জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. বশীর আহাম্মদ উন্নত দেশগুলোর মতো করোনা মহামারি প্রতিরোধে দেশের হাসপাতালগুলোর প্রস্তুতি পর্যাপ্ত নয় বলে মন্তব্য করেছেন । মানবজমিনের সঙ্গে করোনা প্রসঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, দেশে যদি করোনায় আক্রান্ত রোগী বেড়ে যায় তখন আমাদের পারিবারিক কোয়ারেন্টিন করা উচিত। কারণ আমাদের যে জনসংখ্যা সে অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে হোম কোয়ারেন্টিন ছাড়া বিকল্প পথ নেই। কিন্তু আমরা এ বিষয়ে বিশেষ করে কোয়ারেন্টিনের বিষয়ে সুশিক্ষিত না। হোম কোয়ারেন্টিন প্রক্রিয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, আমরা ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিক হাইজিন (পরিচ্ছন্নতা) সম্পর্কে সচেতন না। সেটা শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবাই। যেখানে সেখানে থুথু না ফেলে টিস্যুতে মুরিয়ে পকেটে বা ডাস্টবিনে ফেলা, হাঁচি-কাশির সময় নাকে টিস্যু বা রুমাল চেপে ধরা, আক্রান্ত ব্যক্তি বাইরে না গিয়ে বাসায় থাকা। এ সকল ব্যক্তিগত হাইজিন মেনে চলতে পারলে পারিবারিক কোয়ারেন্টিন সবচেয়ে ভালো।
ডা. বশীর আহাম্মদ বলেন, আমরা যেহেতু করোনা বিষয়ে ওভাবে সচেতন না কাজেই সরকারিভাবে যেটা করা হচ্ছে সেটাই করা উচিৎ। পাশাপাশি হোম কোয়ারেন্টিন কী এ সম্পর্কে আরো খোলামেলা এবং স্পষ্ট ধারণা দিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। না হলে সেটা ফলপ্রসু হবে না। সম্প্রতি ইতালি থেকে আসা কিছু লোক বিমানবন্দরে নেমে ঝামেলা করে সেখান থেকে চলে গেছে। তাদেরকে যদি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যেত তাহলে তারা নিজেরা যেমন নিরাপদে থাকতো আমরাও থাকতাম। এটা নির্ভর করবে আমাদের কত সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়েছে তার ওপর।
তিনি আরো বলেন, এখন পর্র্যন্ত যারা আক্রান্ত হয়েছেন তারা যতদুর সম্ভব বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েছেন। আমাদের যে হেলথ স্ট্যাকচার বিশেষ করে প্রতিটি গ্রামে একজন করে স্বাস্থ্যকর্মী আছে। গ্রাম পর্যায়ে কেউ আক্রান্ত হলে উপজেলা পর্যায়ে পরিবার প্রতি একজন স্বাস্থ্যকর্মী নির্দিষ্ট করে দিলে হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা সম্ভব। যখন বড় আকারে এটা ছড়িয়ে পরবে তখন বাধ্য হয়ে আমাদের হোম কোয়ারেন্টিন করতে হবে বলে তিনি মনে করেন। এই অবস্থায় স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসক, সংবাদকর্মী এদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি থেকে যায়। এক্ষেত্রে তাদের স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উপকরণের বিষয়টি সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। সরকার ইতিমধ্যে করোনা প্রতিরোধে অনেকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি এই মুহূর্তে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার জন্য সবাইকে সম্পৃক্ত করে আরো বেশি প্রচার প্রচারণা চালানো প্রয়োজন।
করোনা হলে কী করতে হবে, কোথায় যেতে হবে, কোথায় স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া যাবে এ বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসন, শিক্ষক, মসজিদের ইমাম সামাজিক নেতাসহ সরকারি- বেসরকারি সব ডিপার্টমেন্টকে কাজে লাগাতে হবে। ইতিমধ্যে আইইডিসিআর করোনা শনাক্তে জনসাধারণকে সরাসরি প্রতিষ্ঠানটিতে না যেতে অনুরোধ করেছেন। তাদের হটলাইনে যোগাযোগ করতে বলেছেন। এ চিকিৎসক বলেন, যদি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পরে তাহলে নির্দিষ্ট করেকটি হাসপাতাল পর্যাপ্ত নয়। দেশের সকল পর্যায়ে সব হাসপাতালকে প্রস্তুত রাখতে হবে। উন্নত দেশের হাসপাতালগুলোর মত আমাদের দেশে সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আইসিইউ’র ব্যবস্থা নেই। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা যদি বেড়ে যায় সেক্ষেত্রে আইসিইউ’র সংখ্যা পর্যাপ্ত না। এটা আমাদের শিকার করতে হবে। বড় ধরনের জনসমাগম, জমায়েত, সমাবেশ এ জাতীয় সকল কিছু বন্ধ করে দিতে হবে। দেশের মানুষের স্বার্থে বিদেশ থেকে দেশে আশা শতভাগ বন্ধ করতে পারলে এবং আমরা যদি সচেতন থাকি তাহলে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
