মাত্র আট ব্যক্তির কাছে পুরো পৃথিবীর পঞ্চাশ শতাংশ সম্পদ রয়েছে অষ্টম সামাজিক ব্যবসা দিবসের উদ্বোধনকালে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন। মাত্র এক শতাংশ মানুষের হাতে রয়েছে পুরো ভারতের তেয়াত্তর শতাংশ সম্পদ। প্রচলিত আর্থিক ব্যবস্থায় দিন দিন এ অবস্থা আরও খারাপ হবে। পৃথিবীর সব সম্পদ ক্রমে মাত্র গুটিকয়েক মানুষের হাতে কুক্ষিগত হবে। এটা পৃথিবীর মানুষের জন্য কোন সুষ্ঠু ব্যবস্থা হতে পারে না। একমাত্র সামাজিক ব্যবসাই এ অবস্থা থেকে পৃথিবীকে বের করে আনতে পারে। ড. ইউনূস তাঁর বিখ্যাত ‘দ্য ওয়ার্ল্ড অব থ্রি জিরো’স এর প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলেন, দারিদ্র, বেকারত্ব ও নেট কার্বন নিঃসরণ শূন্য করতে পারলে পৃথিবীটা একটা পরিবার হয়ে উঠবে। পৃথিবী সবার বাসযোগ্য হবে।
তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাপারে সকলকে সতর্ক করে বলেন, প্রযুক্তি ভালো। আমাদের জন্য আশীর্বাদ। কিন্তু মানুষ কতটুকু প্রযুক্তি ব্যবহার করবে, তার সমন্বয় জরুরি। দুটোর মাঝখানে একটি বর্ডার লাইন থাকতে হবে। প্রযুক্তি যদি বর্ডার ক্রস করে তাহলেই সংকট প্রকট হবে। প্রযুক্তির জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, পৃথিবীর সব সমস্যা মানুষেরই সৃষ্টি। মানুষকেই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে।
গতকাল উৎসবমুখর পরিবেশে ভারতের বেঙ্গালুরু ইনফোসিস ইলেকট্রনিক সিটি ক্যাম্পাসে ৮ম সামাজিক ব্যবসা দিবসের দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠান শুরু হয়। ইউনূস সেন্টার আয়োজিত উক্ত অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের সামাজিক ব্যবসার উদ্যোক্তা, পরিচালনাকারী, শিক্ষাবিদ, গবেষক, ছাত্র ও উৎসাহী ব্যক্তিরা সামাজিক ব্যবসা নিয়ে আলোচনা করতে সমবেত হন। অনুষ্ঠানে বিশ্বের ৪২টি দেশ থেকে প্রায় ১২শ’ মানুষ অংশ নেন। এবার মুম্বাই ভিত্তিক ‘ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস, ইন্ডিয়া’ মুলধন সরবরাহ ও কর্পোরেট কর্মকান্ডের মাধ্যমে ভারতে সামাজিক ব্যবসার প্রসারে কাজ করে যাচ্ছে। ইনফোসিস তার আন্তর্জাতিক সদর দপ্তরে এ সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তাব দেয় এবং ভারতের উদ্ভাবনশীল প্লাটফরম আইএনকে এ সম্মেলন আয়োজনে সহযোগিতা করছে। এবারের মুল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘একটি তিন শূন্যের পৃথিবী : শূন্য দারিদ্র, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য নীট কার্বন নি:সরণ’। প্রফেসর ইউনূসের নতুন গ্রন্থ ‘এ ওয়ার্ল্ড অব থ্রি জিরোস’ –এ উল্লেখিত দারিদ্র, বেকারত্ব ও পরিবেশঝুঁকি মুক্ত বিশ্বের রূপকল্পের ভিত্তিতে প্রণীত হয় এবছরের সামাজিক ব্যবসা দিবসের বিষয়বস্তু। ড. ইউনূসের এ তিন শূন্যের পৃথিবীর রূপকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গত ৪০ বছর ধরে কাজ চলছে। অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য রাখেন ড্যানোন’র প্রধান নির্বাহী ইমানুয়েল ফেইবার। বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. দেবী প্রসাদ শেঠি, ভারত এনআইটিআই এর প্রধান নির্বাহী অমিতাভ কান্ত ও ইউনূস সেন্টারের প্রধান নির্বাহী লামিয়া মোরশেদ বক্তব্য রাখেন।
এতে বিভিন্ন সেশনে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, গবেষক, সামাজিক ব্যবসা উদ্যোক্তা ও পরিচালনাকারীগণ। এতে বিশ্বব্যাপী সামাজিক সমস্যাগুলোর সমাধানে বিভিন্ন উদ্যোগ, অভিজ্ঞতা, আইডিয়া ও কর্মপরিকল্পনা বিনিময় করা হয়।
