এক নারী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে সরকারঘোষিত ন্যূনতম মজুরি প্রত্যাখ্যান করে গাজীপুরে তৈরি পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে। গুলিবিদ্ধ হয়ে আরেক শ্রমিক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. মাহবুব আলম জানান, সাড়ে ১২ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরির ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কোনাবাড়ি ও জরুনসহ আশপাশের কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা গতকাল বুধবার সকালে বিক্ষোভে নামেন। এক পর্যায়ে তারা পুলিশের সঙ্গে এই সংঘর্ষে জড়ায়। খবর বিডিনিউজের।

নিহত মোসা. আঞ্জুয়ারা খাতুন (২৪) কোনাবাড়ির ইসলাম গার্মেন্টসের সেলাই মেশিন অপারেটর। জামাল উদ্দিন (৪২) নামে আরও একজন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, কোনাবাড়ি থেকে আহত দুইজনকে হাসপাতালে আনা হলে বেলা সাড়ে বারোটায় আঞ্জুয়ারা বেগমকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। গুলিবিদ্ধ জামাল উদ্দিনের চিকিৎসা চলছে। নিহতের ননদ আরজিনা বেগম জানান, আঞ্জুয়ারা বেগম সিরাজগঞ্জের কাজিপুর থানার চড়গ্রিস গ্রামের গার্মেন্টেস শ্রমিক জামাল বাদশার স্ত্রী। তারা জরুন এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। এই দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। পুলিশ, শ্রমিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকাল ৭টার পর থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন পোশাক শ্রমিকরা। সকাল ৮টার দিকে কয়েকশ শ্রমিক কাশিমপুরের জরুন মোড়ের সামনে একত্রিত হয়ে হাতে ইট এবং লাঠিসোটা নিয়ে মিছিল করতে থাকে। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে কাঠ ও টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ছাড়া বিভিন্ন যানবাহন ভাঙচুরের চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে উত্তেজিত শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট–পাটকেল নিক্ষেপ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। পরে উত্তেজিত শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে রওশন মার্কেটের হয়ে হাতিমারার দিকে এগিয়ে যায়। পুলিশের হামলায় তাদের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানান শ্রমিকরা।

গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের কোনাবাড়ি থানার ওসি একেএম আশরাফ উদ্দিন বলেন, শ্রমিকদের শান্ত থাকতে অনুরোধ করা হলেও শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে পুলিশের ওপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এক পর্যায়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে টিয়ারশেল ছুড়লে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

এ ঘটনার পর বেশ কিছু কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হলেও দিনভর শ্রমিকরা গাজীপুরের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে বিক্ষোভ চালিয়ে গেছেন। বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হয়েছেন। এতে বেশ কিছু সময় ঢাকা–টাঙ্গাইল ও ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ থাকে। এর মধ্যেই বিকালে একটি এপিসি কারে সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণে তিন পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে একজনের হাতের কব্জি উড়ে গেছে। তাদেরকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজীপুর মহানগর পুলিশ।

ঢাকা মেডিকেল কলেজে নারীর মৃত্যু নিয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, সংঘর্ষের সময় ওই নারী হয়তো সড়কে ছোটাছুটি করতে গিয়ে পড়ে গিয়ে জখম হয়েছেন। তিনিসহ দুই জনকে আমরা উন্নত চিৎকসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে পাঠিয়েছি। হয়ত অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি মারা যেতে পারেন।

তবে আঞ্জুয়ারা খাতুনের সুরতহাল প্রতিবেদনে তার কপাল, পিঠ, পেটসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ‘কালো ছিদ্র’ পাওয়ার কথা জানানো হয়েছে। তিনি গুলিতে মারা গেছেন কিনা সে বিষয়ে গাজীপুর মহানগর পুলিশের কাছ থেকে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য আসেনি। সুরতহাল প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, আঘাতজনিত কারণে আঞ্জুয়ারার মৃত্যু হয়েছে। আর হাসপাতালের ডেথ সার্টিফিকেটে বলা হয়েছে, ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেলেই আঞ্জুয়ারার লাশের ময়নাতদন্ত হয়। তবে সেখানে কী পাওয়া গেছে, তা জানা যায়নি। ময়নাতদন্ত শেষে তার লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।

নিরাপত্তায় বিজিবি : এদিকে ঢাকা ও আশেপাশের এলাকায় পোশাক কারখানার নিরাপত্তা জোরদার করতে ৪৮ প্লাটুন বিজিবি নেমেছে মাঠে। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ–বিজিবি। এছাড়া সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা করতেও বিজিবি মোতায়েন রয়েছে গত দুই সপ্তাহ ধরে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031