প্রতিদিনের গাড়ি পারাপারের হিসাব কষলে দেখা যায়, বছরে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা আদায় করছেন এই কর্মচারীরা।পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নদী পার হতে গেলেই ফেরির লস্কর ও কর্মচারীদের ঘুষের আবদার মেটাতে হচ্ছে। এই চাঁদার ভাগ চলে যাচ্ছে ফেরির মাস্টার ও বিআইডব্লিউটিসির আরিচা শাখার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পকেটে।
পাটুরিয়া দৌলতদিয়া নৌরুটে যানবাহন পারাপারে মোট ১৮টি ফেরি চলাচল করে। দিনে প্রায় চার হাজার যানবাহন পারাপার হয় এই ঘাট দিয়ে। একেকটি গাড়ি থেকে ১০ টাকা করে টাকা তোলা হলে দিনে চাঁদা আদায় হয় চার কোটি টাকা। আর ১৫ টাকা করে নিলে হয় ৬০ হাজার টাকা। এই হিসাবে মাসে কমপক্ষে ১২ লাখ থেকে ১৬ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। বছরে এই অংশ হয় প্রায় দেড় কোটি থেকে দুই কোটি টাকার বেশি।
এই ১৮টি ফেরিতে ৯০ জন লস্কর কাজ করেন। এর মধ্যে ১৮ জন টেন্ডর রয়েছেন যিনি সর্দার নামে পরিচিত।
সরকারিভাবে নিয়োগ পাওয়া ওইসব কর্মচারীদেরকে চাঁদা দিতে বাধ্য হওয়া ভুক্তভোগীরা ভীষণ ক্ষুব্ধ। তবে কিছু করার না থাকায় মুখ বুঁজে সওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই বলে জানিয়েছেন একাধিক চালক।
প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি চললেও এ বিষয়ে কিছু জানা নেই বলে দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা করেছেন বিআইডব্লিউটিসির একাধিক কর্মকর্তা। তবে প্রমাণ পেলে কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন একজন কর্মকর্তা।
পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ফেরি যখন ঘাটে এসে ভিড়ে তখন বিআইডব্লিউটিসির এক কয়েকজন কর্মচারী দৌড়ে চলে যায় বকশিসের টাকা তুলতে।
নিয়ম না থাকলেও ছোট,বড় সব ধনের যানবাহন থেকে ১০ থেকে ১৫ টাকা হারে চাঁদা তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে লস্কর ও টেন্ডর কর্মচারীরা। অথচ এড়া সবাই সরকারি কর্মচারী। তাদের বেতন ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা।
পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়া নদী পার হওয়া ফেরিতে কথা হয় গোল্ডেন লাইন পরিবহনের সুপারভাইজার রুবেল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঘাটে সিরিয়াল ঠিকমত পেতে হলে লস্করদের প্রতি ট্রিপে ১০ থেকে ১৫ টাকা হারে চাঁদা দিতে হয়। না দিলে তারা খারাপ আচরণ করেন।’
ট্রাকচালক আনোয়ারুল হক বলেন, ‘গাড়ি ফেরিতে ওঠানোর সময় আমরা নিজেরাই সিরিয়াল করে রাখি। অর্থচ ফেরির লস্করদের টাকা দিতে হয়। যদি টাকা দিতে না চাই, তাহলে তারা মারধর পর্যন্ত করে। এসব লস্করদের একটি চক্র থাকায় তাদের কিছু বলে চলে যাওয়া সম্ভব হয় না।’
এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. গোলাম মওলা ফেরির সহকারী মাস্টার রেজাউল করিম দাবি করেন, ফেরি ঘাটে ভিড়লে লস্কররা খুশি হয়ে ৫ থেকে ১০ টাকা করে দেয়।
এই টাকার ভাগ বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারাও পান বলে জানিয়েছেন কর্মচারীরা। তবে বিআইডব্লিউটিসির পাটুরিয়া ঘাটের মেরিন বিভাগের ব্যবস্থাপক আব্দুস সত্তার বলেছেন, কোন কর্মকর্তা ফেরির যানবাহন থেকে বকশিসের নামে টাকা আদায়ে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
