প্রিয় করোনা,
আপনাকে অপ্রিয় সম্বোধন করাটাই উচিত ছিল। কিন্তু চিরাচরিত
রীতিটি কে উপেক্ষা করতে পারলাম না। দেখেছি তো, অপ্রিয় কথার উল্লেখ করার
সময়ও ডেয়ার সম্বোধন করা হয়। তাই আমার সম্বোধনেও আপনি প্রিয়। বঙ্গাব্দকে বরণ
করার সময় আপনি দু বাংলায় জাঁকিয়ে বসেছেন। সংহারের ভয়াল বাতাবরণে মানুষ এখন
ঘরবন্দি। তাই বাংলা নতুন বছরের শুরুতে কালীঘাট মন্দিরে লাল খেরোর খাতা
কিংবা গণেশ লক্ষ্মী মূর্তির পুজো নেই। নেই ভিড়।
গ্রামের রাস্তায় নেই গাজন কিংবা চৈত্রের সং। দুই বাংলাতেই
আপনার কালডংকার কারণে হালখাতা হবে না। হাল আরবি শব্দ। খাতা নির্ভেজাল
বাংলা। হাল ক্যাইসে হায় জনাব কা? এর মতোই ব্যাবসার সারা বছরের হাল যাতে
ভালো থাকে তাই এই হালখাতা। ক্রেতা বিক্রেতার মেলবন্ধন। মিষ্টির প্যাকেট,
কোল্ড ড্রিঙ্কস। না, প্রিয় করোনা, আপনার জন্যে, শুধু আপনার জন্যে এবার এই
দৃশ্য দেখতে পাওয়া যাবে না। যেমন দেখতে পাওয়া যাবেনা ঢাকার রমনা বটমূলে
বঙ্গাব্দ বরণের অনুষ্ঠান। মরণ চাঁদ ঘোষ কিংবা আলাউদ্দিন সুইটমিট এর দোকানে
প্রভাত ফেরির পর লম্বা লাইন ও দেখা যাবে না। আপনার ভয়ে তো ভোরের মিছিল ই
বন্ধ। তবু অসীম শক্তিধর করোনা, ইতালি, আমেরিকা, ইংল্যান্ড জয় করার পরও
আপনাকে হারতে হচ্ছে বাঙালির ইচ্ছাশক্তির কাছে। আপনি ভয় দেখাচ্ছেন তাই খেরোর
খাতা পুজো কি আটকে থাকবে? মানিকতলা টোল এর অধ্যক্ষ পন্ডিত নিতাই চক্রবর্তী
জানাচ্ছেন, অনেকেই অনলাইন এ , ভিডিও কল এ খেরোর খাতা পুজো করিয়ে নিচ্ছেন।
প্রিয় করোনা, কি করবেন আপনি? এখানে তো আপনার জারিজুরি খাটবে না ।
যেমন খাটছে না অনলাইন এ উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রে। শাড়ি, শার্ট, এমনকি মোবাইল
ফোনও চলে যাচ্ছে প্রিয়জনের কাছে। পারছেনকি করোনা আপনার কালো হাত দিয়ে
বাঙালির উদ্যমকে রুখে দিতে? পয়লা বোশেখ দু বাংলার বাঙালিই একটু ইটিং আউট
করতে অভ্যস্ত। বাড়ির বাইরে গিয়ে একটু ভালোমন্দ খাওয়া। আপনি করোনা মানুষের
বাইরে যাওয়ার অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। কিন্তু পারলেন কি বাঙালির রসনা নিবৃত্ত
করতে? পারলেন না করোনা, পারলেন না। অনলাইন এ মিলছে ডাবচিংড়ি, ইলিশ পাতুড়ি,
কষা মাংস, ঘি ভাত। অর্ডার দিলেই ঘরে পৌঁছে যাবে ভুরিভোজ। করোনা, আপনি
বাঙালিকে চিনতে ভুল করেছেন। অনলাইনেই বাঙালি নতুন বছরকে বারণ করছে বাঙালি।
আপনি হেরে গেছেন করোনা। বাঙালির ইচ্ছাশক্তির কাছে হেরেছেন। বঙ্গাব্দের
শুরুর দিনটিতে দু বাংলার কয়েক কোটি বাঙালি প্রার্থনা করবে আপনার নাসের।
অসুরকে বোধ করেছিলেন দেবী দূর্গা। আপনি তো নিছক একটি ভাইরাস। আপনাকে
বাঙালিই হারাবে, করোনা।
নমস্কারান্তে দুই বাংলার বাঙালি
