২১ মার্চ চট্টগ্রাম আসছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা । পটিয়ায় জনসভায় তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন। আওয়ামী লীগের মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যৌথভাবে এ জনসভার আয়োজন করেছে। তবে প্রশ্ন উঠেছে জনসভা নগরীতে না হয়ে পটিয়ায় কেন। এ নিয়ে ক্ষোভ অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল আওয়ামী লীগের যৌথ বর্ধিত সভায় মাঠ পর্যায়ের নেতা কর্মীদের প্রশ্নের সম্মুখে পড়তে হয় দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে। তারা নানাভাবে কারণ ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। তবে নেতৃবৃন্দের বক্তব্য থেকে মূল কারণটি জানতে পারেন নি নেতা কর্মীরা। কারণ কেউ বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছেতেই পটিয়ায় জনসভা হচ্ছে। কেউ বলেছেন নগরীতে মাঠ সংকটের কারণে জনসভা পটিয়ায় করতে হচ্ছে। আবার কেউ বলেছেন, মাঠ কোন সমস্যা নয়, এখন যেখানে জনসভার স্থান নির্ধারণ হয়েছে, তার চেয়েও বড় অন্তত আট/ দশটি মাঠ নগরীতে আছে। মাঠ সংকটের কথা যারা বলেছেন, তারা না জেনে বলেছেন। নেতৃবৃন্দের বক্তব্যে এধরনের সমন্বয়হীনতার কারণে তাদের বক্তব্যের মাঝেই উত্তেজিত ভঙ্গিতে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন দর্শক সারিতে বসা অনেক নেতা। ২১ মার্চের জনসভা উপলক্ষে গতকাল শনিবার চট্টগ্রামের মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে আয়োজিত দলের যৌথ বর্ধিত সভায় এ পরিস্থিতির উদ্ভব হয় ক্ষণে ক্ষণে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন প্রধানমন্ত্রীর জনসভা পটিয়ায় হবে বলার সাথে সাথে নগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হাসান মাহমুদ শমসেরসহ বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা না–না বলে প্রতিবাদ করে ওঠেন। এসময় তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জনসভা নগরীতেই হতে হবে। নগর আওয়ামী লীগের এসব নেতা–কর্মীরা আউটার স্টেডিয়াম অথবা এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা আয়োজনের প্রস্তাব করেন। মোশাররফের বক্তব্য চলাকালীন দর্শক সারিতেও উত্তেজনা পরিলক্ষিত হয়। এসময় তিনি বলেন, শেখ হাসিনার জনসভা করতে গিয়ে আমরা দেখেছি পলোগ্রাউন্ড ছাড়া অতবড় মাঠ আর নেই। আউটার স্টেডিয়াম ছাড়া, এ সময় দর্শক সারি থেকে উত্তেজিত কর্মীরা শোরগোল শুরু করে দেন। দু’জন দাঁড়িয়ে বলেন, প্যারেড কর্নারে হতে পারে। মন্ত্রী তাদের থামতে বলেন। তিনি বলেন, ‘এভাবে উত্তেজিত হয়ে লাভ নেই। পটিয়াতে হবে, এটা উনি ঠিক করেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঠিক করেছেন। এটা আমাদের করা না।’ পরে তিনি বলেন, পটিয়ার পাশাপাশি চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে এবং উত্তর জেলায়ও প্রধানমন্ত্রীর জনসভা হবে।
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, পটিয়ার জনসভাকে একটি সুশৃঙ্খল জনসভায় পরিণত করার জন্য আমাদেরকে সকল ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। জনসভায় ব্যাক্তিকেন্দ্রিক োগান না দিয়ে শুধু নৌকা–নেত্রী ও বঙ্গবন্ধুর নামে হ্মোগান দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। মোশাররফ হোসেন বলেন, জনসভায় শুধু নেতকর্মীরা আসলে হবেনা। জনগনকেও সাথে নিয়ে আসতে হবে। তাহলে নেত্রীর ম্যাসেজটা তারা জানবে। তিনি বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে সকল ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে দলের জন্য কাজ করতে হবে। আগামী নির্বাচনে সরকারের সকল উন্নয়ন–সফলতার চিত্র গুলো জনগনের সাথে তুলে ধরতে হবে। সভার শুরুতেই তিনি বক্তব্য দিয়ে বেলা ১১টায় চলে যান। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বক্তব্য দিয়ে চলে যাওয়ার পরপরই সভাস্থলে আসেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আজম নাছির উদ্দিন। দুই নেতা একই মঞ্চে থাকার কথা থাকলেও এবারও সাক্ষাত হয়নি এই দুই নেতার মধ্যে।
নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, চট্টগ্রাম শহরে মাঠ নেই এই কথা কিন্তু ঠিক নয়। চট্টগ্রাম শহরে মাঠ ছিল এবং এখনো আছে। আমি চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক। চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামে এটা করা যেত বা প্যারেড ফিল্ডেও মিটিং করা যেত। আরো অনেকগুলো মাঠ আছে। মাঠ নেই একথা ঠিক না। মাঠ নেই যারা বলছে, অনেকে হয়তো না জেনে বলছে। যেখানে মিটিং হচ্ছে তার চেয়ে বড় ৮/১০ টি মাঠ চট্টগ্রামে আছে। মেয়র বলেন, পলোগ্রাউন্ডে মাসব্যাপী বাণিজ্যমেলা শুরু হয়েছে। ভেন্যু নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। তবে আগামী এপ্রিলের তৃতীয়–চতুর্থ সপ্তাহে, অথবা মে মাসের প্রথম সপ্তাহে মহানগরে একটি জনসভা আয়োজনের জোর দাবি জানাচ্ছি।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব–উল–আলম হানিফ জানিয়েছেন, ‘এবারো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছে ছিল চট্টগ্রাম মহানগরীতে জনসভা করার। কিন্তু চট্টগ্রামে জনসভার মূল যে জায়গা, সেই পলোগ্রাউন্ড মাঠে বানিজ্য মেলা চলার কারণে এ মুহূর্তে মাঠ খালি করা যায় নি। হানিফ বলেন, দলীয় সভানেত্রীর জনসভার জায়গা ঠিক করার ক্ষেত্রে একটি বিষয়কে তারা মাথায় রাখেন যেন জনসভার গুরুত্ব আশপাশের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। তিনি বলেন, আমাদের সভানেত্রী সরকারের প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্রীয় কাজে উনি প্রচণ্ড ব্যস্ত থাকায় উনার পক্ষে বেশি সময় দেওয়া খুব কঠিন হয়ে পড়ে। তাই স্বাভাবিকভাবেই একটি জায়গায় একবারের বেশি দু’বার যাওয়া খুব কঠিন। এসব বিবেচনায় সভার জায়গা সেভাবে নির্ধারণ করা হয়। এবারও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা ছিল চট্টগ্রাম শহরের মধ্যেই জনসভা করার। কিন্তু হয় নি।
এ বিষয়ে উদ্যোগে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে মাহাবুব–উল–আলম হানিফ বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণের জন্য সার্বিক বিবেচনা করেই আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করব, এপ্রিলের মাঝামাঝি বা শেষ দিকে নগরীর পলোগ্রাউন্ডেই আরেকটি জনসভার করার জন্য। কারণ এরপর হয়ত নির্বাচনের আগে আর সময় পাওয়া যাবে না। মহানগরীর নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলেছি। প্রধানমন্ত্রীকে বলব, এখানে একটি জনসভা করার জন্য।
এদিকে জনসভার স্থান নিয়ে ক্ষোভ অসন্তোষ থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে নানা প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। যেহেতু সামনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, তাই নির্বাচনী সভা কেন্দ্রিক নানা প্রস্তুতিও চলছে। আওয়ামী লীগ নেতারা এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। বৈঠকে বিভেদ ভুলে ঐক্যের তাগিদ দেয়া হয়েছে। জনসভায় ৫ লাখ লোকের সমাগম ঘটাতে চান আওয়ামী লীগের নেতারা। গতকাল নগরীর মুসলিম হলে চট্টগ্রাম মহানগর, দক্ষিণ ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যৌথ বর্ধিত সভায় নেতারা সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পটিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর এই সভা সফল ও স্বার্থক করার আহ্বান জানানো হয়েছে ।
ওদিকে প্রধানমনত্রীর আগমন উপলক্ষে নগরীকে নান্দনিক সাজে সাজানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সিটি কর্পোরেশন। কর্পোরেশনের বিভাগীয়, শাখা ও প্রকৌশল বিভাগের প্রকৌশলীদের সাথে বৈঠক করে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রাম সফরকে কেন্দ্র করে পরিচ্ছন্ন ও নান্দনিকতার স্বার্থে নগরীতে চলমান সড়ক কর্তনসহ নানামুখী কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রেখে শাহ আমানত ব্রিজ থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত নগরীর প্রধান সড়ক, ভিআইপি সড়ক, অলিগলি, নালা–নর্দমা, মিডআইল্যান্ড, গোলচত্বর ও আশপাশের দোকানপাট সবকিছুকে পরিচ্ছন্ন ও নান্দনিক কার্যক্রমের আওতায় আনার নির্দেশনা দিয়েছেন।
