রবীন্দ্র জাদেজা ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে অবিশ্বাস্য এক গল্প প্রায় লিখেই ফেলেছিলেন। ধোনির সঙ্গে তার ১১৬ রানের অবিশ্বাস্য জুটিতে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সেরা প্রত্যাবর্তনের স্বপ্নও দেখছিল ভারত। আটে নেমে ওয়ানডে ইতিহাসের অন্যতম সেরা ইনিংস খেলেও জাদেজা দলকে এনে দিতে পারলেন না রূপকথার জয়। রোমাঞ্চকর লড়াই ১৮ রানে জিতে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠলো নিউজিল্যান্ড। ২০১১ সালে দেশের মাটিতে শিরোপা জয়ের পর ভারত টানা দ্বিতীয়বার বিদায় নিলো বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকে। ৩৭ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন হেনরি। ৩৪ রানে ২ উইকেট মিচেল স্যান্টনারের। হেনরি শেষ পর্যন্ত ম্যাচ সেরা।

ম্যানচেস্টারে মাথার ওপরের আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে শুরু থেকেই খেল দেখাতে শুরু করে কিউই পেসাররা। ৩.১ ওভারে ৫ রান তুলতে নেই ৩ উইকেট! ২৪০ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নামা ভারতের হার তখন মনে হয়েছে শুধুই সময়ের ব্যাপার। কিন্তু ক্রিকেট যে গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা, সে কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা। আর মহেন্দ্র সিং ধোনি বোঝাতে শুরু করেছিলেন, ভারতীয় ক্রিকেট তাকে কোথায় রাখবে, সেটি প্রমাণের ম্যাচ এটাই। কিন্তু দম আটকানো এ ম্যাচে নিউজিল্যান্ড শেষ পর্যন্ত প্রমাণ করেছে, তারা আর শুধুই সেমিফাইনালের দল নয়। এদিন ভারতের ইনিংসের শুরুতে ফাইনালে ওঠার পথেই ছিলেন নিউজিল্যান্ডের পেসাররা। লোকেশ রাহুল, রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলির ভারতীয় টপ অর্ডারের এ তিন স্তম্ভকে দলীয় ৫ রানের মধ্যেই ফিরিয়ে ম্যাচটা নিজেদের দিকে টেনে এনেছিলেন ট্রেন্ট বোল্ট আর ম্যাট হেনরি পেস জুটি। এরপর জুটি গড়ার চেষ্টায় খণ্ড খণ্ড লড়াইয়েও হেরেছে ভারত। তবে রবীন্দ্র জাদেজা এসে উইকেটে ধোনির সঙ্গে যোগ দিলে ক্রমে ম্যাচে ফেরে ভারত। ৩১তম ওভারে জুটি বাঁধেন দুজন। তখনো ১১৪ বলে ১৪৬ রানের দূরত্বে ভারত। হাতে মাত্র ৪ উইকেট। সপ্তম উইকেটে ১১৬ রানের জুটি গড়ে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন ধোনি-জাদেজা জুটি। ইনিংসের শুরুর মতো ভারতের শেষ পতনটুকু শুরু হয় ৪৭.৫ ওভার থেকে। বোল্টকে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন জাদেজা (৫৯ বলে ৭৭)। ওই ওভার শেষে জয়ের জন্য ১২ বলে ৩১ রান দরকার ছিল ভারতের। ৪৯তম ওভারে এসে ম্যাচটা হেলে পড়ে কিউইদের দিকে। লকি ফার্গুসনের করা ওই ওভারে রান আউট হন ধোনি (৭২ বলে ৫০)। আর শেষ বলে ভুবনেশ্বর কুমারকে তুলে নেন ফার্গুসন। এতে হাতে ১ উইকেট রেখে শেষ ওভারে ২৩ রান তোলার প্রায় ‘অসম্ভব’ সমীকরণে পড়ে যায় ভারত। জিমি নিশাম এসে তৃতীয় বলে যুজবেন্দ্র চাহালকে তুলে নিয়ে নিশ্চিত করেন কিউইদের ফাইনাল।

এর আগে রিজার্ভ ডেতে গড়ানো প্রথম সেমিফাইনালে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৩৯ রান তোলে নিউজিল্যান্ড। রস টেইলর ফিরলেন রান আউটে। শেষ দিকে সেভাবে ঝড় তুলতে পারলেন না আর কেউ। আগের দিনের স্কোরের সঙ্গে তাই খুব বেশি রান যোগ করতে পারেনি নিউজিল্যান্ড।

গতকাল রিজার্ভ ডেতে ২৩ বলে তিন উইকেট হারিয়ে কিউরা যোগ করতে পেরেছে ২৮ রান। আগেরদিন বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার আগে ৪৬.১ ওভারে তাদের রান ছিল ৫ উইকেটে ২১১। উইকেটে ছিলেন দুই থিতু ব্যাটসম্যান। কিন্তু নতুন দিনে তো চ্যালেঞ্জ আবার প্রথম থেকেই শুরুর মতো। সেখানেই থমকে যায় নিউজিল্যান্ড। ৬৭ রানে দিন শুরু করা টেইলর ৭৬ রানে ফিরেছেন রবীন্দ্র জাদেজার সরাসরি থ্রোতে। বাকিরা তেমন কিছু করতে পারেনি। ভুবনেশ্বর কুমার ও জসপ্রিত বুমরাহ দারুণ বোলিংয়ে এ দিনের প্রায় চার ওভারে চার এসেছে কেবল একটি। এই দুই বোলার আগের দিন কিউইদের ভুগিয়েছিলেন নতুন বলেও। আগের দিনের একটির সঙ্গে গতকাল আরো দুই উইকেট নিয়ে ভারতের সফলতম বোলার ভুবনেশ্বর। মাত্র ৩৪ রানে তিন উইকেট নেন এই পেসার। বুমরাহ, পান্ডিয়া, জাদেজা ও চাহাল নেন একটি করে উইকেট।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031