তে ব্যাংক পেমেন্ট চালু করা হয়েছে। এভারেজ বিল বন্ধ করতে ওয়াসার ওয়েবসাইটেও প্রত্যেক গ্রাহকের বিল দেওয়া হচ্ছে। এরপরও কোনো জায়গায় সমস্যা দেখা দিলে অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক ড. পীযুষ দত্ত।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসা’র উপ–ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আলম চৌধুরী, উপ–ব্যবস্থাপনা পরিচালক (প্রশাসন) গোলাম হোসেন, উপ–ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অর্থ) নুরুল আলম চৌধুরী, প্রকল্প পরিচালক নুরুল আবছার, ইউনেস্কো–আইএসই ‘ন্যাশনাল ওয়াটার এন্ড সুয়ারেজ অথোরিটি’র প্রধান জর্জ জো জো কো। ওয়াসার বোর্ড সদস্য সোলেয়মান আলম শেঠ, সাংবাদিক তপন চক্রবর্তী, আবিদা আজাদ, কাউন্সিলর কবির আহমেদ মানিক। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর ছালেহ আহমদ চৌধুরী, ইসমাইল বালি, মোরশেদ আকতার, জিয়াউল হক সুমন, আনজুমান আরা, রুবেল আহমেদ বাবু প্রমুখ।
