আখাউড়া রেলওয়ে জিআরপি থানার পুলিশ পূর্বাঞ্চল রেলপথের আখাউড়া সেকশনের আখাউড়া-আশুগঞ্জ, আখাউড়া-মন্দবাগ ও আখাউড়া-মুকুন্দপুর রেলপথের ১০০ কিলোমিটার এলাকায় গত পাঁচ বছরে (২০১৪-২০১৮) ২৪১ জনের লাশ উদ্ধার করেছে । এর মধ্যে ২১৪ জনকে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর, জিআরপি থানা ও অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে।
তথ্যানুসন্ধ্যানে জানা যায় উদ্ধারকৃত লাশগুলোর মধ্যে ৬৫ জন মহিলা ও ১৭৬ জন পুরুষ। তবে তাদের মধ্যে ২১৪ জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। বেওয়ারিশ হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের সহযোগিতায় দাফন করা হয় তাদের। পরিচয় পাওয়ায় বাকি ২৭ জনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
অজ্ঞাতপরিচয় লাশ উদ্ধারের ঘটনায় সাতটি ছাড়া বাকি ২৩৪টির ইউডি মামলা হয়।
অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদঘাটন না হওয়ার জন্য জিআরপি পুলিশের গাফিলাতিকে দায়ী করছে সচেতন মহল। অভিযোগ রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব অজ্ঞাত লাশের ছবি ইলেকট্রনিক কিংবা প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশ করে না। এমনকি অজ্ঞাত ব্যক্তিদের ছবি তুলে না রাখায় স্বজনরা লাশ চিহ্নিত করতে পারেন না। ফলে প্রতীক্ষার প্রহর গুনলেও বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফনের ফলে আর কোনোদিন তাদের প্রিয় মানুষটির খোঁজও মেলে না।
এসব মৃত্যুর কারণ হিসেবে জানা যায়, অসাবধানতায় রেললাইন পারাপার, ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ, চলন্ত ট্রেনে ওঠানামা ও ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা- এমন ঘটনাই বেশি। ট্রেনের ধাক্কা বা নিচে পড়ে এসব দুর্ঘটনার কারণে নিহতদের চেহারা ও দেহ বীভৎস হয়ে যায়। পাশাপাশি তাদের কোনো নাম-পরিচয় পাওয়া যায় না।
আবার স্টেশনে ভবঘুরে, ভিক্ষুকসহ ছিন্নমূল মানুষের মৃত্যু হলে তাদের অজ্ঞাতপরিচয় লাশ হিসেবে ময়নাতদন্ত শেষে দাফন করা হয়।
পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে পুলিশ সুপার চট্টগ্রাম (ভারপ্রাপ্ত) শেখ মো. শরীফুল ইসলাম জানান, সাধারণ মানুষ ট্রেন ভ্রমণে সচেতন হলে নিহতের সংখ্যা কমবে। তবে রেলওয়ে পুলিশ জনসচেতনতায় প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
আখাউড়া রেলওয়ে থানা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০১৮ সালের ১০ মে পর্যন্ত ৫৯টি লাশ উদ্ধার করে জিআরপি পুলিশ। এর মধ্যে ২৩টি মহিলা ও ৩৬টি পুুরুষের লাশ। সবচেয়ে লাশ উদ্ধার হয় গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে। ওই মাসে আটটি লাশ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ২ জন মহিলা ও ২ জন পুরুষের লাশ আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে উদ্ধার করা হয়। বাকি ৪ জন পুরুষের লাশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মন্দবাগ ও কসবা রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে উদ্ধার করে রেলওয়ে পুলিশ।
২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে পাওয়া গেছে ২ জন পুরুষের লাশ। আখাউড়া এবং গঙ্গাসাগর স্টেশন থেকে লাশ দুটি উদ্ধার করা হয়। ফেব্রুয়ারিতে ২ জন অজ্ঞাতপরিচয় পুরুষের লাশ আজমপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশন এলাকায় উদ্ধার করে পুলিশ। মার্চ মাসে ৪ জন লাশের মধ্যে আখাউড়া রেলওয়ে জংশন থেকে ১ জন মহিলা ও ১ জন পুরুষ, বাকি ২ জন মহিলার লাশ কসবা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশন থেকে উদ্ধার করা হয়।
এপ্রিল মাসে আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ইমামবাড়ি ও কসবা স্টেশন এলাকা থেকে উদ্ধারকৃত অজ্ঞাত ৪ জনের মধ্যে ২ জন মহিলার লাশ রয়েছে। মে মাসে ১ জন অজ্ঞাত পুরুষের লাশ পাঘাচং স্টেশন এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়।
ওই বছরের আগস্ট মাসে আখাউড়া, আজমপুর ও তালশহর স্টেশন এলাকা থেকে অজ্ঞাত ৪ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়। অক্টোবর মাসে আখাউড়া, আশুগঞ্জ, আজমপুর, কসবা ও পাঘাচং স্টেশন এলাকা থেকে উদ্ধারকৃত অজ্ঞাত ৫ জন লাশের মধ্যে ২ জন মহিলা রয়েছে। নভেম্বর মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে ১ জন মহিলার লাশ উদ্ধার করা হয়। ডিসেম্বর মাসে শুধু আখাউড়া স্টেশন এলাকা থেকে ৫ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করে রেলওয়ে জিআরপি পুলিশ।
২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ২৩ জন অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার করে রেলওয়ে পুলিশ। এর মধ্যে ৫ জন মহিলা ছাড়া অন্য মরদেহগুলো পুরুষের বলে আখাউড়া রেলওয়ে থানার ওসি শ্যামল কান্তি দাস জানান।
