সংকীর্ণ গলিপথে লাল, গোলাপী আলো ঠিকরে পড়ে। আমস্টার্ডামের সন্ধ্যা নামে রঙিন হয়ে। তাতে দেখা যায় অর্ধনগ্ন যুবতী দেহ দুলিয়ে নাচছেন। পথচারী পুরুষদের আহ্বান জানাচ্ছেন তার ডাকে সাড়া দিতে। সে ডাকে এগিয়ে যাচ্ছেন অনেক পুরষ। তার বেশির ভাগই সম্ভবত বৃটিশ।

 তারা দল বেঁধে ছুটি কাটাতে যান আমস্টার্ডামে। এ ছাড়া আছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটক। তারা যুবতী দেহের ঢলকানিতে বেসামাল হয়ে হারিয়ে যান অন্ধকার জগতে। তাদের মনোরঞ্জন করে, দেহ দান করে দিনে এসব যুবতী উপার্জন করেন সাড়ে তিন শত পাউন্ড পর্যন্ত। এরা দেহব্যবসায়ী। ঠাঁই হয়েছে আমস্টার্ডামের নিষিদ্ধ পল্লীতে। বাইরে থেকে দেখলে এদের জীবনযাত্রা খুব ঝকমকে মনে হতে পারে। কিন্তু ভিতরের খবর অনেক ভয়াবহ। অনেক নোংরা ও বিপদজনক। এ বিষয়ে অনুসন্ধান করেছে লন্ডনের ডেইলি মেই। তারা বলেছেন, এই দেহ ব্যবসায় যেসব যুবতীকে নামানো হয়েছে তার বেশির ভাগই পূর্ব ইউরোপের। তারা দালালের ফাঁদে পা দিয়ে এই পথে এসেছে। এ নিয়ে ডাচ আদালতে অনেক মামলা চলছে। এসব মামলা মানব পাচারের। আমস্টার্ডামে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হয়েছে এক যুবতীকে। তিনি বলেছেন, আমাদেরকে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। দোকানের সাবান যেভাবে বিক্রি করা হয় সেভাবেই আমাদেরকে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। এসব নারীর বেশির ভাগকেই এ পেশায় নামানোর আগে কসমেটিক সার্জারি করানো হয়। গর্ভপাত করানো হয়। এ জন্য তাদের বিপুল সংখ্যক এখন মারাত্মক দুর্ভোগে। হল্যান্ডে বা নেদারল্যান্ডসে যৌন ব্যবসা বৈধ হলেও এখন কিছু রাজনীতিক ও অধিকার কর্মী এ ব্যবসার বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করেছেন। একজন ডাচ এমপি তার দেশের সমাজ কল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে বলেছেন, নিষিদ্ধ পল্লীগুলো বাণিজ্যিক ধর্ষণ ছাড়া আর কিছু নয়। সেখানে আগামী বছর নতুন একটি আইন আসার কথা। এ আইনের অধীনে এ ব্যবসাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। যদি জোর করে কাউকে পতিতাবৃত্তিতে নামানো হয় তাহলে শাস্তি হবে সর্বোচ্চ চার বছরের জেল। আমস্টার্ডামে কাচের জানালায় যেসব নারীকে নর্তকী হিসেবে দেখা যায় তেমন একজন রোমানিয়ার অ্যানজেলিকা। তিনি সেখানে পাঁচ বছর জিম্মি অবস্থায় ছিলেন। তার বয়স যখন ১৭ বছর তখন এক ব্যক্তি তাকে প্রলুব্ধ করে নিয়ে যায় লন্ডনে। ওই ব্যক্তিকে তিনি একজন ভাল বন্ধু মনে করেছিলেন। তাকে বলা হয়েছিল, লন্ডনে নিয়ে তাকে হেয়ার স্টাইলিস্ট হিসেবে ভাল বেতনে কাজ দেয়া হবে তাকে। কিন্তু বিমানে ওঠার পরই তার পাসপোর্ট নিয়ে নেয়া হয়। কার্যত তিনি হয়ে পড়েন বন্দি। অল্প সময়ের মধ্যে তাকে বিক্রি করে দেয়া হয়। তার ধারাবাহিকতায় তাকে পাঠানো হয় আমস্টার্ডামের ওই অন্ধকার জগতে। এ বিষয়ে অ্যানজেলিকা বলেন, প্রথমে আমার ওই বন্ধু আমাকে নিয়ে যায় ইংল্যান্ডে। সেখান থেকে টাকা দিয়ে মাংস কেনার মতো করে আমাকে নিয়ে যায় হল্যান্ডে। সেখানে আমি যখন জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম জানালায় নগ্ন নারীরা নাচছে, আমার বুঝতে বাকি রইল না এটা একটি পতিতালয়। এ দৃশ্য দেখে আমি কান্নায় ভেঙে পড়লাম। আমি বুঝে গেলাম পরিণতি কি হতে চলেছে আমার।
Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031