দেশের অর্থনীতিকে করোনা ভাইরাস মহামারী সৃষ্ট সংকট থেকে বাঁচতে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন। এই প্রণোদনার অর্থ বাংলাদেশের প্রতিটি স্তরের মানুষ পাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

বুধবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে অনুদান গ্রহণকালে তিনি একথা বলেন। এসময় মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অনুদানের চেক গ্রহণ করেন।

এই প্রণোদনা শুধু আজকের জন্য নয় উল্লখ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্থনীতির চাকা যাতে সচল থাকে সেজন্য ইতোমধ্যে আমরা প্রণোদনা ঘোষণা দিয়েছি, সেটা সর্বস্তরের মানুষ পাবে। শিল্প কলকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে সচল থাকতে পারে সেই ব্যবস্থাও নিয়েছি। আমরা আমাদের জিডিপির ৩.৩ শতাংশ এই বিশেষ প্রণোদনা খাতে এবার ব্যয় করব, সেই সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি। সেই লক্ষ্য সামনে রেখে এবং সেই সুযোগটা সৃষ্টির জন্যই আমরা ৩ বছর মেয়াদি প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণা দিয়েছি। আশাকরি এই অবস্থার আমরা উত্তোরণ ঘটাতে পারবো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের একেবারে নিন্ম আয়ের মানুষ- আমাদের দিন মজুর শ্রেণী কামার-কুমার, রিক্সাওয়ালা, ভ্যানওয়ালা থেকে শুরু করে ছোট ছোট দোকানদারগণ এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী-প্রত্যেকের কথাই আমরা চিন্তা করেছি এবং প্রত্যেকের দিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা এই প্রণোদণার ঘোষণা দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে, সুরক্ষিত করতে হবে, পরিবারকে সুরক্ষা করতে হবে। এজন্যই বাইরের লোকের সঙ্গে না মেশা, জনসমাগম যেখানে সেখানে না যাওয়ার মাধ্যমে নিজেকে সুরক্ষিত করার পাশাপাশি অন্যকেও সুরক্ষিত করতে হবে। সেই দায়িত্ব সকলকে পালন করতে হবে। তিনি বলেন, যদিও খেটে খাওয়া দিন-মজুর শ্রেণির এবং ছোট ব্যবসায়ীদের কষ্ট হচ্ছে, তাদের জন্য সময়টা খুব দু:সময়, সেটা আমি বুঝতে পারি।

প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ বিতরণ কাজে যে কোন অনিয়ম এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আমি জানি ত্রাণ সরররাহের কাজে যোগ দেয়া এমন কিছু লোক রয়েছে যাদের এটাই যেন প্রফেশন হয়ে যায় এবং ত্রাণ দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে। সে রকম যেন না হয় বরং ত্রাণ যাতে সকলের কাছে পৌঁছায় সেই ব্যবস্থাই আমরা নিতে যাচ্ছি এবং নিব।

সরকার প্রধান বলেন, এই রিলিফ দিতে কোন সমস্যা হলেই তিনি সঙ্গে সঙ্গেই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছেন। রিলিফ দুর্নীতির সঙ্গে যেই জড়িত আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং ব্যবস্থা নেব। কারণ গরিবদের জন্য সরবরাহকৃত খাদ্যের কেউ অপব্যবহার করবে এটা আমরা কখনোই বরদাশত করবোনা। সে আমার দলেই হোক বা অন্য দলেরই হোক, আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় এই দু:সময়ে জনগণের পাশে না থেকে কেবল সমালোচনার স্বার্থে সমালোচনাকারী রাজনৈতিক দল এবং কতিপয় সূধী সমাজের ব্যক্তি বিশেষের কঠোর সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য হলো আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, অনেকে অনেক কথা বলে বেড়াচ্ছেন। অনেক দল বা সূধী সমাজ অনেকেই, অথচ তারা কিন্তু মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসছেন না। সমালোচনাতেই ব্যস্ত। সরকার প্রধান বলেন, এ ধরনের লোক থাকবেই, সব সমাজেই থাকে। তারা কথা বিক্রি করে যাবে, এটাই তাদের ব্যবসা। এটাই তারা করে যাচ্ছেন। আমি বলবো বেশি কথা না বলে কয়েকটা মানুষকে সাহায্য করেন। এই দু:খের সময়ে মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ান।

তিনি বলেন, আমরা আমাদের দায়িত্ববোধ সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন এবং সেটা আমরা কার্যকর করে যাচ্ছি। চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আইনশৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনীর প্রতিটি সদস্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সাধারণ মানুষকে যেমন খাদ্য সহায়তা দিচ্ছি তেমনি ১০ টাকা কেজি দরে ওএমএস’র মাধ্যমে চাল সরবরাহের ব্যবস্থা করেছি। এজন্য যারা তালিকার বাইরে রয়েছে তাদের জন্য আমরা কার্ড তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। অর্থাৎ প্রতিটি মানুষ যেন সহায়তা পায় সেটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। যাতে প্রত্যেকের ঘরে এই ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছতে পারে।

এ সময় সমাজের বিত্তবানরা যারা সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন তারা যেন সরকার, প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সহযোগিতায় ত্রাণ বিতরণ করেন। যাতে লোক সমাগম না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখারও তিনি আহবান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রত্যেকটি এলাকায় কমিটি করে দিযেছি, স্বেচ্ছাসেবকরা রয়েছে। তাদের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করলে সকলেই পাবে।

তিনি ত্রাণ সহযোগিতা প্রদানে এগিয়ে আসা ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আপনারা যে সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন তা মানুষের কল্যাণের কাজে লাগবে। সেজন্য আমি আপনাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বিত্তবানদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা আরো বলেন, আপনারা আপনাদের স্ব-স্ব অবস্থান থেকে সীমিত ভাবে, সুরক্ষিত থেকে কাজ করে যান। তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতি যেন স্থবির না হয়ে যায় এবং গতিশীলতা বজায় থাকে, সেভাবেই আমাদের সকলকে যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031