বাংলাদেশের প্রথম স্থানীয় মুদ্রা কার্ড, ‘টাকা পে’ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর লক্ষ্য হচ্ছে ভিসা, মাস্টারকার্ড ও অ্যামেক্সের মতো আন্তর্জাতিক কার্ডের ওপর নির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা।

প্রধানমন্ত্রী আজ বুধবার সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই ‘ন্যাশনাল কার্ড স্কিম’ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি), সোনালী ব্যাংক পিএলসি, ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি ও দি সিটি ব্যাংক লিমিটেড।

অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, “আজকের জাতীয় কার্ড স্কিম ‘টাকা পে’ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার আরেকটি পদক্ষেপ। এই সার্বভৌম দেশীয় পেমেন্ট সিস্টেমটি বাংলাদেশে ‘ক্যাসলেস সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠায় একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। যেটি দেশে দুর্নীতি ও বিদেশি নির্ভরতা হ্রাস করবে।”

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এবং স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি) গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার।

বিবির নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক জাতীয় কার্ড স্কিম ‘টাকা পে’-এর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম, ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আরএফ হোসেন এবং সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাশরুর আরেফিন তাদের অফিসে সেবাগ্রহীতার মাধ্যমে ‘টাকা পে’ কার্ডের ব্যবহার, অনলাইন পেমেন্ট এবং এটিএম থেকে টাকা উত্তোলন প্রদর্শন করেন।

প্রাথমিকভাবে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক, বেসরকারি খাতের দি সিটি ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংক ‘টাকা পে’ কার্ড সেবা চালু করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত ইলেকট্রনিক পেমেন্ট প্ল্যাটফরম ‘ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশ’ ব্যবহারের মাধ্যমে জাতীয়ভাবে একই সেবা দেবে ‘টাকা পে’।

প্রাথমিকভাবে অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য এটি চালু হলেও পরে টাকা-রুপি কার্ড চালু করা হবে। যা দিয়ে গ্রাহক ভারতে লেনদেন করতে পারবেন।

সূত্র মতে, প্রতিবেশী দেশগুলোতেও এমন নিজস্ব কার্ড আছে, সেগুলো হলো- ভারতের কার্ড ‘রুপে’, পাকিস্তানের ‘পাক পে’, শ্রীলঙ্কার ‘লঙ্কা পে’ ও সৌদি আরবে আছে ‘মাদা’।

ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, ভিসা, মাস্টারকার্ড ও অ্যামেক্সের মতো আন্তর্জাতিক সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব প্ল্যাটফরম আছে এবং তাদের কার্ড সারা বিশ্বে গ্রহণযোগ্য। লেনদেন মধ্যস্থতা করার নিজস্ব ব্যবস্থাও তাদের আছে।

তবে টাকা পে কার্ডের লেনদেন নিষ্পত্তি হবে শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীন ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ অব বাংলাদেশ (এনপিএসবি)-এর মাধ্যমে। এখন এক ব্যাংকের গ্রাহক অন্য ব্যাংকের এটিএম থেকে টাকা তুলতে গেলে এই এনপিএসবি সুবিধা ব্যবহার করেন।

জানা গেছে, অন্য ব্যাংকগুলো ধীরে ধীরে ‘টাকা পে’ কার্ড চালু করবে। শুরু থেকেই দেশের সব এটিএম, পয়েন্টস অব সেলস ও অনলাইন প্ল্যাটফরমে এই কার্ড ব্যবহার করা যাবে। শুরুতে এটি ডেবিট কার্ড হিসেবে ব্যবহার করা গেলেও ভবিষ্যতে ‘টাকা পে’ ক্রেডিট কার্ডও আসবে। এই কার্ডের নিরাপত্তায় ব্যবহার করা হচ্ছে ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ। তবে এখন সব ব্যাংকের কার্ডেই বাড়তি নিরাপত্তা সংবলিত নতুন ইএমভি প্রযুক্তি চালু হয়েছে। ধীরে ধীরে টাকা পে কার্ডেও ইএমভি প্রযুক্তি আনা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রাথমিকভাবে ব্যাংকগুলো পাইলট ভিত্তিতে টাকা পে কার্ড চালু করবে।  এতে বৈদেশিক মুদ্রার খরচ কমে আসবে। কারণ, বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সেবা মাসুল বাবদ অনেক অর্থ খরচ করতে হয়। ফ্রান্সের পরামর্শ প্রতিষ্ঠান ‘ফাইম’ কার্ডটি তৈরি করেছে।

সূত্র : বাসস

Share Now
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031