৮০ হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে সারা দেশের বেসরকারি স্কুল- কলেজগুলোতে । এসব পদে নিয়োগের জন্য আগেই কয়েক লাখ আবেদনকারীর যোগ্য তালিকা তৈরি করেছে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু নিয়োগ সংক্রান্ত মামলাসহ কিছু জটিলতায় ঝুলে আছে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া। করোনা মহামারির সময়ে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে বিপুলসংখ্যক চাকরি প্রার্থীর কর্মসংস্থান হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। তথ্য অনুযায়ী, প্রথম থেকে ১৫তম নিবন্ধিত মেধা তালিকায় ৬ লাখ ৩৪ হাজার ১২৭ জন আবেদনকারী রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১ লাখ ৮২১ জনের বয়স ৩৫ বছর পার হওয়ায় তারা নিয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন না। আবার অনেকে বিভিন্ন চাকরি নিয়ে চলে গেছেন। গণবিজ্ঞপ্তির জন্য নভেম্বর পর্যন্ত ৫৭ হাজার ৩৬০টি এবং এখন পর্যন্ত নতুন প্রায় ২২ হাজারসহ প্রায় ৮০ হাজার শূন্যপদের শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রার্থীরা অপেক্ষা করছেন।

গত জানুয়ারি মাসে ৩য় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। এখন পর্যন্ত ১৫টি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বপ্রথম পরীক্ষা হয় ২০০৫ সালে। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে দুই গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ৩৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তৃতীয় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে দেখা দিয়েছে দীর্ঘ সূত্রিতা। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠান বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এর তৃতীয় নিয়োগ চক্রের গণবিজ্ঞপ্তির অপেক্ষায় নিয়োগ প্রত্যাশী লক্ষাধিক নিবন্ধিত বেকার শিক্ষক। তাদের অপেক্ষার প্রহর যেন কাটছেই না। তারা বর্তমানে চরম হতাশা ও দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন। করোনাকালীন পরিস্থিতির জন্য এসব নিবন্ধিত শিক্ষকদের জীবন অসহনীয় ও দুর্বিষহ অবস্থায় পৌঁছেছে।
২০১৬ সালে নেয়া এনটিআরসিএ’র ১৩তম শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রায় সাড়ে ৬ লাখ চাকরি প্রার্থীর মধ্যে থেকে শূন্যপদের অনুকূলে ১৭ হাজার ২৫৪ শিক্ষার্থীকে পিএসসি’র আদলে তিন ধাপে পরীক্ষা নিয়ে বাছাই করে এ প্রতিষ্ঠান। মন্ত্রণালয় তাদের শূন্য পদে নিয়োগের জন্য নির্দেশনা দেয়। জটিলতা তৈরি হয় এখান থেকেই। তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি জারির ঠিক আগে ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধনে চাকরিবঞ্চিত ২ হাজার ২০০ জন হাইকোর্টে মামলা করেন। মামলায় রায় তাদের পক্ষে যায়। ওই শিক্ষকদের নিয়োগ দিতে আদেশ দেন হাইকোর্ট। কিন্তু এনটিআরসিএ নিয়োগ না দিয়ে রায় রিভিউ চেয়ে আবেদন করে। এক্ষেত্রে এনটিআরসিএ থেকে জানানো হয়, যেহেতু আদালতের রায়ে সমন্বিত মেধা তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে, তাই শুধু ১৩তম ব্যাচের চাকরি প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে গেলে তা রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। ফলে এখন সমন্বিত মেধা তালিকার মধ্যে সবাই প্রবেশ করেছে। এজন্য আমরা রিভিউতে বলেছি একটি ব্যাচকে নিয়োগ দিলে বাকিরা মামলা করতে আদালতে যাবে। বিষয়টি নিয়ে রিভিউ আবেদন করেছে এনটিআরসিএ। রিভিউর রায়ের ওপর নির্ভর করছে এনটিআরসিএ কী করবে।
১৫তম নিবন্ধিত একজন বলেন, আমরা এত কষ্ট করে টিকলাম, মেধা তালিকায় স্থান পেলাম কিন্তু প্রায় ১ বছর হয়ে গেল গণবিজ্ঞপ্তি পেলাম না। এর চেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে। অনিশ্চিয়তা ও হতাশা জীবনটাকে গ্রাস করে ফেলেছে। আরেক নিয়োগ প্রত্যাশী শান্ত আলী বলেন, করোনা পরবর্তী শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষতি পুষিয়ে স্বাভাবিক করতে গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রায় ৮০,০০০ শূন্যপদের বিপরীতে নিয়োগে অপেক্ষারত এসব তরুণ মেধাবী নিবন্ধিত শিক্ষকবৃন্দ অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। তাছাড়া একটি দেশে প্রায় লাখের কাছাকাছি সংখ্যক শিক্ষকের পদ শূন্য রেখে কখনই শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি বা মানন্নোয়ন সম্ভব নয়। তিনি আরো বলেন, মুজিববর্ষে বর্তমান সরকারসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের শ্রেষ্ঠ উপহার হতে পারে প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষকের নিয়োগ কার্যক্রম। বাংলাদেশের ইতিহাসে এতো বড় নিয়োগ কার্যক্রম কখনও সম্পন্ন হয়নি। তাই সকল জটিলতা নিরসন করে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারলে বর্তমান সরকারের এটাই হবে শিক্ষাখাতে একটা বড় অর্জন। যা সরকারের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আধুনিক ও মানসম্মত শিক্ষাদানে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোমিনুর রশিদ আমিন বলেন, প্রতিষ্ঠান থেকে শূন্য পদের তালিকা নেয়া হবে। এছাড়া এনটিআরসিএ রিভিউ করেছে। আশা করছি জানুয়ারিতে তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি দেয়া সম্ভব হবে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031