পেঁয়াজ আসছে পাকিস্তান থেকে । বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের বাজারে যতবার পেঁয়াজের দাম নিয়ে হৈচৈ হয়েছে ততবারই বাণিজ্য মন্ত্রী, সচিবরা পাকিস্তানের পেঁয়াজ আসছে বলে ‘ আগুন নেভানো’র চেষ্টা করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা করতে হয়নি। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, এবারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা পাকিস্তান-এর নাম মুখে আনার আগেই দেশটিতে অর্ডার গেছে হয়েছে কয়েক শ টন পেঁয়াজ কেনার। এমনকি মিয়ানমারের আগেই পাকিস্তানকে চিন্তা করা হয়েছে। কারণ পাকিস্তানের বাজারে এখনও পেঁয়াজের দাম কম। করাচির খুচরা বাজারে বাংলাদেশি অর্থে ৫০ টাকার কমে কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। বাংলাদেশ ৩০০ টন পেঁয়াজের যে ক্রয়- আদেশ পাঠিয়েছে তা চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত পৌঁছাতে খরচ পড়বে কেজি প্রতি ৫৫-৫৭ টাকা।

টন প্রতি ৬০০ ডলার হিসাবে। এটা পাকিস্তানের ব্যবসায়ী ও এক্সপোর্টারদের হিসাব। বাংলাদেশে কূটনীতিক যার অর্থনৈতিক কূটনীতি বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত তাদের হিসাবে এটি আরও কমে আসবে যখন বাল্ক কেনা হবে। সেটি পাকিস্তান বলে নয়, সব দেশেই বাল্কে বাড়তি সুবিধা রয়েছে। তাদের মতে, পেঁয়াজ বিদেশ থেকে কম দামে কেনা হলেও চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পৌঁছাতেই এটি দ্বিগুন হয়ে যায় রহস্যজনকভাবে। ফলে খুচরা বাজারে কেজি এক ‘শ টাকার কমে না নামার যে আশঙ্কা বাণিজ্যমন্ত্রী করেছেন সেটা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি! কূটনীতিকদের মতে, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পৌঁছানোর পথে পেঁয়াজের দাম আমদানী মূল্য ও খরচের দ্বিগুন করার কারণ চিহ্নিত করে সরকার লাগাম টানতে পারলেই দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে। অর্থাত ৭০-৮০ মধ্যে আসতে বাধ্য। তারা এ-ও বলছেন, মিশর, তুরস্ক, মিয়ানমার যেসব দেশ থেকে পেঁয়াজ আসছে কোথাও চট্টগ্রাম পর্যন্ত পৌঁছাতে টন প্রতি ৬০০-৭০০ ডলারে বেশি খরচ পড়বে না। পাকিস্তানি মিডিয়ার খবর: কমপক্ষে ১৫ বছর পর বাংলাদেশের কাছ থেকে পেঁয়াজ রপ্তানির অর্ডার পেয়েছে পাকিস্তান। করাচি ভিত্তিক রোশান এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে ঢাকার তাসো এন্টারপ্রাইজের মধ্যে ৩০০ টন পেঁয়াজ রপ্তানির চুক্তি হয়েছে সম্প্রতি। ট্রেড ডেভেলপমেন্ট অথোরিটি অব পাকিস্তানের (টিডিএপি) এক কর্মকর্তা খবরটি নিশ্চিত করেছেন বলে জানিয়েছে দেশটির দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল। সেখানে বলা হয়, প্রতিবেশী দেশের ওপর ভারতীয় পেঁয়াজ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশের স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। ওই কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, অর্ডার মতে প্রতি কন্টেইনারে ২৮ টন করে কমপক্ষে ১২ কনটেইনার পেঁয়াজ বাংলাদেশে যাবে। পরবর্তীতে আরও রপ্তানি আদেশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ প্রতিবছর ৭ লাখ থেকে ১১ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করে। এর ৭৫ ভাগই যেতো ভারত থেকে। স্থানীয় বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য তুরস্ক, মিয়ানমার ও মিসরের মতো বিকল্প বাজারের সন্ধান করছে ঢাকা। ওই কর্মকর্তা জানান, ভারতীয় নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশে পাকিস্তানের সম্ভাব্য বাজার সৃষ্টির সূযোগ এসেছে। তিনি আরও জানান, পেঁয়াজ বাণিজ্য নিয়ে দুই দেশের সরকারও একমত হয়েছে। একজন রপ্তানিকারক জানান, পাকিস্তানের বাজারের বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় পেঁয়াজ রপ্তানি লাভজনক হবে। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির বাণিজ্য টেকসই হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে তাদের। অল পাকিস্তান ফ্রুট অ্যান্ড ভেজিটেবল এক্সপোর্টার্স, ইমপোর্টার্স অ্যান্ড মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান ওয়াহিদ আহমেদ বলেন, বর্তমানে টন প্রতি পেঁয়াজের মূল্য ৬০০ ডলার হবে (এক্সপোর্ট খরচ সহ) পাকিস্তানি পণ্যের বাজার হিসেবে বাংলাদেশ বেশ গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য বলেও জানানো হয় প্রতিবেদনে। এশিয়ার মধ্যে চীনের পর বাংলাদেশেই বেশি পণ্য রপ্তানি করতে দেশটি। তবে উড়োজাহাজ যোগাযোগের স্বল্পতার কারণে সম্প্রতি তা কমে এসেছে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031