পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়িয়ে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতার ‘পুনর্মিলনে’র পর অনুষ্ঠেয় দলের প্রতিনিধি সভায় নেতাকর্মীদের বক্তব্য নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।
শনিবার নগরীর পাঁচলাইশের একটি কমিউনিটি সেন্টারে এই প্রতিনিধি সভা হবে। এজন্য রাতে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় গিয়ে প্রস্তুতি সভায় অংশ নেন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। দুই নেতা একসঙ্গে সভাস্থল পরিদর্শনওকরেছেন।
২০১০ সালে সর্বশেষ প্রতিনিধি সভার সাত বছর পর হতে চলা এই সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও দলের সভাপতিমণ্ডলীরর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল উপস্থিত থাকবেন।
ওই সভায় চট্টগ্রাম মহানগরেরওয়ার্ড ও থানা কমিটির যারা বক্তব্য রাখবেন তাদের লিখিত বক্তব্য আগে ‘পাশ করিয়ে’ নিতে হচ্ছে।
প্রতিনিধি সভা উপলক্ষে ২৫ এপ্রিল নগর কমিটির নির্বাহী পরিষদের এক সভা হয়। সেখানে বক্তব্য শুক্রবারের মধ্যে জমা দিয়ে অনুমোদন করিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি কোনো নেতার নামে শ্লোগান এবং ব্যানার-ফেস্টুন না রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিনিধি সভার সমন্বয়কারী ও নগর কমিটির সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, “আসন্ন জাতীয় নির্বাচন এবং সামনের দিনের কৌশল সম্পর্কে দলের ও নেত্রীর কীবার্তা আছে তা কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদের জানাবেন। সেই অনুসারে বাস্তবায়ন এবং জনগণের সাথে সেতুবন্ধন রচনাই তৃণমূলের কাজ।”
“সংগঠনের চিত্র জানানোর কথা বলে কাদা ছোড়াছুড়ির কি দরকার? কেউ এটা করবে, তা হবে না।ওয়ার্ড ও থানার সাংগঠনিক অবস্থা লিখিত সাংগঠনিক প্রতিবেদনে তারা জমা দেবে। সেগুলো ছাপিয়ে একসাথে কেন্দ্রকে জানানো হবে।”
প্রতিনিধি সভায় প্রতিটি ওয়ার্ড ও থানা কমিটি থেকে একজন করে বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে।তাদের জমা দেওয়া লিখিত বক্তব্য যাচাই করতে কাজ করছে নগর আওয়ামী লীগের একটি কমিটি।
নগর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ বলেন, “সাংগঠনিক চিত্র সবাই জানেন। তৃণমূলে কর্মীদের মধ্যে নেতা হওয়ার জন্য কিছু প্রতিযোগিতা তো থাকেই। ”
মহিউদ্দিন-নাছিরের দ্বন্দ্বের বিষয়ে তিনি বলেন, “যা দেখছেন তা ব্যক্তিগত ব্যাপার। সাংগঠনিকভাবে তৃণমূলে সবাই ঐক্যবদ্ধ। ”
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগর কমিটির একজন শীর্ষ নেতা বলেন, “দলে সাংগঠনিক চর্চা কম। নেতারা মনে করেন কর্মীরা সচেতন হয়ে গেলে বুঝি তারা সমস্যায় পড়বেন।”
সভায় ‘অনুমোদিত’ বক্তব্যের বিষয়ে চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম বলেন, নগরের জ্যেষ্ঠ নেতারা আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
“দীর্ঘদিন সারাদেশের মানুষ মনে করছে এখানে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে মনে হয় সংকট প্রকট। যদি সফলভাবে প্রতিনিধি সভা করতে পারি সেটা অবশ্যই বড় ব্যাপার।”
এতে তৃণমূলের প্রকৃত চিত্র জানা যাবে কি না জানতে চাইলে এনামুল হক শামীম বলেন, “মাঠের পরিস্থিতি নানাভাবে জানা যেতে পারে। মূল লক্ষ্য সফলভাবে প্রতিনিধি সভা করা। ”
কোতোয়ালী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান মনসুর বলেন, “কারো কারো মধ্যকার অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে তাৎক্ষণিক বক্তব্যে সভায় উত্তেজনা হতে পারে। সেটা দলের জন্য ভালো হবে না।
“সব সুন্দর হলে তৃণমূলও খুশি। আশাকরি এই ঐক্যের সূত্রে ভবিষ্যতে সবকিছুতে ঐক্য থাকবে। তখন নির্দেশনার প্রয়োজন হবে না।”
প্রতিনিধি সভার প্রস্তুতি বৈঠকে অংশ নিতে শুক্রবার রাত ৯টার দিকে মহিউদ্দিন চৌধুরীর নগরীর চশমা হিলের বাসায় যান আ জ ম নাছির।
প্রস্তুতি সভায় মিলিত হওয়ার আগে প্রতিনিধি সম্মেলনের সভাস্থল কিং অব চিটাগাং পরিদর্শনে যান তারা।
প্রস্তুতি সভা শুরুর আগে আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, “আমাদের লক্ষ্য এক ও অভিন্ন। আমরা অতীতে এক ছিলাম, এখনও এক আছি; ভবিষ্যতেও এক থাকব।”
নাছির সঙ্গে কথা বলার মধ্যেই পাশে বসা মহিউদ্দিন চৌধুরী তাকে দ্রুত কথা সংক্ষেপ করতে তাগাদা দেন।
প্রস্তুতি সভার শুরুতে নাছির কুশলাদি জানতে চাইলে মুচকি হাসিতে জবাব দেন মহিউদ্নি চৌধুরী।
নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত এ দুই নেতা সিটি করপোরেশনের গৃহকর বাড়ানো ও নগরীর পাথরঘাটা থেকে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র সরানো নিয়ে সম্প্রতি বিরোধে জড়িয়ে পড়েন।
১০ এপ্রিল নগরীর লালদিঘী মাঠে এক সমাবেশে মহিউদ্দিন চৌধুরী তার সাধারণ সম্পাদক নাছিরের বিরুদ্ধে ১২টি খুনের অভিযোগ আনেন। জবাবে নাছির তার সভাপতির বক্তব্যকে ‘পাগলের প্রলাপ’ বলে তাকে খুনের প্রমাণ দিতে বলেন।
রাজনীতির মাঠে এক সপ্তাহ উত্তাপ ছড়িয়ে ১৭ এপ্রিল নগরীর শহীদ মিনারে মুজিবনগর দিবসের আলোচনা সভায় এ দুই নেতা এক মঞ্চে উঠে পরস্পরের হাত ধরে ঐক্যের ঘোষণা দেন।- বিডিনিউজ
