রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নানের গোপন চুক্তি ফাঁস হয়েছে প্রায় ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে এক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য প্রার্থীকে জয়ী করতে । এ ঘটনায় অভিযুক্ত নির্বাচন কর্মকর্তাকে উপজেলা নির্বাচন কমিশনের পদ থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা।

এদিকে অভিযুক্ত মিঠাপুকুর উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নানকে প্রত্যাহার এবং আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য মিঠাপুকুর উপজেলা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নতুন নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার রংপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে এক ফ্যাক্সবার্তা পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়।

এর আগে গতকাল বুধবার অভিযুক্ত নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে চিঠি পাঠানো হয়।

অপরদিকে দৈনিক আমাদের সময়ের হাতে থাকা টাকা-পয়সা লেনদেন এবং পুরো পরিকল্পনার অডিও ক্লিপে রফিকুল ইসলাম নামে এক ইউপি সদস্য প্রার্থীকে জয়ী করতে ভোট কেন্দ্র থেকে প্রতিপক্ষের লোকজনকে বের করে দেওয়া এবং ভোটের আগে অন্তত ৩০০ ব্যালট পেপার সরবরাহের চুক্তি করেছেন ওই কর্মকর্তা। রফিকুল ইসলাম নামে ওই ব্যক্তি গোপন চুক্তির বিষয়টি প্রকাশ হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করলেও দুই দফায় প্রায় ৫ লাখ টাকা নির্বাচন কর্মকর্তাকে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন।

নির্বাচন কর্মকর্তা ও ইউপি সদস্য প্রার্থীর ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপে বলা হয়, নির্বাচন কর্মকর্তা- প্রিজাইডিং অ্যাসিস্টেন্ট প্রিজাইডিংকে মিনিমান তো ১ লাখ টাকা দিতেই হবে। পুলিশ-থানায় ১ লাখ টাকা খাওয়ানো উচিত। তারপর দল দুইটা আছে, পঞ্চাশ হাজার করে তো দিতেই হবে। ৩ লাখ তো গেল। টাকার গ্যারান্টি আমি। কাজ শতভাগ, আমি গ্যারান্টি দেব। ইউপি সদস্য প্রার্থী- ৫০ দেই স্যার এখন। তফসিল ঘোষণায় টেকার পর চাঁদাসহ একবারে সাড়ে ৪ লাখ টাকা দেব। নির্বাচন কর্মকর্তা-কাল সকাল বেলা আসলে তোমার সাথে সরাসরি কন্টাক্ট হবে।

উপজেলার বালারহাট ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য প্রার্থী রফিকুল ইসলাম (ফুটবল প্রতীক) জানান, ১ লাখ টাকার দেওয়ার ডেট থাকলেও আমি সেদিন টাকা দেইনি। আগে তফসিল ঘোষণাটা হোক। পরদিন নির্বাচন কর্মকর্তা বালারহাটে এলে আমি তাকে ১ লাখ টাকা দেই। বাকি টাকাটা, উনি তো রংপুরে থাকেন ওখানে দিয়েছি। তবে অভিযুক্ত নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নানের কার্যালয়ে গিয়ে তার দেখা পাওয়া যায়নি।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এসব শোনার সময় নেই। অডিও ক্লিপ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

এ ব্যাপারে রংপুরের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জিএম সাহাতাব উদ্দিন, সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফরহাদ হোসেন এবং জেলা প্রশাসক আসিব আহসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, মিঠাপুকুর উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নানের টাকা নিয়ে ইউপি সদস্যকে জয়ী করার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে তাকে প্রত্যাহার করার জন্য ঢাকার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা নির্বাচন কমিশনের পদ থেকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত এসেছে। তার পরিবর্তে নতুন নির্বাচন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়ে মিঠাপুকুর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জিএম সাহাতাব উদ্দিন জানান, অভিযুক্ত নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031