ইতিমধ্যে নকশা চূড়ান্ত হয়ে গেছে।  বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদ জাল দলিল করে যে বাড়ি দখল করেছিলেন, সেটিতে পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণের প্রাথমিক কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। তবে নির্মাণ কাজ এখনও শুরু হয়নি।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার শাহাবুদ্দিন কুরাইশি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘গুলশানের সেই বাড়িটি পুলিশকে দেয়া হয়েছে। সেখানে অফিসারদের কোয়ার্টার হবে। বহুতল ভবন হবে সেখানে। এর পুরো বিষয়টি দেখছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স।’

এ বিষয়ে পুলিশ সদরদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি- অর্থ ও উন্নয়ন) এ কে এম শহীদুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে। এর কাজ প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।’

তবে ভবনটি শেষ পর্যন্ত কয়তলা হবে, সে সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত নয় বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

এক প্রশ্নের জবাবে শহীদুর রহমান বলেন, ‘পূর্ত বিভাগ থেকে এটি বাস্তবায়ন করছে। তারাই মেইনলি এটি তদারকি করছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইতিমধ্যে পুলিশ সেখানে কাজও শুরু করেছে।

গত বছরের ২২ জুন পূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ডে চিঠি পাঠানো হয়। ২৮ জুন ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার হেলালুদ্দীন আহমদের স্বাক্ষরে পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ড থেকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে চিঠির জবাব পৌঁছে।

ওই চিঠিতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের চিঠির সূত্র উল্লেখ করে বলা হয়, ১৫৯, গুলশান এভিনিউর পরিত্যক্ত বাড়িটি বাংলাদেশ পুলিশের অনুকূলে প্রতীকী মূল্যে বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ডের কোনো আপত্তি নেই। সরকার বিষয়টি সদয় বিবেচনা করতে পারে।’

পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ডের অনাপত্তিপত্রে আরও বলা হয়, ঢাকা শহরে কর্মরত পুলিশ বিভাগের ঊর্ধ্বতন ও মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ করে পুলিশ কর্মকর্তাদের আবাসন সমস্যা কিছুটা নিরসনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাড়িটি প্রতীকী মূল্যে বরাদ্দ দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছে। এসব আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষ করে বাড়িটি পুলিশকে চূড়ান্তভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়।

এক বিঘা ১৩ কাঠা আয়তনের পরিত্যক্ত ওই বাড়িতে ১৯৭২ সাল থেকে অবৈধভাবে বসবাস করছিলেন বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ।

আদালতের রায়ে জাল দলিল করে বাড়িটি দখলের বিষয়টি প্রমাণ হওয়ার পর গত ৭ জুন গুলশান এভিনিউয়ের ১৫৯ নম্বর বাড়ি থেকে মওদুদকে উচ্ছেদ করা হয়। এরপর বাড়িটি নিয়ে চিঠি চালাচালি শুরু করে পুলিশ। পুলিশের পক্ষ থেকে বাড়িটি বরাদ্দ দেওয়ার জন্য পূর্ত মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠানো হয়।

এরপর পূর্ত মন্ত্রণালয় পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ডের মতামত চায়। বোর্ড পূর্ত মন্ত্রণালয়কে জানায়, প্রতীকী মূল্যে বাড়িটি বরাদ্দ দেওয়া যেতে পারে।

এরপর পূর্ত মন্ত্রণালয় তা রাজউককে পাঠালে ওপর মহলের সিদ্ধান্তে রাজউক এতে সম্মতি দেয়। এরপরই পুলিশের পক্ষ থেকে ওই বাড়িটির দখল নিয়ে সেখানে সাইনবোর্ড ঝুলানো হয়।

জানতে চাইলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউকের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা বাড়িটি পুলিশকে দিয়েছি। এখন পুলিশ সেখানে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে।’

রাজউক চেয়ারম্যান জানান, গত বছরের ৩ জুলাই রাজউকের বোর্ড সভায় পুলিশকে বাড়িটি দেয়ার চুড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।

যেভাবে বাড়িটি দখল করেন মওদুদ

ওপর ওই বাড়ির প্রকৃত মালিক ছিলেন পাকিস্তানি নাগরিক মো. এহসান। ১৯৬০ সালে তৎকালীন ডিআইটির কাছ থেকে তিনি ওই বাড়ির মালিকানা পান।

১৯৬৫ সালে বাড়ির মালিকানার কাগজপত্র এহসানের স্ত্রী অস্ট্রিয়ার নাগরিক ইনজে মারিয়া প্লাজের নামে নিবন্ধন করা হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এহসান স্ত্রীসহ ঢাকা ত্যাগ করেন। তারা আর ফিরে না আসায় ১৯৭২ সালে এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত হয়।

ওই বছরই মওদুদ ওই বাড়ির দখল নেন। কিন্তু ইনজে মারিয়া প্লাজের মৃত্যুর পর ‘ভুয়া’ আমমোক্তারনামা তৈরি করে মওদুদের ভাই মনজুর আহমদের নামে ওই বাড়ির দখল নেওয়া হয়েছে অভিযোগ এনে দুদক মামলা করলে ২০১৩ সালে শুরু হয় আইনি লড়াই।

মওদুদ সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত গেলেও রায় তার বিপক্ষে যায়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আপিলের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করলেও গত ৪ জুলাই তা খারিজ হয়ে যায়। ফলে মওদুদের বাড়ি ছাড়া অনিবার্য হয়ে পড়ে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031