বিশ্বজুড়ে বহুল আলোচিত এক বিষয় জলবায়ু পরিবর্তন, প্রকৃতির চরম পরিস্থিতি সম্পর্কিত এই শব্দযুগল বর্তমানে । বিশ্বব্রহ্মা-ে এখন পর্যন্ত মানুষসহ তাবৎ প্রাণিকুলের একমাত্র বাসযোগ্য এই ধরিত্রী আজ বিপন্ন জলবায়ু পরিবর্তনের পরাকাষ্ঠায়। তবে প্রাকৃতিক কারণে নয়, এর জন্য দায়ী কথাকথিত সভ্য মানুষের নানা রকম অসভ্য কর্মকা-। একদিকে শক্তি উৎপাদনে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বায়ুম-লে জমছে কার্বন ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন, মিথেনসহ নানা ধরনের ক্ষতিকারক গ্যাস, যা গ্রিন হাউস

অ্যাফেক্টের মতো প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে পৃথিবীর বায়ুম-লকে করে তুলছে উত্তপ্ত। অন্যদিকে অবাধে বনাঞ্চল ধ্বংস করে চলছে নগরায়ন। পৃথিবীতে সৃষ্ট এই বাড়তি উত্তাপে গলছে দুই মেরুর বরফ, আর তার ফলে বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। ঘন ঘন হানা দিচ্ছে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাসসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের চলতি ধারা অব্যাহত থাকলে আর ৮০ বছরের মধ্যেই সাগরে তলিয়ে যেতে পারে বাংলাদেশের উপকূলের একটি বড় অংশ। অস্তিত্ব বিপন্ন হবে মালদ্বীপ, শ্রীলংকার মতো দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর। এমনকি পুরোপুরি সাগরে নিমজ্জিত হতে পারে নিউইয়র্ক, সাংহাই, লন্ডন, মুম্বাইসহ পৃথিবীর আরও বেশ কিছু মেগাসিটি। এমন পরিস্থিতিতে উষ্ণায়নে লাগাম টানতে জলবায়ু সম্মেলনের মাধ্যমে বারবার জানানো হচ্ছে আহ্বান। তবু কিছু দেশ বিশেষ করে শিল্পোন্নত দেশগুলো তা কানেই তুলছে না।

কিন্তু জলবায়ুর এই পরিবর্তনের প্রভাব পৃথিবীর সব জায়গায় সমান হারে পড়ছে কিনা তা নিয়ে মতদ্বন্দ্ব রয়েছে। বিশেষ করে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বাংলাদেশের মতো উপকূলীয় দেশগুলোর জন্য সর্বনাশ ডেকে আনলেও তা বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশ রাশিয়ার জন্য পৌষমাস নিয়ে আসছে বলে মনে করেন অনেকে। এর বড় কারণ রাশিয়ার ভৌগোলিক অবস্থান। ইজরায়েলের বিখ্যাত সংবাদমাধ্যম হারিদজের সাংবাদিক জোনাথন জ্যাকবসন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বলেন, পূর্ব ইউরোপ ও উত্তর এশিয়ায় অবস্থিত রাশিয়া গত কয়েক শতাব্দী ধরে বেশ কিছু প্রাকৃতিক সমস্যার সঙ্গে লড়াই করছে। যার মধ্যে অন্যতম, বরফে আচ্ছাদিত দেশটির ভূখ-ের বিশাল অংশ। যা ফসল ফলানো বা বসবাস কোনোটিরই উপযোগী নয়। আবার এই ভূমিসংলগ্ন সাগর, মহাসাগরগুলোও বরফে পরিপূর্ণ। ফলে এই সাগর ব্যবহার করে বাণিজ্যও বেশ কঠিন। তবে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে দুই মেরুর বরফ বা হিমবাহ যেভাবে গলা শুরু হয়েছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে রাশিয়া এই দুটি সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি লাভ করতে চলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় অন্যান্য দেশ যেখানে ধুঁকছে, সেখানে এই বৈশ্বিক সমস্যাটি রাশিয়াকে করে তুলতে পারে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ পরাশক্তি।

গোটা উত্তর এশিয়া নিয়ে গঠিত বিশ্বের অন্যতম শীতল জনবিরল অঞ্চল সাইবেরিয়া। যা পৃথিবীর মোট ভূভাগের প্রায় ৯ শতাংশ দখল করে আছে। বরফাচ্ছাদিত এ অঞ্চলের বার্ষিক গড় তাপমাত্রা মাত্র ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিরাটাকার এই ভূখ-ে জনসংখ্যা মাত্র ৩ কোটি ৩০ লাখ। ফলে এ অঞ্চলের কৃষি কাজ অত্যন্ত সীমিত। সাইবেরিয়ার অধিকাংশ এলাকাই রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ২০১৯ সালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্র বলছে, ২০৮০ সালের মধ্যে সাইবেরিয়ার একটি বিরাট অংশের বরফ গলে গিয়ে অর্ধ কোটি বর্গকিলোমিটার এলাকা কৃষিকাজের উপযোগী হয়ে উঠতে পারে। পাশাপাশি সুগম হবে এ অঞ্চলে মাটির নিচে সঞ্চিত বিপুল পরিমাণ খনিজ সম্পদ আহরণের পথও। বর্তমানে রাশিয়া ইতোমধ্যে বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ গম উৎপাদন করে। এ ছাড়া বার্লি এবং জই উৎপাদনেও দেশটি বিশ্বে শীর্ষে। রাশিয়া শুধু তার কৃষি উপযোগী দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল আবাদ করেই এই বিপ্লব নিয়ে এসেছে। এখন বরফ গলে নতুন ভূমি জেগে উঠলে কৃষি উৎপাদন আরও বহু গুণে বেড়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলে বর্তমানে একটি দারুণ রূপান্তর প্রক্রিয়া চলছে। বরফের কারণে বহু শতাব্দী ধরে এই ভূখ-ের জমির বিশাল অংশে কৃষিকাজ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। বিশেষ করে চীন ও মঙ্গোলিয়া সীমান্তসংলগ্ন দক্ষিণে দেশটির বিরাট এলাকা ছিল অনাবাদি। কিন্তু সম্প্রতি এলাকা যথেষ্ট নাতিশীতোষ্ণ হয়ে উঠেছে। জলবায়ু উষ্ণ হতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে এখানকার জমি চাষযোগ্য হচ্ছে। আবার পূর্ব রাশিয়াজুড়ে বন, জলাভূমি এবং তৃণভূমিগুলো ধীরে ধীরে সয়াবিন, ভুট্টা এবং গম চাষের যোগ হয়ে উঠেছে। সুতরাং বলাই যায় যে, জলবায়ু পরিবর্তনকে পুঁজি করে রাশিয়ার চেয়ে কোনো দেশই ভবিষ্যতে এত ভালো অবস্থানে থাকতে পারবে না। উত্তরের যে কোনো দেশের তুলনায় রাশিয়ার ভূমির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। আবার দেশটি তার দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীদের তুলনায়ও উত্তরে অনেক বেশি ভূমির মালিক, যা সমষ্টিগতভাবে ক্রমবর্ধমান ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, খরা এবং অতিরিক্ত উত্তপ্ত জলবায়ু থেকে বাস্তুচ্যুতি প্রতিরোধ করে বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্যার আবাসস্থল হয়ে উঠছে।

রুশ সরকারও নিজেদের আসন্ন ‘পৌষমাস’ সম্পর্কে যে সচেতন তা বোঝা গেছে, গত বছর জানুয়ারিতে সায়েন্স ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক রিপোর্টে। সেখানে বলা হয়, বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেশিরভাগ দেশ যেখানে ঐকমত্যে পৌঁছেছে সেখানে রাশিয়া চলছে ভিন্ন স্ট্র্যাটেজি নিয়ে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পষ্টভাবে তাদের জলবায়ুবিষয়ক বিজ্ঞানীদের বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণে বাকি বিশ্বের সঙ্গে বাধ্যতামূলকভাবে ঐকমত্য পোষন রাশিয়ার পক্ষে অনুকূল নয়। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে সায়েন্স ইনসাইডার দ্বারা পর্যালোচনা করা এক নথিতে দেখা যায়, রাশিয়াকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গি প্রচারে বা অধ্যয়নে তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অর্থায়ন করবে না। যার মাধ্যমে স্পষ্ট হয় যে, রাশিয়া খুব শিগগিরই হয়তো জীবাশ্ম জ্বালানি ত্যাগ করা এবং শিল্পায়ন বৃদ্ধি সীমিত করবে না।

তবে জলবায়ু পরিবর্তন নামে প্রকৃতির এই অভিশাপ থেকে যে রাশিয়া শতভাগ নিরাপদ থাকতে পারছে বা পারবে এমনটাইও ভাবার কারণ নেই। উষ্ণায়ন যত বাড়ছে, বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মতো রাশিয়াতেও বারবার হানা দিচ্ছে বন্যা, খরা, দাবদাহ, অতিবৃষ্টি ও হড়কা বান। বাড়ছে দাবানলের ঘটনাও। এ ছাড়া বরফ গলে পরিচিত শীতল পরিবেশ পাল্টে যাওয়ার প্রভাব পড়ছে প্রাণিজগৎ ও বাস্তুসংস্থানে। এ ছাড়া চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে প্যারিসে যে জলবায়ু চুক্তি হয়েছে রাশিয়া তার অংশ। সে হিসেবে বিশ্বে চতুর্থ বৃহত্তম গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণকারী দেশ হিসেবে রাশিয়া জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এখন দেখার বিষয় সেই প্রতিশ্রুতি রাশিয়া কতটুকু রক্ষা করে আর কতটুকু জলবায়ু পরিবর্তনের সুবিধা আদায় করে নেয়।

জলবায়ু পরিবর্তন, প্রকৃতির চরম পরিস্থিতি সম্পর্কিত এই শব্দযুগল বর্তমানে বিশ্বজুড়ে বহুল আলোচিত এক বিষয়। বিশ্বব্রহ্মা-ে এখন পর্যন্ত মানুষসহ তাবৎ প্রাণিকুলের একমাত্র বাসযোগ্য এই ধরিত্রী আজ বিপন্ন জলবায়ু পরিবর্তনের পরাকাষ্ঠায়। তবে প্রাকৃতিক কারণে নয়, এর জন্য দায়ী কথাকথিত সভ্য মানুষের নানা রকম অসভ্য কর্মকা-। একদিকে শক্তি উৎপাদনে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বায়ুম-লে জমছে কার্বন ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন, মিথেনসহ নানা ধরনের ক্ষতিকারক গ্যাস, যা গ্রিন হাউস

অ্যাফেক্টের মতো প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে পৃথিবীর বায়ুম-লকে করে তুলছে উত্তপ্ত। অন্যদিকে অবাধে বনাঞ্চল ধ্বংস করে চলছে নগরায়ন। পৃথিবীতে সৃষ্ট এই বাড়তি উত্তাপে গলছে দুই মেরুর বরফ, আর তার ফলে বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। ঘন ঘন হানা দিচ্ছে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাসসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের চলতি ধারা অব্যাহত থাকলে আর ৮০ বছরের মধ্যেই সাগরে তলিয়ে যেতে পারে বাংলাদেশের উপকূলের একটি বড় অংশ। অস্তিত্ব বিপন্ন হবে মালদ্বীপ, শ্রীলংকার মতো দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর। এমনকি পুরোপুরি সাগরে নিমজ্জিত হতে পারে নিউইয়র্ক, সাংহাই, লন্ডন, মুম্বাইসহ পৃথিবীর আরও বেশ কিছু মেগাসিটি। এমন পরিস্থিতিতে উষ্ণায়নে লাগাম টানতে জলবায়ু সম্মেলনের মাধ্যমে বারবার জানানো হচ্ছে আহ্বান। তবু কিছু দেশ বিশেষ করে শিল্পোন্নত দেশগুলো তা কানেই তুলছে না।

কিন্তু জলবায়ুর এই পরিবর্তনের প্রভাব পৃথিবীর সব জায়গায় সমান হারে পড়ছে কিনা তা নিয়ে মতদ্বন্দ্ব রয়েছে। বিশেষ করে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বাংলাদেশের মতো উপকূলীয় দেশগুলোর জন্য সর্বনাশ ডেকে আনলেও তা বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশ রাশিয়ার জন্য পৌষমাস নিয়ে আসছে বলে মনে করেন অনেকে। এর বড় কারণ রাশিয়ার ভৌগোলিক অবস্থান। ইজরায়েলের বিখ্যাত সংবাদমাধ্যম হারিদজের সাংবাদিক জোনাথন জ্যাকবসন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বলেন, পূর্ব ইউরোপ ও উত্তর এশিয়ায় অবস্থিত রাশিয়া গত কয়েক শতাব্দী ধরে বেশ কিছু প্রাকৃতিক সমস্যার সঙ্গে লড়াই করছে। যার মধ্যে অন্যতম, বরফে আচ্ছাদিত দেশটির ভূখ-ের বিশাল অংশ। যা ফসল ফলানো বা বসবাস কোনোটিরই উপযোগী নয়। আবার এই ভূমিসংলগ্ন সাগর, মহাসাগরগুলোও বরফে পরিপূর্ণ। ফলে এই সাগর ব্যবহার করে বাণিজ্যও বেশ কঠিন। তবে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে দুই মেরুর বরফ বা হিমবাহ যেভাবে গলা শুরু হয়েছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে রাশিয়া এই দুটি সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি লাভ করতে চলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় অন্যান্য দেশ যেখানে ধুঁকছে, সেখানে এই বৈশ্বিক সমস্যাটি রাশিয়াকে করে তুলতে পারে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ পরাশক্তি।

গোটা উত্তর এশিয়া নিয়ে গঠিত বিশ্বের অন্যতম শীতল জনবিরল অঞ্চল সাইবেরিয়া। যা পৃথিবীর মোট ভূভাগের প্রায় ৯ শতাংশ দখল করে আছে। বরফাচ্ছাদিত এ অঞ্চলের বার্ষিক গড় তাপমাত্রা মাত্র ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিরাটাকার এই ভূখ-ে জনসংখ্যা মাত্র ৩ কোটি ৩০ লাখ। ফলে এ অঞ্চলের কৃষি কাজ অত্যন্ত সীমিত। সাইবেরিয়ার অধিকাংশ এলাকাই রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ২০১৯ সালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্র বলছে, ২০৮০ সালের মধ্যে সাইবেরিয়ার একটি বিরাট অংশের বরফ গলে গিয়ে অর্ধ কোটি বর্গকিলোমিটার এলাকা কৃষিকাজের উপযোগী হয়ে উঠতে পারে। পাশাপাশি সুগম হবে এ অঞ্চলে মাটির নিচে সঞ্চিত বিপুল পরিমাণ খনিজ সম্পদ আহরণের পথও। বর্তমানে রাশিয়া ইতোমধ্যে বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ গম উৎপাদন করে। এ ছাড়া বার্লি এবং জই উৎপাদনেও দেশটি বিশ্বে শীর্ষে। রাশিয়া শুধু তার কৃষি উপযোগী দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল আবাদ করেই এই বিপ্লব নিয়ে এসেছে। এখন বরফ গলে নতুন ভূমি জেগে উঠলে কৃষি উৎপাদন আরও বহু গুণে বেড়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলে বর্তমানে একটি দারুণ রূপান্তর প্রক্রিয়া চলছে। বরফের কারণে বহু শতাব্দী ধরে এই ভূখ-ের জমির বিশাল অংশে কৃষিকাজ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। বিশেষ করে চীন ও মঙ্গোলিয়া সীমান্তসংলগ্ন দক্ষিণে দেশটির বিরাট এলাকা ছিল অনাবাদি। কিন্তু সম্প্রতি এলাকা যথেষ্ট নাতিশীতোষ্ণ হয়ে উঠেছে। জলবায়ু উষ্ণ হতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে এখানকার জমি চাষযোগ্য হচ্ছে। আবার পূর্ব রাশিয়াজুড়ে বন, জলাভূমি এবং তৃণভূমিগুলো ধীরে ধীরে সয়াবিন, ভুট্টা এবং গম চাষের যোগ হয়ে উঠেছে। সুতরাং বলাই যায় যে, জলবায়ু পরিবর্তনকে পুঁজি করে রাশিয়ার চেয়ে কোনো দেশই ভবিষ্যতে এত ভালো অবস্থানে থাকতে পারবে না। উত্তরের যে কোনো দেশের তুলনায় রাশিয়ার ভূমির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। আবার দেশটি তার দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীদের তুলনায়ও উত্তরে অনেক বেশি ভূমির মালিক, যা সমষ্টিগতভাবে ক্রমবর্ধমান ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, খরা এবং অতিরিক্ত উত্তপ্ত জলবায়ু থেকে বাস্তুচ্যুতি প্রতিরোধ করে বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্যার আবাসস্থল হয়ে উঠছে।

রুশ সরকারও নিজেদের আসন্ন ‘পৌষমাস’ সম্পর্কে যে সচেতন তা বোঝা গেছে, গত বছর জানুয়ারিতে সায়েন্স ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক রিপোর্টে। সেখানে বলা হয়, বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেশিরভাগ দেশ যেখানে ঐকমত্যে পৌঁছেছে সেখানে রাশিয়া চলছে ভিন্ন স্ট্র্যাটেজি নিয়ে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পষ্টভাবে তাদের জলবায়ুবিষয়ক বিজ্ঞানীদের বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণে বাকি বিশ্বের সঙ্গে বাধ্যতামূলকভাবে ঐকমত্য পোষন রাশিয়ার পক্ষে অনুকূল নয়। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে সায়েন্স ইনসাইডার দ্বারা পর্যালোচনা করা এক নথিতে দেখা যায়, রাশিয়াকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গি প্রচারে বা অধ্যয়নে তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অর্থায়ন করবে না। যার মাধ্যমে স্পষ্ট হয় যে, রাশিয়া খুব শিগগিরই হয়তো জীবাশ্ম জ্বালানি ত্যাগ করা এবং শিল্পায়ন বৃদ্ধি সীমিত করবে না।

তবে জলবায়ু পরিবর্তন নামে প্রকৃতির এই অভিশাপ থেকে যে রাশিয়া শতভাগ নিরাপদ থাকতে পারছে বা পারবে এমনটাইও ভাবার কারণ নেই। উষ্ণায়ন যত বাড়ছে, বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মতো রাশিয়াতেও বারবার হানা দিচ্ছে বন্যা, খরা, দাবদাহ, অতিবৃষ্টি ও হড়কা বান। বাড়ছে দাবানলের ঘটনাও। এ ছাড়া বরফ গলে পরিচিত শীতল পরিবেশ পাল্টে যাওয়ার প্রভাব পড়ছে প্রাণিজগৎ ও বাস্তুসংস্থানে। এ ছাড়া চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে প্যারিসে যে জলবায়ু চুক্তি হয়েছে রাশিয়া তার অংশ। সে হিসেবে বিশ্বে চতুর্থ বৃহত্তম গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণকারী দেশ হিসেবে রাশিয়া জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এখন দেখার বিষয় সেই প্রতিশ্রুতি রাশিয়া কতটুকু রক্ষা করে আর কতটুকু জলবায়ু পরিবর্তনের সুবিধা আদায় করে নেয়।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031