প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহামারিয অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত আকারে অব্যাহত রাখারয পুরো বিশ্বকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন । শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলায় দেয়া ঐতিহাসিক ভাষণের ৪৬ বছর পূর্তি উপলক্ষে আলোচনা সভা এবং ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমির নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন উপলক্ষে পরররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এই আহ্বান জানান।

করোনাভাইরাস মহামারি থেকে বিশ্বের মানুষের মুক্তি কামনা করে তিনি বলেন, “আবারও অর্থনীতির চাকা সচল হোক, সকল মানুষ সুন্দরভাবে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারুক, সেটাই আমরা চাই। সেজন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। সারাবিশ্বকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।” দেশের উন্নয়ন ও মানুষের সুন্দর জীবন নিশ্চিতে সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “সব থেকে গুরুত্ব দিয়েছি আমাদের খাদ্যের উপর। কারণ আমি জানি, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বে হয়ত দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে যেন কোনোমতে সেই দুর্ভিক্ষের ছোঁয়া না লাগে।

তাই আমরা যতটুকু পারি খাদ্য উৎপাদন করা, খাদ্য বিতরণ করা, দরিদ্র মানুষকে বিনা পয়সায় খাদ্য দেয়া এবং খাদ্য নিশ্চয়তা দেবার চেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি।”

পাশপাশি দেশের অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত আকারে অব্যাহত রাখার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের জিডিপি যেটা টার্গেট ছিল যে ৮.২ শতাংশের উপরে যাব, সেটা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। আমরা এবার ৫.২৪ শতাংশের মত অর্জন করতে পেরেছি। কিন্তু আমরা আশা করি আগামীতে আমাদের প্রবৃদ্ধি আমরা আরো বেশি অর্জন করতে সক্ষম হব। আর সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ সব সময় চায় সারা বিশ্বে একটা শান্তি বজায় থাকুক। … পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেখানে নানা ধরনের কনফ্লিষ্ট আছে, সেখানে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে আমাদের স্বশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ বাহিনী, প্রত্যেকে সেখানে বিশেষ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।”

শান্তি রক্ষা মিশনে কাজ করতে গিয়ে জীবন দেয়া বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে সরকার প্রধান বলেন, “এই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ সব সময় প্রস্তুত। আমরা চাই সারা বিশ্বে শান্তি থাকুক।”

বিশ্বের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে সহযেগিতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “এই বিশ্বে কেউ একা চলতে পারে না। তাই সকলের সহযোগিতা আমাদের কাম্য। পাশাপাশি কাউকে কোনো ধরনের সহযোগিতা যদি করতে হয়, আমরা সেটা করতেও প্রস্তুত।”

১৯৭৪ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৪৬ বছর আগে তার সেই ভাষণে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরা হয়।

সেই ভাষণে জাতির পিতা বলেন, ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’। এখনও সেটাই যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল চালিকা শক্তি, সে কথা অনুষ্ঠানে বলেন তার মেয়ে আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মহামারির কারণে জাতিসংঘের ৭৫ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম বিশ্ব নেতৃবৃন্দ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিচ্ছেন ‘ভার্চ্যুয়ালি’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধারণকৃত ভাষণ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেখানো হবে ২৬শে সেপ্টেম্বর।

জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় দেয়া ভাষণের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “জাতির পিতার তার ভাষণে এদেশের দুঃখী মানুষের কথা বলেছিলেন, এদেশের সার্বিক উন্নয়নের কথাই বলেছিলেন। সেই সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বব্যাপী বঞ্চিত মানুষের কথা তিনি বলেছেন। আমরা সেটা বিশ্বাস করি। তাই আমাদের উন্নয়নের মূল লক্ষ্যটা হচ্ছে তৃণমূলের মানুষ।”

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আজকের বিশ্বে কূটনৈতিক মিশনের দায়িত্বও অনেক বদলে গেছে। এখন শুধু রাজনৈতিক কূটনীতি না, দরকার হয় অর্থনৈতিক কূটনীতি।

“ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটানো, সকলের সঙ্গে মিশে কীভাবে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জন করা যায়, উন্নয়ন করা যায়, একে অপরকে কীভাবে সহযোগিতা করা যায়, একে অপারের সহযোগিতার মধ্য দিয়ে বিশ্বে শান্তি কীভাবে নিয়ে আসা যায়- সেইভাবেই আমাদের ডিপ্লোমেসি এখন চালাতে হবে।”

অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং ফরেন সার্ভিস একাডেমি প্রান্তে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমসহ ঊর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031