‘করোনা নেগেটিভ’ সনদ মিলছে সহজেই নির্ধারিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া পরীক্ষা ও সনদ প্রাপ্তির সুযোগ না থাকলেও কোভিড-১৯ তথা । পোশাক কারখানাসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান কর্মীদের কাজে যোগদানের ক্ষেত্রে পরীক্ষা রিপোর্ট বাধ্যতামূলক করার সুযোগে একটি অসাধু চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল অংকের টাকা।

এ সম্পর্কিত বিশেষ ধারনা-সচেতনতা না থাকায় জীবন ঝুঁকিতে পড়ছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা। আবার কেউ কেউ করোনায় আক্রান্ত না হয়েও পজিটিভ অর্থাৎ সংক্রমিত হয়েছেন মর্মে প্রত্যয়নপত্র নিতে চাইছেন।

এখনই সবাইকে সতর্ক করে কেন্দ্রীয়ভাবে সরকারি নির্দেশনা না এলে মহামারীর মধ্যে এটি আরেকটি সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মানুষের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে এই পরীক্ষা সনদ বাণিজ্যে নেমেছে একটি অসাধু চক্র। টাকার বিনিময়ে তারা দিচ্ছে করোনার নেগেটিভ সনদ। আবার কেউ আবার নিজের সুবিধার্থে নেগেটিভ রিপোর্টকে পজেটিভ করে দিতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দেনদরবার করছেন।

সম্প্রতি ঢাকার পাশে সাভারে করোনা পরীক্ষার ভুয়া সনদ দেয়ার ঘটনায় প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে মাদারিপুরের কালকিনিতে পজেটিভ রিপোর্ট নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে লাপাত্তা হয়েছেন এক ব্যক্তি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, ‘এটা তো ভয়াবহ উদ্বেগের বিষয়। মানুষের চাহিদার কারণে প্রতারকরা তৎপর হয়েছে। এখনই সবাইকে সতর্ক করতে কেন্দ্রীয়ভাবে নির্দেশনা দিতে হবে। জনগণকে সচেতন হতে হবে যে নির্ধারিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া করোনার টেস্ট এবং রেজাল্ট দেওয়া সম্ভব না।’

মাদারীপুরের ঘটনাটি ঘটেছে গত ১ জুন। ঢাকায় বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদে কর্মরত এক ব্যক্তি কালকিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নমুনা দেওয়ার পর তার ফলাফল নেগেটিভ আসে। কিন্তু তার চাহিদা একটি পজেটিভ সনদের।

এজন্য তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা পরীক্ষার স্যাম্পল ও রেজাল্টের ডাটা এন্ট্রির সঙ্গে যুক্ত মো. এনামুল হকের সঙ্গে আলাপ করেন বলেন, ‘আমার ফলাফল নেগেটিভ এসেছে। কিন্তু নেগেটিভ এসেছে এমন কাগজ দেওয়া যাবে?’

এমন প্রস্তাব শুনে আকাশ থেকে পড়ার অবস্থা হাসপাতালটির দায়িত্বরত কর্মকর্তা। দিনি দ্রুত উধর্তন কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করেন। ততক্ষণে পরিস্থিতি খারাপ দেখে সটকে পড়েন করোনার ‘পজেটিভ’ সনদ চাওয়া ব্যক্তি।

সাভারের ঘটনাটি বৃহস্পতিবারের। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে করোনা টেস্ট করালে নমুনা পরীক্ষার রেজাল্টের সনদ দেয়া হয়। কোনো পোশাক শ্রমিকের টেস্ট রিপোর্ট দেওয়া হলে কারখানা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি যাচাই করতে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগাযোগ করে।

একটি পোশাক কারখানার দুই শ্রমিক তাদের কর্মস্থলে ‘করোনাভাইরাস নেগেটিভ’ বলে প্রত্যয়নপত্র জমা দেয়। কিন্তু তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে হাসপাতালে যাচাই করতে গেলে প্রতারণার বিষয়টি সামনে আসে। হাসপাতাল থেকে দেওয়া সনদের তালিকায় এই দুজনের নাম ছিলো না।

পরে প্রত্যয়নপত্রসহ দুই শ্রমিককে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়ার পর কর্তৃপক্ষ জানায়, সনদ দুটি জাল। পরে দুই কর্মীকে সাভার মডেল থানা পুলিশের হাতে তুলে দেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ সায়েমুল হুদা।

আটক দু্জনের দে্ওয়া তথ্যে টাকার বিনিময়ে সনদ দেওয়া প্রতারক সাঈদ মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। সাভারের পশ্চিম ব্যাংক টাউন এলাকার ফামের্সি মালিক সাঈদ মিয়া একসময় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কাজ করতেন। এ ঘটনায় মামলাও হয়েছে সাভার মডেল থানায়।

জিজ্ঞাসাবাদে দুই কর্মী জানিয়েছেন, চাকরি বাঁচাতে সাভারের পশ্চিম ব্যাংক টাউন এলাকার ফামের্সি মালিক সাঈদ মিয়ার কাছ থেকে তারা টাকার বিনিময়ে ওই ভুয়া প্রত্যয়নপত্র কিনে কারখানায় জমা দেন।

পোশাক প্রস্তুতকারী মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নির্দেশনা মতে, করোনার নমুনা পরীক্ষার সনদ না দেখালে কর্মীদের কাজে যোগ দেওয়া যাবে না এমনটা বলা নেই।

ব্যক্তিগত সুরক্ষার পাশাপাশি বলা হয়েছে, যদি কারো মধ্যে করোনার উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে উর্তন কর্মকর্তাকে অবহিত করে সেই কর্মী কাজে আসবে না।

মহামারীর মধ্যে এমন সব ঘটনাকে ভয়াবহ উদ্বেগের উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এটা উদ্বেগের বিষয়। যদি কোনো কর্তৃপক্ষ যদি উপসর্গ নেই সুস্থ মানুষের কাছে করোনার সনদ চায় সেটাও ঠিক নয়। কারণ অসুস্থ মানুষই তো দিনের পর দিন অপেক্ষা করে টেস্ট করাচ্ছে। সেখানে সুস্থ মানুষও যোগ দিলে পরিস্থিতি তো ভয়াবহ হবে।’

এমন প্রতারণার উদ্ভব এবং এর থেকে উত্তরণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যেহেতু এক ধরণের ডিমান্ড আছে, তাই এই ধরণের প্রতারক চক্র তাদের অপতৎপরতা শুরু করেছে। তাই সংশ্লিষ্টদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষকের মতে, অনেক তথ্য মোবাইলে দেওয়া হয়। করোনা পরীক্ষা সংক্রান্ত নির্দেশনাও দেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে বলে দিতে হবে, নির্ধারিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া কেউ করোনা পরীক্ষা করতেও পারে না, ফলাফলও দিতে পারে না। যদি কেউ এমন কথা বা সনদ দেওয়ার প্রলোভন দেখায় তাহলে কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।

ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ আরো বলেন, ‘এছাড়া টেলিভিশনে সতর্কতামূলক বিজ্ঞাপন দিতে হবে। যারা এই ফাঁদে পা দিচ্ছেন তাদের যেমন সচেতন হতে হবে তেমনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকতে হবে। কোথাও এমনটা নজরে এলেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031