সেনাবাহিনীকে এ বিষয়টি অবহিত করেছে পাকিস্তানের বেসামরিক সরকার। পাকিস্তান ক্রমাগত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একা হয়ে পড়ছে। তারা বলেছে, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একা হয়ে পড়বে পাকিস্তান। এ জন্য বেশ কিছু বিষয়ে একমত হয়ে কাজ করার কথা বলা হয়েছে। এ খবর দিয়ে এক্সক্লুসিভ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে পাকিস্তানের অনলাইন ডন। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের উরি এলাকায় সেনা ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলায় ১৮ ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর চির বৈরি এ দুটি দেশের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। দু’দেশই যুদ্ধংদেহী রূপ ধারণ করেছে। তার মধ্যে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের ভিতরে ভারত ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালিয়েছে। এ দাবি অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। এরই মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার সকালে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে কয়েকটি সেনা ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এতে কারা জড়িত সে বিষয়ে কোন ইঙ্গিত মেলে নি। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ সোমবার সর্বদলীয় বৈঠক আহ্বান করেন। ওই বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ দুটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। তা হলোÑ এক. আইএসআইয়ের মহাপরিচালক জেনারেল রিজওয়ান আখতার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নাসের জানজুয়াকে সঙ্গে নিয়ে চারটি প্রদেশ সফর করবেন। সেখানে তিনি প্রাদেশিক পরিষদের অ্যাপেক্স কমিটি ও আইএসআই সেক্টর কমান্ডারদের কাছে একটি বার্তা পৌঁছে দেবেন। তাতে বলা হবে, আইন প্রয়োগকারীরা যদি জঙ্গি গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয় তাতে হস্তক্ষেপ করবে না সেনা নেতৃত্বাধীন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এরই মধ্যে লাহোর থেকে এ সফর শুরু করেছেন জেনারেল আখতার। দুই. বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে আরও একটি। তা হলো, পাঠানকোট হামলার তদন্ত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। মুম্বই হামলা সংক্রান্ত মামলার বিচার কার্যক্রম অচল অবস্থায় পড়ে আছে রাওয়ালপিন্ডির দুর্নীতি বিরোধী আদালতে। নওয়াজ শরীফ ওই মামলাটি সচল করারও নির্দেশ দিয়েছেন। তবে এসব সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে বাকবিতন্ডা হয়েছে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ও আইএসআই-এর মহাপরিচালক রিজওয়ান আখতারের মধ্যে। সর্বদলীয় বৈঠকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব ইজাজ চৌধুরী একটি ভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাদের সামনে। এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। এতে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রীপরিষদের সিনিয়র সদস্য ও প্রাদেশিক পরিষদের কর্মকর্তারা। সেনাবাহিনীর পক্ষে নেতৃত্ব দেন জেনারেল রিজওয়ান আখতার। পররাষ্ট্র সচিব যে বক্তব্য উপস্থাপন করেন তাতে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থান পায়। বলা হয়, পাকিস্তান কূটনৈতিকভাবে একা হয়ে যাওয়ার মুখে রয়েছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। হাক্কানি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে যদি যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদা মতো ব্যবস্থা নেয়া না হয় তাহলে এ সম্পর্ক আরও খারাপ হতে পারে। ভারতের বিষয়েও তিনি মুখ খোলেন। বলেন, ভারতের প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে পাঠানকোট তদন্ত সম্পন্ন করা ও জৈশ ই মোহাম্মদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণ। তার এ বক্তব্যের পর আইএসআই মহাপরিচালক রিজওয়ান আখতার ও বেশ কিছু বেসামরিক কর্মকর্তার মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পররাষ্ট্র সচিব ইজাজ চৌধুরীর বক্তেব্যের প্রেক্ষিতে রিজওয়ান আখতার জানতে চান, পাকিস্তানকে নিঃসঙ্গ করে দেয়া প্রতিরোধে কি কি করা যেতে পারে। এ প্রশ্নের জবাবে ইজাজ চৌধুরী সরাসরি উত্তর দেন। তিনি বলেন, মাসুদ আজহার ও জৈশ ই মোহাম্মদ, হাফিজ সাঈদ, লস্করে তৈয়বা ও হাক্কানি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাহিদা মতো পদক্ষেপ নিতে হবে। জবাবে জেনারেল রিজওয়ান আখতার বলেন, যাকে প্রয়োজন তাকেই গ্রেপ্তার করা উচিত সরকারের। তাতে সেই ব্যক্তি যদি কোন বিশেষ কেউ হন বা নিষিদ্ধ ঘোষিত কোন গ্রুপের সদস্যও হয়। এ পর্যায়ে অপ্রত্যাশিতভাবে হস্তক্ষেপ করেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ। তিনি বলেন, বেসামরিক কর্তৃপক্ষ যখনই কোনো সুনির্দিষ্ট গ্রুপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে তখনই নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা তাদেরকে মুক্তি করে দেয়ার জন্য কাজ করেছে পর্দার আড়ালে। এ নিয়ে কথার লড়াই ছড়িয়ে পড়ে ওই বৈঠকে। তখন উত্তেজনা প্রশমনে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ কথা বলা শুরু করেন। তিনি জেনালে রিজওয়ান আখতারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, যেসব নীতি গ্রহণ করা হয়েছে তা রাষ্ট্রীয় নীতি। এমন নীতি বাস্তবায়নের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। তাই বর্তমানে যে সঙ্কট তাতে আইএসআই মহাপরিচালককে দায়ী করা হচ্ছে না। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন তারা মনে করেন পররাষ্ট্র সচিবের মন্তব্য ও মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের হস্তক্ষেপ আগেই সাজিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী, যাতে সেনাবাহিনীকে তৎপর করা যায়। তাদেরকে আন্তঃপ্রদেশ সফরে উদ্বুদ্ধ করা যায়। এসব বিষয়ে সেনা কর্মকর্তাদের কোন মন্তব্য পাওয়া যায় নি।
| M | T | W | T | F | S | S |
|---|---|---|---|---|---|---|
| 1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 |
| 8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 |
| 15 | 16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 |
| 22 | 23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 |
| 29 | 30 | 31 | ||||
