পুরনো ঢাকার শাহী পান কিংবা কলাতিয়া বাজারের বউ সোহাগী পান আবার জেনেভা ক্যাম্পের আগুন পান। হয়তো নামিদামি এসব পান অনেকেরই পরিচিত। কেউ খেয়েছেন, কেউবা নাম শুনেছেন। দামের দিক থেকে এই পানগুলো বেশ শৌখিন। কিন্তু পান পাওয়া যায় এক টাকায়। শুনে হয়ত অনেকেই অবাক হবেন। যেখানে পাড়ার দোকানে এক খিলি পানের দাম পাঁচ টাকা। সেখানে এক টাকায় পান?

হ্যাঁ, মাত্র এক টাকাতেও এক খিলি পান মেলে। সঙ্গে আছে সুপারি, জর্দা, খয়েরও। এক টাকায় পানের খিলির কথাটা রূপকথা মনে হলেও বাস্তবেই এই পান পাওয়া যায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরে। তবে পুরো মোহাম্মদপুর জুড়ে নয়। শুধু মাত্র মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ক্যাম্পে পাওয়া যাবে এই এক টাকার পান।

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের বসবাস এই ক্যাম্পে। সময়ের বিবর্তনে এখন তাঁরা এদেশেরই নাগরিক। ৭১ পরবর্তী সময় থেকে বংশ পরম্পরায় এখানেই বসবাস করে আসছেন তাঁরা। করছেন ব্যবসা। অধিকাংশ ব্যবসা বংশগত। এমনই একটি বংশগত ব্যবসায়ের ধারা বহন করছে “শাহআলম পান দোকান”। বাবার হাত ধরে পান ব্যবসায় এসেছিলেন শাহআলম। বাবা নেই, ব্যবসা আছে। ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে ধরে রেখেছেন বাবার রেখে যাওয়া ব্যবসা।

দোকানটির মালিক মো. শাহআলম বর্তমানে অসুস্থতার জন্য দোকানে আসেন না। শাহআলম ছাড়াও তার ছোট ভাই মো. বাবু বসেন দোকানে। বাকিরা কর্মচারী। সামান্য পান দোকানে আবার কর্মচারী? তাও চার জন?

দৈনিক ১০০ বিড়ার বেশি পান বিক্রি হয় শাহআলমের দোকানে। প্রতি দফায় যে দুজন করে দোকানে বসেন তাদের হাতের বিরাম নেই। ক্রেতা আছেই। তবে, একটি/দুটি পান দিতে আসেন, এমন ক্রেতা দেখা গেল না। সবারই চাহিদা কমপক্ষে পাঁচটি পান। আছে ঘরোয়া অনুষ্ঠানের জন্য বেশি পানের চাহিদা। সেই সঙ্গে প্রায় অর্ধশত ধরাবাঁধা খদ্দের। যাদের দৈনিকে চাহিদা ৩০-৪০ টি স্পেশাল পান।

শাহ আলমের পান দোকানে পান নিতে এসেছেন চান মিয়া। চান এই ক্যাম্পেরই বাসিন্দা। পান খাওয়ার দারুণ নেশা। তাই বারবার না এসে একবারে কয়েকটা পান নিয়ে যান। পান নেয়ার ফাঁকে ঢাকাটাইমসকে তিনি জানান, “যখন থেকে পান খাই, এখান থাইকাই খাই। বাইরে একটা পান পাচ টাকা। এহানে ৫ টাকায় ৫টা। আমার একটু বেশি পান খাওয়া হয়। তাই ১০টা নিলাম। দুইটা করে ৫ বারে খামু। ৩/৪ ঘণ্টা যাইবোগা। বাহির থেইকা নিতে গেলে তো ২০/৩০ টাকা লাগবো।”

এক টাকায় কিভাবে পান বিক্রি করছেন?

এক টাকার পানের সঙ্গে চুন, সুপারি, জর্দা সমেত সব থাকলে পাবেন না, পুরো একটি পান। একটি আস্ত পানকে ছয় ভাগে ভাগ করা হয়। প্রতি টুকরা দিয়ে বানানো হয় এক একটি খিলি পান। এক্ষেত্রে বড় আকারের রাজশাহীর পান ব্যবহার করা হয় বলে জানান, শাহ আলম পান দোকনের কর্মচারী আনোয়ার। আকারে অন্যান্য খিলি পানের চাইতে ছোট হলেও কদরে ছোট নয় মোহাম্মদপুরের এক টাকার পান।

শুধু ক্যাম্পে নয়। পানের চাহিদা আছে ক্যাম্পের বাহিরে বসবাসকারী ও রিক্সাচালকদের কাছে। চলার পথে পান নিতে এসেছেন রিক্সাচালক আব্দুল কাদের। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, “পান আমি এহান থিকাই নেই। অনেক বছর ধইরা। বাইরে এক টুকরা সুবারি বেশি চাইলে চিল্লায়। এরা পানের চাইতে সুবারি, জর্দা বেশিই দেয়। একটা পানরে ১০ টুকরা কেন ২০ টুকরা করুক। বাইরের চাইতে এইহানে ভাল।”

স্থানীয়দের থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, দোকানটি বেশ ব্যবসা সফল। দোকানের কর্মচারীরা প্রতি মাসের বেতন মাসেই পাচ্ছেন। পাচ্ছেন ঈদ বোনাস, পোশাকসহ প্রয়োজনীয় সব কিছু।

বর্তমানে লসে ব্যবসা করছেন বলে জানান শাহ্‌আলমের ছোট ভাই মো. বাবু। বাজারে পান দাম চড়া হওয়ার কারণে তাদের ক্ষতি সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

বাবু বলেন, “ ৬০ তাকা ৮০ টাকার পান ২৪০/২৬০ টাকা। লসে ব্যবসা করতেছি। দোকান না খুললে আরো লস। কাস্টমার নষ্ট হবে। দুই দিন দোকান বন্ধ দেখলে অনেক কাস্টমার এদিকে আসা বন্ধ করে দিবে। কারণ অনেকেই অনেক দূর থেকে আসে। তাদের জন্যই খুলি। লস হলে কি করার আছে?”

শাহআলম পান দোকান সকাল ছ’টায় খোলা হয়, আর বন্ধ হয় রাত দুটোয়। দৈনিক মাত্র চার ঘণ্টার জন্য বন্ধ থাকে দোকানটি। প্রতি দফায় দুজন করে, তিন দফায় মোট ছয়জন দোকানদার পালাক্রমে দোকানদারি করেন। সুতরাং কেউ শাহআলমের নতুন খদ্দের হতে চাইলে খুব একটা সমস্যা পরতে হবে না।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031