নগরীর আউটার স্টেডিয়াম এক সময়ের খেলাধুলার প্রাণ কেন্দ্র।
কিন্তু সে আউটার স্টেডিয়াম এখন যেন একটি পরিত্যক্ত ভূমি। খেলার চাইতে
যেখানে এখন মেলা বেশি হয়। সারা বছরই কোন না কোন মেলা লেগেই থাকে এই আউটার
স্টেডিয়ামে। অথচ কত বড় বড় তারকার জন্ম হয়েছে এই আউটার স্টেডিয়াম থেকে। আর
এখনকার আউটার স্টেডিয়ামের দুরবস্থা দেখে অনেকেই চোখের জল ফেলেন। কারণ আজকের
আউটার স্টেডিয়াম দেখলে যে কারো চোখেই জল আসবে। তবে এবার বোধহয় আর চোখের জল
ফেলতে হবে না আউটার স্টেডিয়ামের জন্য। যদিও এক সময়ের আউটার স্টেডিয়ামের সে
আয়তন এখন আর নেই। এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের দ্বিতল গ্যালারি তৈরি করতে গিয়ে
অনেকটা জায়গা ঢুকে গেছে সেখানে। তাছাড়া পূর্ব পাশে মার্কেট করতে গিয়ে খেয়ে
ফেলেছে বেশ কিছু জায়গা। সবশেষ দক্ষিণ পাশে বড় একটা অংশজুড়ে নির্মাণ করা
হয়েছে সুইমিং পুল। আর যে অংশটা রয়েছে সেটিও পড়ে রয়েছে অবহেলা আর অনাদরে।
অনেক লেখা লেখি আর আন্দোলন করেও কোন লাভ হয়নি। তবে এবার যেন টনক নড়েছে
চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের। এবার
এই আউটার স্টেডিয়ামকে নান্দনিক এক স্টেডিয়ামে পরিণত করতে চান নগর পিতা। আর
সেটা সিটি কর্পোরেশনের অর্থায়নে।
এমনিতেই আউটার স্টেডিয়াম এলাকাটিকে সাজানোর কাজ চলছে এখন। এবার হাত দিচ্ছে
মূল আউটার স্টেডিয়ামকে নান্দনিক করার কাজে। যেখানে থাকবে সবুজ গালিচার
খেলার মাঠ। সে সাথে থাকবে মিনি গ্যালারি। একই সাথে থাকবে মুক্ত মঞ্চ।
যেখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদি করা যাবে। সিটি মেয়র জানান এরই মধ্যে এই
পরিকল্পনার প্রণয়নের কাজ শুরু হয়ে গেছে। চলছে প্রজেক্ট প্রোফাইল তৈরির কাজ।
শীঘ্রই টেন্ডার আহবান করা হবে বলেও জানান সিটি মেয়র। তিনি বলেন আউটার
স্টেডিয়াম এলাকাটিকে তিনি সিঙ্গাপুরের মত একটি জায়গায় পরিণত করতে চান।
যেখানে মানুষ আড্ডা দেবে হাঁটবে গল্প করবে, খেলা দেখবে। এর আগে অনেকবার
চেষ্টা করেও আউটার স্টেডিয়ামের মাঠকে খেলার উপযোগী করে তোলা যায়নি। তাই
এবারে একেবারে নতুন করে সবকিছু করা হবে বলে জানান তিনি। আর সে জন্য এরই
মধ্যে বিসিবির জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের কিউরেটর প্রবীনের সাথে
প্রাথমিক আলোচনা করেছেন সিটি মেয়র। মাঠ যাতে সবুজ থাকে আর ঘাস যাতে
ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জন্য দুই স্তরের মাধ্যমে গড়ে তোলা হবে মাঠটিকে।
বর্তমানে যে অবস্থায় রয়েছে মাঠ সেখান থেকে আরো ১২ ইঞ্চি উঁচু করা হবে। পানি
নেমে যাওয়ার জন্য স্লোপ থাকবে ১৮ ইঞ্চি। সব মিলিয়ে আধুনিক এক মাঠে পরিণত
করা হবে আউটার স্টেডিয়ামকে। মাঠের বর্তমান অবস্থার প্রথমে ৬ ইঞ্চি পাথর
দেওয়া হবে। তার উপর ৬ ইঞ্চি দেওয়া হবে বালি। এরপর তার উপর লাগানো হবে ঘাস।
আর এর মাধ্যমে সবুজ গালিচায় পরিণত করা হবে আউটার স্টেডিয়ামের মাঠকে।
মাঠ তৈরির পর দু’পাশে ছোট করে গ্যালারি করা হবে। এছাড়া মাঠের বাহিরের অংশে
থাকবে ওয়াকওয়ে। যেখানে মানুষ হাঁটতে পারবে নির্বিঘ্নে। এই মাঠটি তৈরি হয়ে
গেলে হকি, হ্যান্ডবল, ভলিবল, কাবাডিসহ সব ধরনের খেলা অনুষ্ঠান করা যাবে
নির্বিঘ্নে। যার ফলে মূল স্টেডিয়ামের উপর চাপ কমে আসবে অনেকখানি। তাছাড়া
বিভিন্ন বয়সভিত্তিক ক্রিকেট টুর্নামেন্টের খেলাসমূহও নির্বিঘ্নে আয়োজন করা
যাবে।
সিটি মেয়র বলেন, এম এ আজিজ স্টেডিয়াম এবং আউটার স্টেডিয়ামকে ঘিরে এক অপরূপ
আবহ সৃষ্টি করতে চান। যেখানে মানুষ বিনোদনের উদ্দেশ্যে ছুটে আসবে।
এলাকাটিকে একেবারে আলো ঝলমলে করতে চান সিটি মেয়র। আউটার স্টেডিয়ামের মাঠ
এবং আশে পাশে সংস্কারের পর সেটি ঘিরে রাখা হবে। যাতে মাঠের নিরাপত্তা বজায়
থাকে।
এই এলাকাটিকে খেলার পাশাপাশি নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মাতিয়ে রাখতে চান
সিটি মেয়র। আর সে জন্য একটি পরিকল্পনাও করে রেখেছেন তিনি। আউটার
স্টেডিয়ামের উত্তর পশ্চিম কোণে দারুল কাবাব এর সামনে যে খালি জায়গাটি রয়েছে
সেটিতে নির্মাণ করা হবে মুক্ত মঞ্চ। যেখানে আয়োজন করা যাবে নানা অনুষ্ঠান।
আর দর্শকরা মাঠের চার পাশে বসে সে অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবেন। খেলাধুলার
পাশাপাশি সিটি মেয়র বিনোদনের আধারেও পরিণত করতে চান আউটার স্টেডিয়ামকে।
থাকবে নানা রঙের লাইটিং। যা যে কারো দৃষ্টি আকৃষ্ট করবে। এমনিতেই এম এ আজিজ
স্টেডিয়ামের চার পাশ দারুণ আলো ঝলমলে। রেডিসনের সামনের ফোয়ারাটি এই শোভাকে
বাড়িয়েছে আরো বেশি। তবে চাঁদের কলংকের মত হতশ্রী হয়ে আছে আউটার
স্টেডিয়ামটি। এবার সেটাকে নান্দনিক করে গড়ে তুলতে চাইছেন সিটি মেয়র। এই
পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কত টাকা খরচ হতে পারে তা নির্ধারণ করা হচ্ছে বলে
জানান সিটি মেয়র। আর এই পুরো অর্থ ব্যয় করবে সিটি কর্পোরেশন।
সিটি মেয়র বলেন, নগরীর অন্যতম প্রাণ কেন্দ্র এই স্টেডিয়াম এলাকা। দেশি এবং
বিদেশিদের কাছে এই স্টেডিয়াম এলাকাটিকে একটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত করতে
চাই। যাতে মানুষ বলতে পারে চট্টগ্রামে স্টেডিয়াম এলাকাটি একটি দেখার মত
জায়গা। সিটি মেয়র দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এই নগরীকে নান্দনিক করার চেষ্টা
করে যাচ্ছেন। যার অন্যতম উদাহরণ হতে পারে এই আউটার স্টেডিয়াম।
তিনি জানান সবকিছু ঠিকঠাক করার পর শীঘ্রই কাজ শুরু করা হবে এবং যত কম সময়ে
পারা যায় কাজ শেষ করা হবে। একজন পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ হলেও সিটি মেয়র একজন
আপাদমস্তক ক্রীড়া সংগঠক। তাই ক্রীড়া কেন্দ্রিক স্থাপনাগুলোকে তিনি সাজাতে
চান সুন্দর করে। তারই অংশ হিসেবে আউটার স্টেডিয়াম পরিণত হচ্ছে নান্দনিক এক
স্থাপনায়।
| M | T | W | T | F | S | S |
|---|---|---|---|---|---|---|
| 1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 |
| 8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 |
| 15 | 16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 |
| 22 | 23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 |
| 29 | 30 | 31 | ||||
